চতুর্থ অর্থনৈতিক অঞ্চল পাচ্ছে মেঘনা গ্রুপ, ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রত্যাশা

মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ চতুর্থ 'ইকোনোমিক জোন' (অর্থনৈতিক অঞ্চল) পেতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষে বুধবার (২০ ডিসেম্বর) রাজধানীতে মেঘনা গ্রুপের সঙ্গে প্রাক-যোগ্যতা সনদের চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে নতুন করে তিন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রত্যাশা করছেন মেঘনা গ্রুপের কর্মকর্তারা।

কুমিল্লা জেলার মেঘনা উপজেলায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে চালিভাঙ্গায় প্রায় ১৬১ একর এলাকাজুড়ে তিতাস ইকোনমিক জোনের অবস্থান যা পরবর্তিতে ৪০০ একরে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রস্তাবিত ইকোনমিক জোনের উদ্যোক্তা মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। প্রস্তাবিত জোনে বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদনের জন্য শিল্প স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলটিকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ জোন হিসেবে গড়ে তুলতে পরিকল্পনা অনুযায়ী কারখানা ও প্রশাসনিক ভবন, পণ্যাগার, লজিস্টিক এলাকা, পানি ও বর্জ্য শোধনাগার, সড়ক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় স্থাপনা গড়ে তোলা হবে। এ ছাড়াও সবুজায়ন, স্বাস্থ্যসেবা এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করা হবে। পরিবেশের ওপর যাতে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব না পড়ে তার জন্য পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।

উক্ত জোনটিতে তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হবে বলে আশা করছে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। জোনটির সফল বাস্তবায়নের ফলে প্রায় ৬০ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়। প্রাথমিকভাবে উক্ত জোনে বিভিন্ন ভারি শিল্প, পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারি, পেপার ও বোর্ড, ফার্মাসিউটিক্যাল, তথ্য-প্রযুক্তি পণ্য, পিভিসি, গার্মেন্টস, কেমিক্যাল, প্লাস্টিক পণ্য, প্যাকেজিং ও স্টিলসহ বৈচিত্র্যময় পণ্য প্রস্তুত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

ইতোপূর্বে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের আওতায় তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এগুলো হলো- মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন (৮০% জমি বরাদ্দ সম্পন্ন), মেঘনা ইকোনমিক জোন (১০০% জমি বরাদ্দ সম্পন্ন) এবং কুমিল্লা ইকোনমিক জোন (২৫% জমি বরাদ্দ সম্পন্ন)। এসব জোনে সর্বমোট ২৭টি শিল্প-কারখানা নির্মিত হয়েছে এবং প্রায় এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। এ ছাড়াও আরো কিছু শিল্প কারখানা নির্মাণ ও সম্প্রসারণের কাজ চলমান রয়েছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে সাতটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান উৎপাদন শুরু করেছে।

বেজার চূড়ান্ত লাইসেন্স বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহের মধ্যে আটটি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল হতে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়েছে। এসব অঞ্চলে মোট শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৬২টি। এর মধ্যে ৩৮টি শিল্প প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে রয়েছে এবং ২৪টি শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণাধীন আছে। এ সকল অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে প্রায় চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ এবং ৪২ হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। মোটরসাইকেল, সিমেন্ট, ভোজ্য তেল, ব্যাগ, পেপার, টিস্যু, খেলনা, বেভারেজ এবং খাদ্য দ্রব্যসহ বিভিন্ন পণ্য এসব শিল্প প্রতিষ্ঠান হতে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তৃতায় বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন মেঘনা গ্রুপকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ঢাকার নিকটবর্তী স্থানে হওয়ায় তিতাস ইকোনমিক জোন দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাবে বলে বেজা মনে করে। পূর্বের অভিজ্ঞতা ও সাফল্যকে কাজে লাগিয়ে তিতাস ইকোনমিক জোনেও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা জমি বরাদ্দে প্রাধান্য পাবেন বলে তিনি মনে করেন।

তিনি আরও বলেন, এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের ফলে এই ইকোনমিক জোন বিদেশি বিনিয়োগের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। তিনি বিনিয়োগকারীদের অনুরোধ করেন, সরকারের সকল আইন ও নীতি প্রতিপালন করে তারা যেন পরিকল্পিত শিল্প স্থাপন করেন। শুধুমাত্র কর অবকাশ বা ইনসেন্টিভ প্যাকেজের কথা চিন্তা না করে বৃহত্তর স্বার্থে সকল বিনিয়োগের জন্য সুযোগ সৃষ্টির প্রতি তিনি গুরুত্ব দেন।

অনুষ্ঠানে কুমিল্লা ইকোনমিক জোনের কর্ণধার মোস্তফা কামাল বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে এবং রপ্তানিযোগ্য পণ্য প্রস্তুতিতে মেঘনা গ্রুপ সুনামের সাথে কাজ করে এসেছে। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের মাধ্যমে তার প্রতিষ্ঠান দেশ এবং দেশের বাইরের বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য একটি ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে আগ্রহী ।

অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল। এটি বেজা কর্তৃক প্রদত্ত ২২তম প্রিকোয়ালিফিকেশন।

উল্লেখ্য, বেজা বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক এবং সেবা প্রদানকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছে।