Views Bangladesh Logo

দুর্বৃত্তদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনুন

দিন যত যাচ্ছে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ততই অস্থির হয়ে উঠছে। সিনেমার ঘটনার মতো ঘটনা ঘটছে সারা দেশে। কবে এসব থামবে কেউ জানে না। গত শুক্রবার রাতে এবং শনিবার দিনভর গাজীপুরে যেসব ঘটনা ঘটল তা ছিল একেবারেই অনভিপ্রেত। সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলার ঘটনার পর থেকে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে গাজীপুর। সেখানে হামলায় আহত সাতজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার দিনভর জেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। হামলায় জড়িতদের আওয়ামী লীগের লোক দাবি করে তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের আলটিমেটাম দিয়েছে তারা। এদিকে সন্ধ্যায় দুর্বৃত্তের ছোড়া গুলিতে সেখানে বৈষম্যবিরোধীদের একজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

গতকাল রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, গাজীপুরের ধীরাশ্রম এলাকায় শুক্রবার রাতে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীরা জানান, ওই বাড়িতে হামলা-লুটপাটের খবর পেয়ে তারা প্রতিহত করতে যান। পরে তাদের ওপর হামলা হয়। হামলায় ১৫-১৬ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

প্রশ্ন হচ্ছে, বাড়িতে হামলা ঠেকাতে শিক্ষার্থীরা যাবে কেন? যাবে তো পুলিশ। পুলিশ অবশ্য গিয়েছে। তাদের ডাকার দুই ঘণ্টা পর। বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যান গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার নাজমুল করিম খান। এ সময় তিনি ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন। পরে হাসনাত ও সারজিসের উপস্থিতিতে ছাত্র-জনতার উদ্দেশে নাজমুল করিম খান বলেন, ‘শুক্রবার রাতের ঘটনায় পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে আমি ক্ষমা চাচ্ছি। আমি ব্যর্থতা স্বীকার করে নিচ্ছি। হামলাকারী কাউকে ছাড়া হবে না। যেসব পুলিশ রেসপন্স করতে দেরি করেছে তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’

ঘটনার পর রাতেই প্রতিবাদ জানিয়ে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। শনিবারও বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ডাক দেয়া হয়। সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে রাজবাড়ী সড়কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা যান। তাদের অবস্থানের কারণে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুরে সংগঠনটির আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম কর্মসূচিতে যোগ দেন।

সারজিস বলেন, খুনি হাসিনা, খুনি জাহাঙ্গীরের দোসররা গাজীপুরে যদি আবার উৎপাত করতে চায়, ছাত্র-জনতা তাদের আর ছাড় দেবে না। শুক্রবার আমাদের অনেক সহযোদ্ধাকে তারা রক্তাক্ত করেছে। আমাদের সহযোদ্ধাদের তারা জীবননাশের হুমকি দিয়েছে। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলতে চাই, যে ছাত্র-জনতা জীবন দিয়ে আপনাদের ওই সরকারে বসিয়েছে, তাদের জীবনের নিরাপত্তা কে দেবে? যে পুলিশ প্রশাসন নতুন করে ওই চেয়ারগুলোতে বসিয়েছে, সেই পুলিশ প্রশাসন কেন বাংলা সিনেমার মতো ঘটনা ঘটার পর রাজপথে আসে? তিনি আরও বলেন, খুনি হাসিনার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা এখনো গাজীপুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

এই সন্ত্রাসীরা এখনো সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার যোদ্ধাদের হুমকি দিচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ যদি আজকে (শনিবার) রাতের মধ্যে শুক্রবারের হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে না পারে তাহলে আমাদের তাদের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যেতে হবে।


ঘটনা বিশ্লেষণ করে মনে হচ্ছে, দেশে আইনশৃঙ্খলা এখনো ঠিক মতো কাজ করছে না। সবই চলছে হুমকি-ধমকি দিয়ে। পুলিশ যদি তাদের দায়িত্বে অবহেলা করে এবং তাদের যদি এরকম হুমকি দিয়ে কাজ করাতে হয় তাহলে তো বিপদ। আর ফ্যাসিস্টদের দোসররাই-বা এখনো কীভাবে তাদের রাজত্ব বজায় রাখে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া জরুরি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেই আইন হাতে তুলে নিতে হবে। তাদের ব্যর্থতায় যদি সাধারণ মানুষ আইন হাতে তুলে নেয় সেটা রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর হবে না। পুলিশকে অবশ্যই দুর্বৃত্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। তাদের আগের ব্যর্থতা এভাবেই ঘোচানো সম্ভব। দুর্বৃত্তরা যদি দ্রুত বিচারের আওতায় না আসে তাহলে এ ধরনের অপরাধ আরও বাড়তে থাকবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ