ক্যাশ সার্ভার স্থাপনে নতুন নীতিমালার উদ্যোগ বিটিআরসির
নতুন ক্যাশ সার্ভার স্থাপন নীতিমালার পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), যা দেশের ইন্টারনেট সেবার মান উন্নত করবে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের দ্রুত সেবা নিশ্চিতের পাশাপাশি খরচ কমাবে ব্যান্ডউইডথেরও। ফলে দেশের ডিজিটাল অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে বলেও মনে করছে সংস্থাটি।
ক্যাশ সার্ভার এমন এক ধরনের প্রযুক্তি, যা ভিডিও, ছবি, অ্যাপ্লিকেশনসহ ইন্টারনেটে ব্যবহৃত কনটেন্টগুলো স্থানীয়ভাবে সংরক্ষণ করে রাখে। ফলে ব্যবহৃত কনটেন্টে দ্রুত অ্যাক্সেস করতে পারেন ব্যবহারকারীরা।
বিটিআরসি বলছে, নতুন নীতিমালা কার্যকর হলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেটের দ্রুত গতির সুবিধা পৌঁছে যাবে। ইন্টারনেট অবকাঠামোর উন্নয়নের পাশাপাশি গ্রাহকদের ব্যান্ডউইডথ খরচ হ্রাস পাওয়ায় ডিজিটাল সেবায় আরও অনেক উন্নতি আসবে।
বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী ভিউজ বাংলাদেশকে জানিয়েছেন, দেশে ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে ইন্টারনেট ব্যবহারের হারও। এই ইন্টারনেট অবকাঠামোকে আরও উন্নত ও আধুনিক করতে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে।
ক্যাশ সার্ভারের কার্যকারিতা ও প্রয়োজনীয়তা
সাধারণত ক্যাশ সার্ভার বড় বড় কনটেন্ট প্ল্যাটফর্মে ব্যবহৃত হয়। ফেসবুক, গুগল এবং টিকটক এর মতো প্ল্যাটফর্মে ভিডিও এবং অন্য কনটেন্ট স্ট্রিমিংয়ের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে ক্যাশ সার্ভারের প্রয়োজনীয়তাও।
বাংলাদেশে বর্তমানে কিছু বড় ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) এবং বড় ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (আইএসপি) ক্যাশ সার্ভার স্থাপনের সুবিধা ভোগ করে থাকে। তবে ছোট এবং গ্রামীণ অপারেটরগুলো ক্যাশ সার্ভার সুবিধা বঞ্চিত থাকায় অপেক্ষাকৃত ধীরগতির ইন্টারনেট পরিষেবা পাচ্ছিলেন তাদের ব্যবহারকারীরা।
বিটিআরসি বলছে, নতুন নীতিমালা কার্যকর হলে ছোট অপারেটরগুলোও তাদের নেটওয়ার্কে ক্যাশ সার্ভার স্থাপনের অনুমতি পাবেন, যা ব্যবহারকারীদের দ্রুত সেবার নিশ্চয়তা দেবে।
নতুন নীতিমালার প্রত্যাশিত সুবিধা
বিটিআরসি জানায়, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে নতুন নীতিমালা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যার সফল বাস্তবায়নে দেশজুড়ে বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রথমত, ক্যাশ সার্ভার সুবিধা থাকলে ভিডিও স্ট্রিমিং এবং অন্য ভারি কনটেন্ট দ্রুত লোড হবে, যা ইন্টারনেট সেবার মান উন্নত করবে।
দ্বিতীয়ত, কম খরচে এবং কম সময়ে জনপ্রিয় কনটেন্ট অ্যাক্সেস করতে পারবেন গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা।
তৃতীয়ত, ব্যান্ডউইডথ খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে। দেশের বড় বড় আইআইজি এবং আইএসপিগুলো আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথের মাধ্যমে কনটেন্ট অ্যাক্সেস করে, যা ব্যয়বহুল। ক্যাশ সার্ভার স্থানীয়ভাবে কনটেন্ট সংরক্ষণে সক্ষম হওয়ায় এই ব্যয় কমে আসবে এবং কম খরচে সেবা দিতে সক্ষম হবেন ছোট অপারেটররাও।
চতুর্থত, প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে সেবা দিতেও পারবেন ছোট অপারেটরগুলো, যা দেশের ইন্টারনেট অবকাঠামোতে ভারসাম্য রক্ষা করবে।
গ্রাহকদের ওপর প্রভাব
ইন্টারনেট সেবার মানের উন্নতির পাশাপাশি নতুন নীতিমালা ব্যবহারকারীদের দেবে বেশ কিছু বাড়তি সুবিধাও। যেমন, গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ক্যাশ সার্ভার সহজলভ্য হওয়ায় ভিডিওকল, লাইভ স্ট্রিমিং এবং অনলাইন শিক্ষার মতো উন্নত সুবিধা ভোগ করতে পারবেন তারা।
ইন্টারনেট থেকে সহজেই তথ্য সংগ্রহ এবং অনলাইন শিক্ষায় যুক্ত হতে পারবে ছাত্র-ছাত্রীরা। ফলে শিক্ষাক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এটি।
ছোট অপারেটরদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি
এতোদিন ক্যাশ সার্ভারের সুবিধা না পেয়ে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে ছিলেন ছোট অপারেটরগুলো। নতুন নীতিমালায় নিজেরাই ক্যাশ সার্ভার স্থাপন করে গ্রাহকদের সহজেই দ্রুত ইন্টারনেট সেবা দিতে পারবেন তারা। বড় আইএসপিগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতেও সক্ষম হবেন ।
নতুন নীতিমালা কার্যকর ও ক্যাশ সার্ভার স্থাপন সহজলভ্য করতে অপারেটরগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বিটিআরসি। পরিকল্পনায় রয়েছে, ক্যাশ সার্ভার স্থাপনে ইনফ্রাস্ট্রাকচারের উন্নয়ন এবং আইআইজি, আইএসপি ও ছোট অপারেটরগুলোর মধ্যে সমন্বয় বজায় রাখা।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি)-এর সভাপতি ইমদাদুল হক ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘ক্যাশ সার্ভার স্থাপনে ছোট আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুমতির বিষয়ে বিটিআরসির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এতে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে কমিশন। আশা করছি, দ্রুতই নতুন নির্দেশনা দেবে বিটিআরসি’।
তিনি বলেন, ‘বিটিআরসির নতুন নির্দেশনা কার্যকর করা আমাদের জন্যও বড় স্বস্তির। দীর্ঘদিন ধরে ক্যাশ সার্ভার ব্যবহার করতে না পেরে বেশ অসুবিধায় ছিল ছোট আইএসপিগুলো। ফলে ব্যান্ডউইডথ খরচ বেড়ে প্রান্তিক গ্রাহকদের উন্নতমানের ইন্টারনেট সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কঠিনই হয়ে পড়েছিল’।
‘তবে এখন আমরা আবারো নিজেদের নেটওয়ার্কে ক্যাশ সার্ভার স্থাপনের সুযোগ পাবো, যা ব্যান্ডউইডথ খরচ কমিয়ে দেবে এবং দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা উপভোগ করতে পারবেন গ্রাহকরা’।
ইমদাদুল হক বলেন, ‘ক্যাশ সার্ভারের এই সুবিধা ছোট আইএসপিগুলোকে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার সুযোগ করে দেবে। এর ফলে প্রান্তিক এলাকায় ডিজিটাল সংযোগ আরও মজবুত হবে।
‘আমরা আশা করছি যে, এই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নে গ্রাহক সেবার মান উন্নত এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ কমবে’।
বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী বলেন, ‘আমরা চাই, দেশের প্রত্যন্ত এলাকাসহ সব ব্যবহারকারী যেন কম খরচে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা পেতে পারেন। ক্যাশ সার্ভার স্থাপন সহজতর হলে স্থানীয়ভাবে কনটেন্ট অ্যাক্সেস করতে পারবেন তারা, যা ব্যান্ডউইডথ খরচ কমিয়ে সেবার মান উন্নত করবে’।
‘ছোট অপারেটগুলো নতুন নীতিমালার ফলে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা পাবে, যা ইন্টারনেট সেবার মান উন্নয়নে সহায়তা করবে’- বলেন তিনি।
এমদাদ উল বারী বলেন, ‘দেশের সব আইআইজি, আইএসপি এবং অন্য অপারেটরগুলোর মধ্যে সমন্বয় বজায় রেখে এই নীতিমালার বাস্তবায়ন করতে চাই, যেন সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি হয়’।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে