৮৭০ কোটি টাকার পাওনা মেটানোর শর্তে আটকে বাংলালিংকের শেয়ার ট্রান্সফার
কর্পোরেট কাঠামোতে বাংলালিংকের শেয়ার ট্রান্সফার আটকে রয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) নির্ধারিত ৮৭০ কোটি টাকার পাওনা পরিশোধের শর্তে।
এই জটিলতা শুধু শেয়ার ট্রান্সফারেই প্রভাব ফেলছে না, সংকটে ফেলেছে মোবাইল অপারেটরটির কর্পোরেট খাতে ব্যবসায়িক পরিচালনাকেও।
বিটিআরসি জানিয়েছে, টেলিযোগাযোগ খাতে শেয়ার ট্রান্সফারে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটির অনুমোদন বাধ্যতামূলক।
তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলালিংকের শেয়ার ট্রান্সফার আটকে থাকার মূল কারণ হলো অপারেটরটির বকেয়া ৮৭০ কোটি টাকা।
এই পাওনা শোধের আগে শেয়ার ট্রান্সফারের অনুমোদন মিলবে না বলে এ বছরের এপ্রিলেই সিদ্ধান্ত নেয় বিটিআরসি। এই শর্তের পেছনে রয়েছে তাদের আইনি ও প্রশাসনিক কাঠামোও।
টেলিযোগাযোগ বিভাগ নির্দেশ দিয়েছে যে, টেলিকম লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার পরিবর্তনের আগে সরকারি পাওনা যাচাই করতে হবে।
এই নির্দেশনা মেনে বিটিআরসি বাংলালিংকের কাছে পাওনার তথ্য যাচাই করে দেখেছে, অপারেটরটির বড় অঙ্কের বকেয়া রয়েছে।
বাংলালিংকের চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান জানান, শেয়ার ট্রান্সফার আটকে থাকার কারণে তাদের কর্পোরেট কাঠামোতে নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে।
যদিও এই শেয়ার ট্রান্সফারে কোনো আর্থিক লেনদেন হচ্ছে না এবং এর ফলে কোম্পানির পরিচালনা ব্যবস্থায়ও কোনো পরিবর্তন আসছে না, তবুও এই জটিলতা কোম্পানির পরিচালন কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি করছে।
তাইমুর রহমান আরও জানান, তারা কোনো আইনি পদক্ষেপ ছাড়াই আইএসএ অডিটের মাধ্যমে দাবি করা মূল পাওনার পুরোটা পরিশোধ করেছেন এবং বাকি পাওনা পরিশোধের ব্যাপারে বিটিআরসির সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছেন।
এদিকে স্পেকট্রাম চার্জের টাকা তারা কিস্তিতে পরিশোধ করছেন, যা এই প্রক্রিয়ায় ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিটিআরসি বিষয়টি নিয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে দেখেছে যে, শেয়ার ট্রান্সফারে অংশ নেওয়া নতুন শেয়ারহোল্ডাররা বাংলালিংকের মূল প্রতিষ্ঠান ভিওনের সহকারী প্রতিষ্ঠান।
এর ফলে, তাদের শেয়ার ট্রান্সফারের প্রক্রিয়া নিয়ম মেনেই হচ্ছে।
তবে, বিদ্যমান বিধিমালা অনুসারে এবং সরকারের পাওনা আদায়ে শেয়ার ট্রান্সফার আটকে রেখেছে বিটিআরসি।
ট্রান্সফার নিয়ে বাংলালিংক ও বিটিআরসির মধ্যে আলোচনা চলছে।
চলতি অক্টোবরে বিটিআরসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, বাংলালিংক কীভাবে বকেয়া পরিশোধ করবে, তার রোডম্যাপ তৈরি করা হবে।
তবে শেয়ার ট্রান্সফারের বিষয়ে এখনও স্পষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
পাওনা পরিশোধের পর শেয়ার ট্রান্সফারের অনুমতি মেলার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিটিআরসির লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং এর বিভাগের মহাপরিচালক আশীষ কুমার কুন্ডু ভিউজ বাংলাদেশ বলেন, ৩জি, স্পেকট্রাম এবং বিলম্ব ফি বাবদ বাংলালিংকের বকেয়া অর্থের পরিমাণ ৮৭০ কোটি টাকা দাড়িয়েছে। বকেয়া পরিশোধের জন্য বাংলালিংককে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্ত তারা বকেয়া পরিশোধ না করায় বিলম্ব ফির পরিমাণও বাড়ছে।
তিনি বলেন, বাংলালিংক বিটিআরসির সঙ্গে তাদের শেয়ার ট্রান্সফার অনুমোদন প্রক্রিয়া এবং বকেয়ার অর্থ পরিশোধের রোডম্যাপ কি হবে সে বিযয়ে আলোচনা করছে।
আশিষ কুমার কুন্ডু বলেন, কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুসারে বকেয়া পরিশোধ না করে বাংলালিংকের শেয়ার ট্রান্সফারের অনুমোদন দিতে পারবে না।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে