এসএসসি পরীক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা
কিশোর গ্যাংয়ের বড় ভাইদের আইনের মুখোমুখি করুন
দেশের শহর ও উপশহরে কিশোর গ্যাং প্রথা দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠছে। তারা মাদকের নেশা থেকে শুরু করে চুরি, ছিনতাই, ইভ টিজিং, ধর্ষণ, হত্যা, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। গত শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে নারী শিক্ষার্থীদের উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করার জেরে এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে সেখানকার একটি কিশোর গ্যাং। নিহত কিশোরের নাম মো. নীরব হোসেন। যদিও নীরব হোসেনের হত্যাকারী ৯ কিশোরকে গতকাল শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) আটক করেছে পুলিশ। এত দ্রুত কিশোর হত্যাকারীদের আটকের জন্য আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই। পাশাপাশি বলতে চাই, ওই কিশোর গ্যাংটি যাদের ছত্রছায়ায় বড় হয়ে উঠেছে, সেই স্থানীয় বড় ভাই কিংবা লিডারকে আটক করা হবে কী! কারণ গবেষণা বলছে, দেশের প্রতিটি কিশোর গ্যাংয়ের একাধিক বড় ভাই থাকেন। তারা অন্তরালে তাদের পরিচালনা করেন।
এ গবেষণার সত্যতাও পাওয়া যাবে শ্রীনগরের ভাগ্যকূল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কাজী মনোয়ার হোসেনের বর্ণনায়। তিনি বলেন, ‘ওরা খুবই ভয়ংকর। কয়েক মাস আগে ভাঘরার চরে একটি হত্যাকাণ্ড হয়েছিল। সেই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও ওরা জড়িত ছিল।’ প্রশ্ন হচ্ছে, এই কিশোর গ্যাংটি বারবার কীভাবে এ ধরনের অপরাধমূলক কাজ করে পার পেয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু দেশের শহর ও উপশহরে এসব কিশোর গ্যাং কীভাবে গড়ে ওঠে? এ বিষয়ে সমাজবিজ্ঞানীরা বলেন, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নতা, জীবনযাত্রা ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে পড়া, অ্যাডভেঞ্চার বা ক্ষমতা দেখানোর লোভ, মাদক, বন্ধুদের পাল্লায় পড়াসহ নানা কারণে কিশোর গ্যাং সমাজে তৈরি হচ্ছে। তা ছাড়া শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার সুযোগ কমে যাওয়া, বিভিন্ন ধরনের বিনোদনের সুযোগ কমে যাওয়া এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ না নেয়ার ফলে এ ধরনের অপরাধপ্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে।
বর্তমান সময়ের ব্যস্ততার কারণে অনেক মা-বাবা সন্তানদের ঠিকমতো সময় দিতে পারেন না। এমনকি সন্তান কী করছে, কোথায় যাচ্ছে, কাদের সঙ্গে মিশছে, তাদের চাহিদা কী–এসব সম্পর্কেও তারা কোনো খোঁজ রাখেন না। ফলে এই সন্তানরা বন্ধুদের কাছে আশ্রয় খোঁজে, তাদের সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে পছন্দ করে। সেখানে তারা একই ধরনের মানসিকতা খুঁজে পায়। এভাবেই তাদের ছোট ছোট দল তৈরি হয়। পরে মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়ে বা রাজনৈতিক বড় ভাইয়ের স্বার্থে এই কিশোররা জড়িত হতে থাকে।
তা ছাড়া ক্লাসের একজন বন্ধু কোনো গ্যাংয়ের সদস্য হলে আরেকজনকে সেখানে সদস্য হতে প্রভাবিত করে। এ ধরনের ছেলেদের অন্যরা একটু ভয় পায়। ফলে সেটি তাদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষমতার মনোভাব তৈরি হয়। পরে মাদক বা নিজেদের খরচ জোগাড় করতে তারা নানা অপরাধ করা শুরু করে। এরপর আর বেরিয়ে আসতে পারে না। আবার অনেক সময় দেখা গেছে, কিশোররা নিজেদের দল ভারি করতে প্রথম দিকে বিনামূল্যে মাদক সরবরাহ করে সহপাঠী বা বন্ধুদের আসক্ত করে তোলে। পরে তাদের গ্যাংয়ের সদস্য করে নেয়।
কিশোর অপরাধ দমনের জন্য পরিবারের দায়ও কম নয়। তাই পরিবার থেকেই তাদের সুশিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এই যুগের কিশোরদের হাতের মুঠোয় থাকে ইন্টারনেট। তাই তারা কী ধরনের সাইটে যায়, সেটি ডিভাইস হিস্ট্রি দেখে সহজে অনুমান করা যায়। তা ছাড়া কিশোরের যেসব বন্ধু বাসায় আসে বা যেসব ফ্যামিলির সঙ্গে ওঠাবসা করে, তা দেখভাল করতে হবে পরিবারের পক্ষ থেকে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কিশোর অপরাধ দমনে সবচেয়ে বড় দায়িত্বটি পালন করতে হবে। সেই সঙ্গে খুঁজে বের করতে হবে, এসব কিশোর গ্যাং কাদের ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠে, তাদের সাবার আগে আইনের মুখোমুখি করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে