নীতি সুদহার বৃদ্ধির উদ্যোগ থেকে সরে এলো বাংলাদেশ ব্যাংক
যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে কিছুদিন আগেও বলা হয়েছিল, নীতি সুদহার বাড়ানোর ধারা অব্যাহত থাকবে; কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, মুদ্রানীতি সঠিক পথেই রয়েছে। কাজেই আগামীতে নীতি সুদহার বাড়ানোর কোনো চিন্তা আপাতত নেই। উল্লেখ্য, সিডিউল ব্যাংকগুলো বিভিন্ন সময় স্বল্পকালীন তারল্য সংকট মোকাবিলার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে যে ঋণ গ্রহণ করে, তার ওপর আরোপিত সুদহারকেই নীতি সুদহার বলা হয়। নীতি সুদহার বাড়ানো হলে সিডিউল ব্যাংকগুলোর তহবিল গঠনের ব্যয় আগের তুলনায় বৃদ্ধি পায়। ফলে তারা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণ সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় বেশি হারে সুদারোপ করে। ব্যাংকগুলো উদ্যোক্তা বা সাধারণ ঋণ গ্রহীতাদের যে ঋণ প্রদান করে তাকে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বলা হয়। ব্যাংক ঋণের সুদের বৃদ্ধি পাবে না হ্রাস পাবে, তা অনেকটাই নির্ভর নীতি সুদহারের উত্থান-পতনের ওপর। যদিও ব্যাংক ঋণের সুদহার বৃদ্ধির জন্য এটাই একমাত্র কারণ নয়। সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং অন্যান্য নানা কারণেই ব্যাংক ঋণের সুদের হার হ্রাস-বৃদ্ধি হতে পারে।
কোনো সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি মনে করে, বাজারে অর্থ সরবরাহ বা জোগান কমানো প্রয়োজন তাহলে নীতি সুদহার বাড়িয়ে দেয়া হয়। বাজারে অর্থ সরবরাহ বাড়াতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিপরীত ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। বাজারে অর্থ সরবরাহ কমাবে না বাড়াবে তা ঘোষিত মুদ্রানীতিতে উল্লেখ করা হয়। আর মুদ্রার জোগান বাড়ানো বা কমানোর একটি সহজ কৌশল হচ্ছে নীতি সুদহার হ্রাস-বৃদ্ধি।
অর্থনীতির সাধারণ সূত্র অনুযায়ী, কোনো সময় দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্যস্ফীতি কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে উচ্চ পর্যায়ে চলে গেলে তা নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি সুদহার বৃদ্ধি করা হয়। এতে উদ্যোক্তা এবং সাধারণ ঋণ গ্রহীতাদের ঋণ গ্রহণের আগ্রহ এবং সামর্থ্য উভয়ই কমে যায়। ফলে ভোক্তা বাজারে গিয়ে উচ্চ মূল্যে কোনো পণ্য ক্রয় করতে পারে না। নীতি সুদহার বাড়িয়ে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ কমানোর মাধ্যমে উচ্চ মূল্যস্ফীতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও এর বিপরীত প্রতিক্রিয়া খুব একটা সুখকর হয় না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি নীতি সুদহার বাড়িয়ে দেয় তাহলে ব্যাংক আগের তুলনায় ‘কস্টলি’ বা ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে। সেই অবস্থায় ব্যক্তি খাতের উদ্যোক্তারা আগের মতোই অধিক মাত্রায় ঋণ গ্রহণ করতে পারে না। এতে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বিঘ্নিত হয়। উৎপাদন হ্রাস পেতে পারে। তাই পারত পক্ষে কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার বাড়াতে চায় না।
কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সুদহার বা পলিসি রেট ছিল ৫ শতাংশ। অর্থাৎ কেন্দ্র্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের সময় সিডিউল ব্যাংকগুলোকে ৫ শতাংশ হারে সুদ প্রদান করতে হতো; কিন্তু করোনা উত্তর বিশ্ব অর্থনীতি যখন উত্তরণের পর্যায়ে ছিল সেই সময় শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। ফলে পুরো বিশ্বব্যাপী সাপ্লাই চেইন ভেঙে পড়ে। দেখা দেয় উচ্চ মূল্যস্ফীতি প্রবণতা। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিশালী অর্থনীতিতেও মূল্যস্ফীতির হার ৪০ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করে ৯ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হয়। সেই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব আমেরিকা (ফেড) বার বার নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে। বাংলাদেশসহ অন্তত ৭৭টি দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে নীতি সুদহার বাড়াতে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সুদহার এখন দাঁড়িয়েছে ১০ শতাংশ। অর্থাৎ কোনো সিডিউল ব্যাংক যদি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে তাহলে তাকে ১০ শতাংশ অর্থাৎ আগের তুলনায় দ্বিগুণ সুদ প্রদান করতে হচ্ছে। নীতি সুদহার বৃদ্ধির ফলে সিডিউল ব্যাংকগুলোও তাদের ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়াতে বাধ্য হয়; কিন্তু কয়েক মাস আগ পর্যন্তও বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে রেখেছিল। ফলে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ তুলনামূলক সস্তা হয়ে দাঁড়ায়। নীতি সুদহার বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে রাখাটা ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি বড় ধরনের ভুল সিদ্ধান্ত।
বাংলাদেশ ব্যাংক যে ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে রাখার পরিণতি জানতো না তা নয়। তারা একটি বিশেষ মহলকে তুলনমূলক সস্তা মূল্যে ঋণদানের উদ্দেশ্যেই এমন একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বলে অনেকেই মনে করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের যে মহলটি ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশ নির্ধারণের পেছনে কাজ করেছিল তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানপূর্বক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। তারা যদি অজ্ঞতার কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তাহলে তাদের মতো অযোগ্য কর্মকর্তা বাংলাদেশ ব্যাংকে থাকা উচিত নয়। কারণ মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ব্যাংক ঋণসহ কোনো কিছুই নিয়ন্ত্রিত হবার কথা নয়। একমাত্র অস্বাভাবিক কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেখানে হস্তক্ষেপ করতে পারে।
উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলাকালেও ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে রাখার ফলে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাবার পথ উন্মুক্ত হয়। অভিযোগ রয়েছে, অনেক ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান সেই সময় ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে তা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করেছেন। ফলে ঋণ দানের উদ্দেশ্য সাধিত হয় নি। উল্টো মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা উসকে দেয়া হয়। সেই সময় এক মুদ্রানীতিতে ব্যক্তি খাতে ব্যাংক ঋণেল প্রবৃদ্ধির হার নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৪ দশমিক ১ শতাংশ। অথচ মুদ্রানীতি বাস্তবায়নকালে ব্যক্তি ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ। অর্থাৎ নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ব্যক্তি খাতে দশমিক ৬ শতাংশ বেশি ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। সেই সময় শিল্পে ব্যবহার্য ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানি কমেছিল ৭৬ শতাংশ। কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি কমেছিল ১৪ শতাংশ করে। তার অর্থ হচ্ছে ব্যক্তি খাতে শিল্পে বিনিয়োগ কমে গিয়েছিল। একদিকে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ হ্রাস এবং অন্যদিকে ব্যাংক ঋণের ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির অর্থ কি? এর অর্থ হচ্ছে গৃহীত ব্যাংক ঋণের অর্থ শিল্পে ব্যবহার না করে অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছিল। অনেকেই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা বিদেশে পাচার করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
নীতি সুদহার বাড়ানোর অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালানো কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক সম্পূর্ণ বিপরীত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। পরবর্তীতে যখন ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার নির্ধারণের ব্যবস্থা তুলে দেয়া হয় তখন তাৎক্ষণিকভাবে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাংক ঋণের সুদের হার বর্তমানে ব্যাংক ঋণের সুদের হার ১৩/১৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আগামীতে ব্যাংক ঋণের সুদের হার যদি আরো বৃদ্ধি পায় তাহলে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ প্রবাহ নিশ্চিতভাবেই হ্রাস পাবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে তাতে এই মুহূর্তে ব্যক্তি বিনিয়োগ ব্যাপক হারে বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের চূড়ান্ত তালিকায় উত্তীর্ণ হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, বাংলাদেশ চূড়ান্তভাবে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উত্তীর্ণ হবার পর আরো তিন বছর জিএসপি (জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স) সুবিধা প্রদান করবে। তারপর জিএসপি সিস্টেমের পরিবর্তে জিএসপি+ নামে এক ধরনের নতুন বাণিজ্য সুবিধা চালু করা হবে; কিন্তু জিএসপি+ সুবিধা পাবার জন্য যেসব শর্ত পূরণ করতে হবে বাংলাদেশের পক্ষে তা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। সেই অবস্থায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি আয় ২১ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে মোট রপ্তানি পণ্যের ৪৮ শতাংশ প্রেরণ করে।
কোনো দেশের অর্থনীতিতে কার্যকর এবং টেকসইভাবে উন্নয়ন ঘটাতে হলে স্থানীয় উদ্যোগে বিনিয়োগ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। তুলনামূলক কম খরচে টেকসই এবং গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করা না গেলে ক্রেতা হারানোর আশঙ্কা থাকে। একজন ভোক্তা শুধু দেশপ্রেমের কারণেই স্বদেশের নিম্নমানের পণ্য উচ্চ মূল্যে ক্রয় করতে রাজি হবে না। তারা চাইবে তুলনামূলক স্বল্প মূল্যে টেকসই পণ্য পেতে। বাংলাদেশের বাজার অত্যন্ত শক্তিশালী এবং সম্ভাবনাময়। এখানে রয়েছে ১৭ কোটি মানুষের একটি বড় বাজার। বাংলাদেশে ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতা এবং অর্থ ব্যয় করার সামর্থ্য দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বে এমন অনেক দেশ আছে যেখানে ৩/৪টি দেশ মিলেও ১৭ কোটি মানুষের বাজার নেই। বর্তমান বিশ্ব হচ্ছে অবাধ প্রতিযোগিতার বিশ্ব। সেখানে সস্তা আবেগ দিয়ে কোনো কিছু অর্জন করা সম্ভব নয়। তুলনামূলক কম মূল্যে উন্নত মানের টেকসই পণ্য ভোক্তাদের হাতে তুলে দিতে না পারলে বাজার হারানো আশঙ্কা তীব্রতর হতে বাধ্য।
বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা প্রতিনিয়তই পুঁজি সংকটে ভুগে থাকেন। তারা চাইলেই নিজস্ব সূত্র থেকে সব সময় বিনিয়োগ চাহিদা মেটাতে পারেন না। তাই ব্যাংক ঋণ সহজলভ্য করতে হবে। একই সঙ্গে উদ্যোক্তাগণ যাতে দীর্ঘ মেয়াদি পুঁজির জন্য ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে স্টক মার্কেটকে বেছে নেন তার ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশের মতো একটি বিকাশমান অর্থনীতিতে ব্যক্তি খাতে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বিনিয়োগ হওয়া আবশ্যক। এবং এই বিনিয়োগের বেশির ভাগই হতে হবে উৎপাদনশীল খাতে। একজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদের মতে, বাংলাদেশের মতো অর্থনীতিতে এক শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য অন্তত ৪ থেকে ৫ শতাংশ বিনিয়োগ হওয়া প্রয়োজন ব্যক্তি খাতে; কিন্তু গত ১৫/১৬ বছর ধরে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের হার জিডিপির ২২/২৩ শতাংশে ওঠানামা করছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি রোধের নামে ব্যাংক ঋণের সুদের হার যদি বাড়ানো হয় তাহলে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হতে বাধ্য। বাংলাদেশের মতো অর্থনীতিতে মুদ্রানীতি দিয়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। বাংলাদেশ তার মোট ব্যবহার্য পণ্যের ২৫ শতাংশ আমদানির মাধ্যমে পূরণ করে থাকে। অবশিষ্ট ৭৫ শতাংশ পণ্য স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়। তাহলে প্রতিটি পণ্যের মূল্য বাড়ছে কেনো?
বাংলাদেশের বিপণন ব্যবস্থা মোটেও ভোক্তা বান্ধব নয়। যে পণ্য উৎপাদন পর্যায় থেকে ৬০ টাকা কেজি মূল্যে ক্রয় করা হয় সেই পণ্যটিই শহরে আসার ১২০ বা ১৩০ টাকা হয়ে যায়। পরিবহন কালে ব্যাপক চাঁদাবাজি, মজুতদারি ইত্যাদি নানা কারণেই পণ্য মূল্য বৃদ্ধি পায়। কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। কৃষি উপকরণসহ অন্যান্য খাতে মূল্য বৃদ্ধির কারণে সার্বিকভাবে কৃষি উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। বিপরীত দিকে কৃষক উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে আশানুরূপ মূল্য পাচ্ছে না। ফলে কৃষকের আয় কমে যাচ্ছে। এভাবে পরিস্থিতি আরো অবনতির দিকে গেলে কৃষক ফসল উৎপাদনের আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন। প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক, ২০১২ সালে প্রতি কেজি চালের উৎপাদন খরচ ছিল ১০ টাকা ৫১ পয়সা।
২০১৫ সালে তা বেড়ে ১১ টাকা ৬৭ পয়সায় উন্নীত হয়। ২০১৮ সালে প্রতি কেজি চালের উৎপাদন ব্যয় আরো বৃদ্ধি পেয়ে ১২ টাকা ৮৮ পয়সায় উন্নীত হয়। অর্থাৎ গত কয়েক বছরে প্রতি কেজি চালের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। অন্যতিকে প্রতি কেজি চাল বিক্রি করে ২০১২ সালে কৃষকের হতো ১৬ টাকা ১৭ পয়সা। ২০১৫ সালে এটা ছিল ১৬ টাকা ৬২ পয়সা এবং ২০১৮ সালে ১৭ টাকা ৪৮ পয়সা। অর্থাৎ গড়ে লাভ হয় ১ দশমিক ৩১ শতাংশ। মোট উৎপাদনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লাভজনকতা বাড়ছে না। এর ফলে কৃষক ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে বসেছে। জমির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষক জমিতে সঠিকভাবে বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করতে না পারার কারণে জমির উর্বরা শক্তি ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে।
আগামীতে এই অবস্থা চলতে থাকলে কৃষি খাত বিপাকে পতিত হবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন। গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল থেকে দেখা যাচ্ছে, ১৯৯১ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সময়ে জমির উর্বরা শক্তি ছিল ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। ২০০১ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত জমির উর্বরা শক্তি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে ৩ দশমিক ৩০ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল; কিন্তু পরবর্তী সময়ে তা আবার হ্রাস পেতে শুরু করে। ২০১১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ে জমির উর্বরা শক্তি হ্রাস পেয়ে মাইনাস শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশ ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। জমির উর্বরা শক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষক যাতে তার উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য পেতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
এম এ খালেক: অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিষয়ক লেখক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে