Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

টাকা ছাপিয়ে ব্যাংক রক্ষার পদক্ষেপ মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিবে

Editorial  Desk

সম্পাদকীয় ডেস্ক

রবিবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৪

য়টি ব্যাংকের তারল্য সংকটের লেনদেন স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কারণ এই ব্যাংকগুলোর আমানতকারীরা যাতে চাহিদামতো টাকা তুলতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নতুন করে ছাপিয়ে তাদের ধার দিচ্ছে; কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর গত আগস্টেই বলেছিলেন, অতীতের মতো টাকা ছাপিয়ে কোনো ব্যাংককে অর্থ দেয়া হবে না।

প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে কেন তিন মাসের মধ্যেই টাকা না ছাপানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর এর প্রভাবই বা কী হতে পারে? কিংবা টাকা ছাপিয়ে ব্যাংক রক্ষা করার পদক্ষেপই কতটা ফলপ্রসূ হবে? এ ক্ষেত্রে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘উভয় সংকটে’ আছে। কারণ, এক দিকে যেমন দুর্বল ব্যাংকের গ্রাহকদের অর্থের নিরাপত্তা দিতে হবে, অন্যদিকে মূল্যস্ফীতিকেও সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে।

অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্মুখে ‘ডাঙায় বাঘ ও পানিতে কুমির’; কিন্তু আমরা মনে করি, এটা একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তও বটে। কারণ যাদের অদক্ষতা ও দুর্নীতির কারণে এই ছয়টি ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার পথে, তাদের কেন দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করে হারানো অর্থ উদ্ধার করা হচ্ছে না। তাই আমানতকারীদের প্রচণ্ড চাপের মুখে অর্থনীতির স্বাভাবিক গতিকে অবহেলা করে, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে টাকা ছাপিয়ে মুদ্রাস্ফীতিকে উসকে দেয়া হচ্ছে কি না, তা এখন দেখার বিষয়।

তাছাড়া বিগত সরকারের সময় ব্যাংক খাতের সংকট কাটাতে সবল ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত নিলেও তা কার্যকর করা যায়নি। আবার এই মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি হ্রাসের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে বন্ড ইস্যু করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে; কিন্তু বাজারে আসা টাকা বন্ডের মাধ্যমে সময়মতো ফিরিয়ে নেয়া না হলে মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি থেকেই যাবে।

সম্প্রতি কমবেশি জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে। মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ এখন দিশেহারা। আবার মূল্যস্ফীতির যে সরকারি হিসাব দেয়া হচ্ছে, বাস্তবে তার চেয়েও বেশি মনে করা হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই চলমান মূল্যস্ফীতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে? দ্রব্যমূল্য কি বাড়তেই থাকবে? ঐতিহাসিকভাবে দেখা যায়, মূল্যস্ফীতি যখন ৯ শতাংশের ওপরে ওঠে, তখন সেটি নেমে আসতে কয়েক বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। আর সেদিকেই ধাবিত হচ্ছে বাংলাদেশ, যা খুবই দুঃখজনক।

তাই আমরা বলতে চাই, যারা এই ব্যাংকগুলো দেউলিয়া করার জন্য দায়ী, তাদের সম্পত্তি অধিগ্রহণ করে, তা বাইরে বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে যদি এই ব্যাংকগুলো উদ্ধার করা হতো, তাহলে সাধারণ মানুষের ওপর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির চাপ পড়ত না। সে ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে ব্যাংকগুলো এই সমস্যা থেকে উতরে আসতে পারবে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়। পাশাপাশি খেলাপি ঋণের অর্থ আদায় করে ব্যাংকের তারল্য সংকট সমাধান করতে হবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ