সড়ক দুর্ঘটনা
স্বামীকে হারিয়ে চার সন্তান নিয়ে দিশেহারা রুবি
টানাপড়েনের সংসার চালিয়েও বান্দরবান শহরের কাশেমপাড়ায় পাহাড়ের ঢালুতে স্বামীর পৈতৃক ভিটায় তৈরি করেছিলেন আধাপাকা ছোট্ট ঘর। সেই ঘরে স্বামী মঞ্জুর আলম এবং তিন মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে সুখেই কাটছিল রুবি আক্তারের; কিন্তু আকস্মিক সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামীর প্রাণহানিতে মুহূর্তেই সুখের সংসারে নেমে আসে চরম দুঃখ-দুর্দশা।
২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর রুমা উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান শৈলশোভা এলাকার পরিবহন শ্রমিক মঞ্জুর। সংসারের একমাত্র উপার্জনকারীর অবর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন এখন রুবির পরিবারের। শ্বশুরবাড়ি ও বাবার বাড়ির আত্মীয়-স্বজনের সহযোগিতায় কোনোমতে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছেন সন্তানদের নিয়ে।
বড় মেয়ে নাসরিন আক্তারকে আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় বিয়ে দেয়া হয়েছে। অভাবের কারণে একমাত্র ছেলে সাজ্জাদ হোসেনকে এতিমখানায় দিয়েছেন রুবি। সেখানে মাদ্রাসায় হেফজ পড়ছে বাবাহীন ছেলেটি। মেজো মেয়ে জেমি আক্তার এসএসসি পাস করলেও অর্থকষ্টে কলেজে ভর্তি করাতে পারেননি। ছোট মেয়ে সিদরাতুল মুনতাহা নবম শ্রেণিতে পড়ছে বান্দরবান সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে।
সরেজমিন গিয়ে কাশেমপাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, শ্বশুর বাড়িতে আধাপাকা একটিমাত্র ঘরেই সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছেন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মঞ্জুরের স্ত্রী রুবি আক্তার। ঘরটি ছাড়া স্বামীর রেখে যাওয়া আর কোনো সম্পদ টাকা-পয়সা নেই। স্বামী মারা যাবার পর পরিবহন সমিতি থেকে ৪০ হাজার টাকা দিয়েছিল। এরপর আর কোনো খোঁজ-খবর সমিতি কিংবা গাড়ি কোম্পানি নেয়নি বলেও জানান রুবি।
কান্নায় ভেঙে পড়ে রুবি বলেন, ‘স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই চারদিকে শুধুই অন্ধকার দেখছি। টানাপোড়েনের সংসারে সাত বছর ধরেই চলছে চরম অভাব-অনটন। আত্মীয়-স্বজনদের সহায়তায় একবেলা খেতে পেলে আরেক বেলা না খেয়ে কাটাতে হচ্ছে আমাদের।’
বাবার কথা মনে করে পানিতে চোখ ভাসায় ছোট মেয়ে সিদরাতুল মুনতাহাও। বলে, ‘সাত বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছি। বাবার জন্য মন খারাপ হয় খুবই। ছোটবেলায় স্বপ্ন ছিল, লেখাপড়া শেষ হলে সেনাবাহিনী বা পুলিশের চাকরিতে গিয়ে দেশের জন্য কাজ করব। কিন্তু এখন ভাবছি, এসএসসি পাস করেই সেনাবাহিনী বা পুলিশে ঢোকার চেষ্টা করব। চাকরি করে মায়ের পাশে, পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চাই। জানি না স্বপ্নপূরণ হবে কি-না। তবে যখন সুযোগ হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফায়ার সার্ভিসে ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করছি।’
শৈলশোভা পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুছ বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে শ্রমিকদের সতর্কতামূলক পরামর্শ দেয়া হয়। দুর্ঘটনায় নিহতদের সংগঠন থেকে এককালীন অনুদান দেয়া হয়। মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবার এবং আহতদের খোঁজ-খবর রাখার পরামর্শও দেন তিনি।
বান্দরবানের পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ কাওছার বলেন, দুর্ঘটনা রোধে সড়কে শৃঙ্খলা ও চালক-পথচারীদের ট্রাফিক আইন মানতে হবে। বিধি-নিষেধ মানলে কমবে দুর্ঘটনা, বাঁচবে প্রাণ। সড়কে শৃঙ্খলা এবং দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সচেতনতামূলক নানা কার্যক্রম চালাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশও।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে