সংকটে ১৫ হাজার কোটি টাকার বাজার
অবৈধ মোবাইলসেট বন্ধে কঠোর হচ্ছে বিটিআরসি
বাংলাদেশে মোবাইল হ্যান্ডসেটের বাজার এখন ১৫ হাজার কোটি টাকার। কিন্তু অবৈধ হ্যান্ডসেটের আধিপত্যে সংকটের মুখে বিশাল এই বাজার।
অবৈধ মোবাইল ফোনের এই দখল মোট বাজারের প্রায় ৪০ শতাংশ, যা বৈধ শিল্পের জন্যই বড় চ্যালেঞ্জের। এর ফলে দেশের বাজারে বৈধ হ্যান্ডসেটের চাহিদা কমে যাওয়ায় মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির শিকার বৈধ মোবাইল উৎপাদক ও ব্যবসায়ীরা। বছরে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকারও।
২০২১ সালে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) সিস্টেমে অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেটগুলোকে নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্নের ঘোষণা দিয়েও তা কার্যকর করতে পারেনি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। চলতি বছরের জানুয়ারিতে আবারও সে উদ্যোগ বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছে সংস্থাটি।
বিটিআরসি সূত্রের দাবি, বিগত সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্তহীনতায় এনইআইআর সিস্টেমটি কার্যকরে ব্যর্থ হয় তারা।
মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রিজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এমআইওবি) সভাপতি জাকারিয়া শাহিদ ভিউজ বাংলাদেশকে জানান, তিন থেকে চার লাখ মানুষ এই শিল্পে সরাসরি যুক্ত। ২০১৮ সালের আগে পুরোপুরি বিদেশ থেকে মোবাইল আমদানি করা হতো। আর দেশের ৯৯ শতাংশ মোবাইল ফোনই এখন স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়।
সরকারি প্রণোদনায় দেশের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়লেও অবৈধ আমদানি ও নকল হ্যান্ডসেটের প্রভাবে এই শিল্প সংকটের মুখে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে সমস্যাগুলোর কথা জানিয়েছে এমআইওবি। চিঠি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানকেও।
এমআইওবি’র সহ সভাপতি রেজওয়ানুল হক ভিউজ বাংলাদেশকে জানান, দেশে প্রায় ১৯ লাখ ৫৫ হাজার আইফোন নেটওয়ার্কে সচল রয়েছে, যার বেশিরভাগই অবৈধ। এসব ফোন থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
তিনি বলেন, এনইআইআর সিস্টেম চালুর মাধ্যমে কর ফাঁকি দিয়ে এবং অবৈধভাবে মোবাইল ফোনের আমদানি বন্ধের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। সেই আশ্বাসের ভিত্তিতেই স্থানীয়ভাবে কারখানা স্থাপন করেছিলেন দেশের প্রধান মোবাইল আমদানিকারকরা। কিন্তু অবৈধ মোবাইলের আধিপত্যে এখন চরম ক্ষতির সম্মুখীন তারা।
বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘এনইআইআর সিস্টেমটি সম্পূর্ণরূপে চালু করতে চাইছি। এতে অবৈধ হ্যান্ডসেটগুলোকে শনাক্ত করা যাবে’।
খাত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে অবৈধ হ্যান্ডসেটগুলো চিহ্নিত এবং মোবাইল অপারেটরগুলোর নেটওয়ার্ক থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিচ্ছিন্নের কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দেন তিনি। জানান, একাধিকবার সাটডাউন হয়ে এনইআইআর সিস্টেমটি কেন প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছিল, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান জানান, এবার আরও কঠোর পদক্ষেপের পরিকল্পনা করছে তার সংস্থা। এনইআইআর সিস্টেম ফের চালুর প্রক্রিয়া চলছে। এটি কার্যকর হলে মোবাইল হ্যান্ডসেট বাজারে অবৈধ ফোনের প্রবাহ এবং সরকারের রাজস্ব ক্ষতি কমবে বলেও আশাবাদী তিনি।
সরকারের দ্রুত পদক্ষেপে সংকট নিরসন এবং অসম প্রতিযোগিতা থেকে মুক্ত হয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার অপেক্ষায় থাকার কথা জানিয়েছেন বৈধ মোবাইল ফোন উৎপাদকরাও।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে