নতুন সেচ পদ্ধতিতে চালে আর্সেনিক কমবে ৪০ শতাংশ, পানিও হবে সাশ্রয়
চালে আর্সেনিকের মাত্রা কমাতে নতুন সেচ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গবেষকরা। ধানিজমি পর্যায়ক্রমে তিনদিন ভেজানো ও চারদিন শুকনো রাখার এই পদ্ধতিকে ৩এফ৪ডি বলা হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, এতে চালে অজৈব আর্সেনিক সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে আসে। সেচে ব্যবহৃত পানিরও সাশ্রয় হয় ৬৫ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত।
জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) কারিগরি সহায়তায় ‘নিরাপদ ও পুষ্টিকর ধান উৎপাদনের জন্য প্রজনন ও পানি ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তির উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় গবেষণাটি পরিচালিত হয় বলে জানিয়েছেন গবেষণাদলের প্রধান বাকৃবির মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম।
বুধবার (৭ মে) তিনি জানান, শরীরে ছোপ ছোপ দাগ, বমি বমি ভাব, লাল টকটকে মিউকাস পর্দা এবং তীব্র ডায়রিয়া- এসবই আর্সেনিক বিষক্রিয়ার উপসর্গ। এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবে ক্যান্সার, কিডনি ও লিভার বিকল হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। পরিবেশ দূষণে দেশের ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিক দূষণের ভয়াবহতা ক্রমেই বাড়ছে। ধানচাষে পানির ব্যবহার অপরিহার্য হওয়ায় খাদ্যচক্রের মাধ্যমে চালে আর্সেনিক জমার প্রবণতাও বেশি। তবে স্থানভেদে পানিতে আর্সেনিক ঘনমাত্রার তারতম্যে চালে এর পরিমাণেও ভিন্নতা দেখা যায়।
তিনি জানান, উদ্ভাবিত ৩এফ৪ডি পদ্ধতিতে ফলন না কমিয়েই নিরাপদ চাল উৎপাদিত হয়। সেচের পানির ব্যবহারও অনেকাংশে কমে যাওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানিদূষণ প্রবণ এলাকায় জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও টেকসই ধান উৎপাদনে এটি বাস্তবভিত্তিক সমাধান।
অধ্যাপক রফিকুল জানান, গবেষণায় টানা তিনটি বোরো মৌসুমে ৩এফ৪ডি, ৩এফ৭ডি, মধ্য-মৌসুমি নিষ্কাশন এবং নিষ্কাশনবিহীন পদ্ধতিতে আর্সেনিকের প্রভাব বিশ্লেষণ করা হয়। পদ্ধতিগুলোর ফলাফল তুলনা করা হয় প্রচলিত অবিরাম জলাবদ্ধতা এবং বিকল্প জলাবদ্ধ ও নিষ্কাশন (এডব্লিওবি) পদ্ধতির সঙ্গেও।
ফলাফলে দেখা গেছে, ৩এফ৪ডি পদ্ধতিতে চারদিনের নিষ্কাশনে মাটির আর্দ্রতা প্রায় পাঁচ শতাংশ কমে যায় এবং রিডক্স পোটেনশিয়াল (বৈদ্যুতিক পরিমাপ) বেড়ে ১৫০–৫০০ মিলিভোল্ট পর্যন্ত পৌঁছে। এতে অক্সিডেটিভ (অক্সিজেনসমৃদ্ধ) পরিবেশ তৈরি হয়, যার ফলে ধান গাছের আর্সেনিক শোষণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে