নববর্ষের আনন্দে মাতোয়ারা বগুড়া
মা-বাবার হাত ধরে হাঁটছে শিশুরা। তাদের অন্য হাতে খেলনা, চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের ছাপ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বিভিন্ন বয়সের ছেলেমেয়েদের ভিড়ও। তাদের কেউ কিনছেন প্রসাধনসামগ্রী, কেউ বা কিনছেন বৈশাখের বাহারি পোশাক। আবার কেউ কেউ কিনছেন মাটির তৈজসপত্র। তাদের আনন্দে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে।
দৃশ্যগুলো বগুড়ার অ্যাডওয়ার্ড পৌর পার্কে আয়োজিত বৈশাখী মেলার। বগুড়া থিয়েটারের আয়োজনে ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখে শহরের অ্যাডওয়ার্ড পৌর পার্ক ও শহীদ টিটু মিলনায়তন চত্বরে সাত দিনব্যাপী এ মেলার উদ্বোধন করা হয়। গত ৪৩ বছর ধরে এ মেলার আয়োজন করে আসছে বগুড়া থিয়েটার।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে মেলায় গিয়ে দেখা গেছে, শিশুদের মেলায় ঘুরতে নিয়ে এসেছেন অভিভাবক। তাদের বিভিন্ন খেলনা ও খাবার কিনে দেয়া হচ্ছে। শিশুদের আনন্দে মুখর মেলা প্রাঙ্গণ। এ ছাড়াও মেলায় রয়েছেন বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণি-পেশার মানুষ।
তিন বছর বয়সী নুশরাত জাহানকে নিয়ে মেলায় এসেছেন তার মা আরজু বেগম। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, “মেয়েকে খেলনা কিনে দিতে মেলায় এসেছি। এখানে এসে ভালোই লাগছে। মেয়েটাও অনেক খুশি হয়েছে। আনন্দে সে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছে। তাকে নিয়ে নাগরদোলাতেও ওঠার ইচ্ছা আছে।”
মেলায় বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরছেন বগুড়া শহরের ফুলতলা এলাকার বাসিন্দা জিহাদ হাসান। তিনি জানান, ‘মেলায় এসে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে ভালোই লাগে। আনন্দ ও হৈ-হুল্লোড়ে সময় কাটে।’
এ মেলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় মাটির হাঁড়ি-পাতিল থেকে শুরু করে মাটির ব্যাংক, শো-পিস, কলস, গহনা, ফুলদানি, ফুলের টব, ঢাকনা, পিঠা তৈরির সরঞ্জামসহ নানা রকম খেলনার দোকান রয়েছে।
মেলা প্রাঙ্গণের এক কোণে মাটির তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে বসেছেন সৈয়দপুর চরপালপাড়ার বাসিন্দা মৃৎশিল্পী বিকাশ চন্দ্র পাল। বিকাশ জানান, বেচাকেনা খুব একটা ভালো না। আশা করা যাচ্ছে মেলার শেষের দুদিন ক্রেতার সংখ্যা বাড়বে। মাটির তৈরি জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ায় অনেকেই এখন এসব নিতে চান না।
তিনি আরও জানান, দিন দিন মাটির তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা কমে যাচ্ছে। এখন বাজার দখল করেছে সিলভার, কাচ, অ্যালুমিনিয়াম, প্লাস্টিক অথবা মেলামাইন। এ কারণে অনেকে মৃৎশিল্পী পেশা বদল করছেন।
বৈশাখের বাহারি পোশাকের দোকানও রয়েছে মেলাতে। সেখানেও খুব একটা বেচাকেনা নেই। বগুড়া শহরের কলোনি এলাকার বাসিন্দা পোশাক ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান জানালেন, টুকটাক বেচাকেনা হচ্ছে। তবে মৃৎশিল্পী বিকাশের মতো তিনিও আশাবাদী মেলার শেষের দিকে বেচাকেনা বাড়বে হবে।
মেলায় এবার ৪৫টির মত দোকান বসেছে। এরমধ্যে রয়েছে শিশুদের খেলনা, প্রসাধনসামগ্রী, মাটির তৈরী বিভিন্ন জিনিসপত্র, পোশাক ও মুখরোচক খাবারেরসহ আরও অনেক দোকান।
তবে মেলার মূল আকর্ষণ গ্রামীণ খেলার আয়োজন। এ মেলার প্রায় সব ধরনের গ্রামীণ খেলারই আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়াও সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বগুড়া থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক তৌফিক হাসান ময়না বলেন, ‘মেলায় লাঠিখেলা, বানরখেলা, সাপখেলা, হাডুডুসহ আরও অনেক গ্রামীণ খেলা প্রথমদিন থেকেই নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন গ্রামীণ সংগীতসহ মঞ্চ নাটকের আয়োজন।’
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে