Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

‘এ’ গ্রেড পেয়ে এসএসসি পাস করল দৃষ্টিহীন ঐতি

District Correspondent

জেলা প্রতিনিধি

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪

০২৪ এসএসসি পরীক্ষার্থী ঐতি রায় (১৫)। স্কুলের অন্য দশজন শিক্ষার্থীর মত পরীক্ষায় পাস করেছে সে। তার চোখে সবার মত আলো নেই কিন্তু শিক্ষার আলো সে ঠিকই পেয়েছেন। তাইতো সব প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে চোখের আলোকে হার মানিয়ে জীবনকে আলোকিত করার যুদ্ধে নেমে জয়ী হয়েছে।

জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এই শিক্ষার্থী বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার হলদিবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাস করেছেন। মায়ের শ্রুতি লেখকের সহায়তায় পড়াশোনা এবং একই এলাকার অষ্টম শ্রেণির বিজয়া হালদার নামে এক শিক্ষার্থীর সহযোগিতা নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ ৪ দশমিক ৩৯ পেয়ে ‘এ’ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়েছে ঐতি রায়।

মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের হলদিবুনিয়া গ্রামের বালুর মোড় এলাকায় তার বাড়িতে কথা হয় ঐতির বাবা অনুপম রায়ের সঙ্গে। আবেগ আপ্লূত হয়ে জানান, জন্ম থেকে দৃষ্টিহীন তার মেয়ে। ছোটবেলা থেকে তার মেয়ের পড়াশোনার ব্যাপারে খুবই আগ্রহ ছিল। আমরা সেভাবেই তাকে যত্ন করে স্কুলে ভর্তি করে পড়াশোনা করানো হয়।’

ঐতির রায়ের মা শংকরি রায় বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে ঐতির স্কুলে এবং পড়াশোনার আগ্রহ দেখে তাকে স্কুলে নিয়ে যেতাম। ওর জীবনের স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা করবেই। এখন সে এস এসসি পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে। আমরা প্রচণ্ড খুশি, শ্রষ্টার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’

তবে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না। মেয়েকে অনেকদূর পড়াশোনা করাতে চান তারা। এজন্য ঐতির পরিবার সরকারের সহযোগিতা চান।

মোংলা উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নিশাত তামান্না বলেন, ‘দৃষ্টিহীন ঐতি রায়ের এমন প্রতিভা দেখে অবাক হয়েছি। মেধা না থাকলে এমন ফল করা কোনোভাবেই সম্ভব না। এখন ঐতির চোখের চিকিৎসা জরুরি। এছাড়া সে যেন নিয়মিত পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে, সে ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সবাইকে সাথে নিয়ে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

‘এ’ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়ে এসএসসি পাশ করা ঐতি রায় বলেন, ‘জন্ম থেকে আমি দৃষ্টিহীন। কিন্ত পড়ালেখা করার খুব ইচ্ছে ছিল আমার। সে অদম্য ইচ্ছে থেকেই আমার এই সফলতা। পড়াশোনার কাজে আমার মা আমাকে সহযোগিতা না করলে আজ এ পর্যন্ত আসতে পারতাম না। মা পাশে বসে রিডিং পড়তো, আমি সেটি মুখস্থ করতাম। এভাবেই লেখাপড়া চালিয়ে এসেছি।’

পড়াশোনা শেষ করে সরকারি একটা চাকরি এবং আবৃত্তির শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নের কথাও বলেন ঐতি রায়।

ঐতি রায়ের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ হালদার বলেন, ‘ঐতির বাবা অনুপম রায় এবং আমি ছোট বেলার বন্ধু। সে তার দৃষ্টিহীন মেয়েকে নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান। আমি তাকে বলি আমার স্কুলে (হলদিবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়) দেও, বাকিটা আমি বুঝব। এরপর ঐতি রায়কে খুব যত্ন করে ক্লাসে পড়াশোনা করাই। সে ক্লাসে অত্যন্ত মেধাবী ছিল। আজ ঐতি ৪ দশমিক ৩৯ পেয়ে ‘ এ’ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়ে এসএসসি পাশস করে আমার এবং স্কুলের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা তার এই রেজাল্টে দারুন খুশি। দোয়া করি ঐতি তার মেধা বিকাশিত করে অনেক বড় হবে।’

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ