বইমেলা শেষ হলেও বিক্রির হিসাবে কাটছে না ধোঁয়াশা
অমর একুশে বইমেলা-২০২৫ শেষ হয়েছে ক্রেতার কম উপস্থিতি এবং নানা আশঙ্কার মধ্যদিয়ে। তবে, প্রতি বছর মেলার শেষ দিনে বাংলা একাডেমি বইমেলার মোট বিক্রির পরিমাণ জানালেও এবারের বইমেলায় বিক্রির হিসাব এখন পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি যা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানা প্রশ্ন ও ধোঁয়াশা।
মেলায় মোট বিক্রির তথ্য না জানানোর কারণ জানতে চাইলে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. সরকার আমিন কোনো মন্তব্য করেননি। কবে নাগাদ পাওয়া যাবে মোট বিক্রির হিসাব- সে নিয়েও তথ্য জানাতে পারেননি একাডেমির কোনো কর্মকর্তা। এমনকি বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতিও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কিছু জানায়নি।
প্রকাশকদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, এবারের বইমেলায় বিক্রির পরিমাণ এতটাই কম ছিল যে অনেক প্রকাশক তা জানাতে বিব্রত হয়েছেন। প্রতি বছর মেলার শেষ দিকে বই বিক্রির পরিমাণ জরিপ করতে প্রকাশকদের কাছে লিখিতভাবে জানতে চাওয়া হয়, এবার বাংলা একাডেমি সেটি জানতে চাইলেও অনেক প্রকাশক বিক্রির তথ্য দিতে বিব্রত ছিলেন। অনেক প্রকাশক এবারের পরিস্থিতিকে বইমেলার ইতিহাসে ‘নজিরবিহীন ঘটনা’ হিসেবেও উল্লেখ করেছেন।
প্রকাশকের বক্তব্য
প্রকাশকদের মতে, এবারের বইমেলা একেবারেই হতাশাজনক ছিল। প্রায় ৯৫ শতাংশ প্রকাশকের অবস্থা খারাপ বলে জানা গেছে। হাওলাদার প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মাকসুদ হাওলাদার জানান, স্টল নির্মাণ, ভাড়া, স্টাফদের খরচ সব মিলিয়ে যে বেচাকেনা হয়েছে, তাতে তার মন ভরেনি। তিনি বলেন, ‘গত বছর ১৭ লাখ টাকা বিক্রি করেছি, এবারে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ৫ লাখ টাকার বই বিক্রি হলো।’
প্রথমা প্রকাশনী থেকে জানানো হয়, তাদের প্রকাশনী থেকে রাজনৈতিক বইগুলো বেশি প্রকাশিত হয়; কিন্তু এবারে রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং নানা কারণে পাঠক কমেছে, তাই বিক্রিও কমেছে। ‘অন্যধারা’, ‘আগামী প্রকাশনী’, ‘মাওলা ব্রাদার্স’, ‘কথাপ্রকাশ’সহ আরও বেশ কয়েকটি প্রকাশনা সংস্থাও বিক্রিতে হতাশা প্রকাশ করেছে।
লেখকরা যা বলছেন
লেখক ও গবেষক তপন বাগচী বলেন, ‘১৯৮৫ সাল থেকে প্রায় ৪০ বছর কোনোদিন মেলা মিস করিনি। তবে এবারের বইমেলায় বিক্রি সত্যিকার অর্থে কম।’
কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, ‘পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে অনেকে আশঙ্কার কারণে পর্যাপ্ত বই বের করেননি। আরেকটি কারণ হলো, মানসিক ভীতি, ছোটখাটো দুর্ঘটনা এবং দুর্ঘটনার আশঙ্কায় অনেকেই মেলায় আসেননি।’
কথাসাহিত্যিক মোহিত কামাল বলেন, ‘প্রতি বছর পরিবারভিত্তিক মানুষ মেলায় আসে, বই দেখে। এবার এই স্রোত কিছুটা কম ছিল।’
বইমেলার বিক্রি কম হওয়ার কারণ
বিক্রি কম হওয়ার বিষয়ে প্রকাশকরা মনে করেন, দেশের অস্থিরতার কারণে পাঠক কম এসেছে। কথাপ্রকাশনীর সাপ্লাই অ্যান্ড সেলস অফিসার জাফিরুল ইসলাম বলেন, ‘গতবারের তুলনায় পাঠক অনেক কম এসেছে। এটা দেশের অস্থিরতার কারণে হতে পারে।’
এদিকে, বাবুই প্রকাশনীর প্রকাশক কাদের বাবু বলেন, ‘আমার ধারণা- এবারের বইমেলায় বিক্রির পরিমাণ এত কম ছিল যে, প্রকাশকরা বলতে বিব্রতবোধ করছেন। আমার প্রকাশনী থেকেও এবারে গত বছরের তুলনায় অর্ধেকেরও কম বিক্রি।’
চৈতন্য প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী রাজীব চৌধুরী জানান, এবারের বইমেলায় চৈতন্যর অংশগ্রহণে সবচেয়ে কম বই বিক্রি হয়েছে। অক্ষর প্রকাশনীর কর্ণধার আমিন খান বলেন, ‘গত বছর আমি ২০ লাখ টাকার ওপরে বিক্রি করেছি। এবার ১৩ লাখ। আসলে এবারের মেলাটা বইমেলায় না, এটা গ্রামগঞ্জের বারোয়ারী মেলা মনে হয়েছে।’
এদিকে এবার বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৭০৮টি প্রতিষ্ঠানকে ১০৮৪ ইউনিটের স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়। তবে, ২০২৫ সালের বইমেলায় আসা নতুন বইয়ের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ২৯৯টি যা ২০২৪ সালের ৩ হাজার ৭৫১টি বইয়ের তুলনায় প্রায় সাড়ে চারশ কম।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে