আলঝেইমার রোগীদের প্রতি যত্নশীল হোন
আজ বিশ্ব আলঝেইমার দিবস। বিশ্ব আলঝেইমার রোগ সংস্থা ১৯৯৪ সাল থেকে প্রতি বছর ২১ সেপ্টেম্বর দিবসটি পালন করে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো- ‘ডিমেনশিয়া নিয়ে কাজ করার এখনই সময়।’ দিবসটি উপলক্ষ গণসচেতনা বৃদ্ধি এবং আক্রান্ত ব্যক্তির মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী।
আলঝেইমার বা ভুলে যাওয়া রোগ মানুষের জীবনের এক করুণ পরিণতি। সাধারণত বয়স্করাই এ রোগে আক্রান্ত হন বেশি। একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর তাদের স্মৃতিভ্রষ্ট হতে থাকে। পরিচিতজনদেরও চিনতে পারেন না। অনেক সময় নাম ভুলে যান নিজের ছেলেমেয়েদেরও। একটু আগে কী করছিলেন সেটা ভুলে গিয়ে বিমূঢ় হয়ে থাকেন। এ এক অসহায় দশা। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা জানিয়েছে, মস্তিষ্কের ক্ষয়জনিত কারণে এ রোগ হয়ে থাকে।
আজ শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, বাংলাদেশে আনুমানিক ১২ লাখ মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রোগে আক্রান্তের ৮০ শতাংশই জানেন না, তারা আলঝেইমারে ভুগছেন। ফলে ভুলে যাওয়া রোগে আক্রান্ত রোগীর অধিকাংশই চিকিৎসার বাইরে থেকে যান। অথচ শুরুতে চিকিৎসা নেওয়া হলে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
বিশ্ব আলঝেইমারস অ্যাসোসিয়েশন বলছে, সারা পৃথিবীতে সাড়ে পাঁচ কোটির বেশি মানুষ আলঝেইমার রোগে আক্রান্ত। ২০৫০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা ১৫ কোটিতে পৌঁছবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রতি সেকেন্ডে নতুন করে ৬৮ জন এতে আক্রান্ত হচ্ছে। আলঝেইমার সোসাইটি অব বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে আলঝেইমার রোগীর সংখ্যা ২২ লাখ ছাড়াবে।
আলঝেইমার রোগীরা সামাজিক ও পারিবারিকভাবে নানা অবহেলার শিকার হন। অথচ এ রোগের প্রধান ওষুধই পারিবারিক যত্ন ও সামাজিক সহযোগিতা। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী বলেন, ভুলে যাওয়া রোগ নিয়ন্ত্রণে আক্রান্ত ব্যক্তি, তার পরিবার এবং প্রবীণ জনগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় পরিষেবা প্রদানে জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি। এটি করার এখনই উপযুক্ত সময়।
পাশাপাশি আর্থসামাজিক কাঠামো শক্তিশালী করার মাধ্যমে ডিমেনশিয়া আক্রান্ত প্রবীণদের সার্বিক সহায়তা ও পরিচর্যা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সরকারকে উদ্ভাবনী উপায় খুঁজে বের করতে হবে। নীতি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যারা যুক্ত থাকবেন, তাদের আক্রান্ত প্রবীণ জনগোষ্ঠীর ক্রমবর্ধমান সংখ্যার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য, আর্থসামাজিক অবস্থা এবং উপলব্ধ সুবিধাগুলোর জটিল আন্তঃসম্পর্কগুলো বুঝতে হবে। এ ছাড়া এসব রোগী ব্যবস্থাপনায় জোর দিতে হবে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও এনজিও কর্মীদের প্রশিক্ষণে।
আলঝেইমার সোসাইটি অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও সেক্রেটারি জেনারেল আজিজুল হক প্রবীণদের ভুলে যাওয়া রোগের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, বুদ্ধির চর্চা, সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টির তাগিদ দেন।
আমরা চাই আলঝেইমার রোগীদের প্রতি সমাজ-রাষ্ট্র আরো সচেতন হবে। তাদের সুচিকিৎকার ব্যবস্থা করবে। তাদের যত্নের জন্য দক্ষ ও প্রশিক্ষিত সেবক তৈরি করবে। আলঝেইমার রোগীদের প্রতি যত্নশীর হওয়ার জন্য পরিবার ও সমাজে জনসচেতনা বৃদ্ধি করবে। রাষ্ট্রের সাথে প্রতিটা ব্যক্তিরই একজন আলঝেইমার রোগীর প্রতি যত্নশীল হওয়ার বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে