সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ঢালাও হত্যা মামলা
‘ভিত্তিহীন অভিযোগ আমলে নেয়া হবে না’
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ঘটনায় করা হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে আসামি করা হয়েছে বহু সাংবাদিককে। এমন ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত বলে উল্লেখ করেছেন সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরাও। তারা বলেছেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হওয়া অধিকাংশ হত্যা মামলা সরকার বা পুলিশ করেনি। কিছু ব্যক্তির উসকানিতে হয়েছে। তাই সাংবাদিকরা ভিত্তিহীন অভিযোগ থেকে অবশ্যই অব্যাহতি পাবেন।
জানা গেছে এখন পর্যন্ত সারা দেশে ১২৮ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টের গণহত্যার মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ গত ১৬ মার্চ সাইফুল ইসলাম (২২) হত্যা মামলায় আসামি করা হয় ৯ জন পেশাদার সাংবাদিককে।
গত বছরের ১৯ জুলাই পল্টন থানাধীন কাকরাইল এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নিহত হন সাইফুল ইসলাম। নিহতের চাচাতো ভাই রফিকুল ইসলাম ব্যাপারী (৪৫) বাদী হয়ে এ মামলাটি করেন। ঘটনার ৮ মাস পরে মামলাটি করা হয়।
বিলম্বের কারণে মামলার জন্য আদালতে আবেদন করা হলে আদালত তা গ্রহণ করে পল্টন থানায় এফআইআরের জন্য বলেন। পরে থানায় এফআইআর করেন বাদী। অন্যদিকে, গত ১১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ভাসানটেক থানায় করা ফজলু হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে ২৫ পেশাদার সাংবাদিককে। এ ছাড়া ২৩ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় শিক্ষার্থী নাঈম হাওলাদার হত্যা মামলায় ৭ সাংবাদিকে আসামি করা হয়েছে। একাধিক হত্যা মামলা হয়েছে বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে। অথচ ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন মামলা হওয়া অধিকাংশ সাংবাদিক। তাহলে এমন ভিত্তিহীন অভিযোগের কি হবে? এমন প্রশ্নে ভিউজ বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেছেন রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা।
এ বিষয়ে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট গণহত্যার ঘটনার বেশকিছু মামলায় অনেক সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে। এটা আমাদের নজরে আগেই এসেছে। যার বেশিরভাগই স্থানীয়ভাবে সাধারণ মানুষ করেছে। সরকার বা পুলিশ মামলা করেনি। এ ব্যাপারে আমি স্পষ্ট করে বলব, ‘কোনো সাংবাদিককে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও প্রমাণ ছাড়া কোনো ধরনের হয়রানি করা হবে না। এরই মধ্যে গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন হয়রানিমূলক মামলা পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটির কাছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে গত ১ জুলাইয়ের পর বিভিন্ন হয়রানিমূলক মামলার তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে।’ জুলাই গণহত্যার মামলায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হলে মামলার বাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি-না, জানতে চাইলে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘এ বিষয়ে যে কেউ চাইলে আইনের আশ্রয় নিতে পারেন।’
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ভিউজ বাংলাদেশকে বলেছেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নানা অজুহাতে মিথ্যা মামলা হচ্ছে, এটা অস্বীকার করছি না। তবে, বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের মতো এ মামলা রাষ্ট্র কিংবা পুলিশ করছে না। বরং সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মামলা মানেই গ্রেপ্তার নয়। তদন্ত এবং যাচাই-বাছাই শেষে বিচার হবে। ন্যায়বিচারের দ্বার সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।’ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে জুলাই-আাগস্ট গণহত্যা মামলার বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন মামলা আমলে নেওয়া হবে না। তাদের কোনো মামলার বিচার ট্রাইব্যুনালেও হবে না। প্রত্যেকে ন্যায়বিচার পাবেন।’
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীও বলেছেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা হলেই গ্রেপ্তার করতে হবে বিষয়টি এমন নয়। আমরা ইতোমধ্যে বলে দিয়েছি, তদন্ত ছাড়া কাউকেই গ্রেপ্তার করা হবে না।’ এদিকে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ঘটনায় করা মামলায় আসামি গ্রেপ্তারের আগে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে বলে গত ১০ এপ্রিল একটি অফিস আদেশ জারি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ওই অফিস আদেশে বলা হয়েছে, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন-সংক্রান্তে রুজু করা মামলায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে এজাহারভুক্ত আসামির সংখ্যা অধিক।
এসব মামলার এজাহারভুক্ত কিংবা তদন্তে প্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তারের জন্য উপযুক্ত প্রমাণসহ (ভিকটিম, বাদী, প্রত্যক্ষদর্শী, সাক্ষী, ঘটনা সংশ্লিষ্ট ভিডিও, অডিও, স্থির চিত্র ও মোবাইলের কল লিস্ট বা সিডিআর ইত্যাদি) অবশ্যই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে গ্রেপ্তার করতে হবে। এ প্রসঙ্গে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার ফারুক হোসেন বলেন, ‘কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হন এবং প্রকৃত অপরাধীরা যেন ছাড়া না পান সে ব্যাপারে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে