টেলিযোগাযোগ সেবা নিয়ে বিটিআরসির গণশুনানি অনুষ্ঠিত
অনলাইন প্লাটফর্ম ‘জুম’ এর মাধ্যমে বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওস্থ বিটিআরসি ভবনে অনুষ্ঠিত হয়েছে গণশুনানি। আর এই গণশুনানি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
গণশুনানিতে গ্রাহকরা টেলিযোগাযোগ সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যেসব সমস্যার সুম্মখীন হয়েছেন তা তুলে ধরেন এবং কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা ক্রমান্বয়ে গ্রাহকদের সকল প্রশ্নের উত্তর দেন।
জানা গেছে, গণশুনানিতে অংশে নিতে নিবন্ধন করেন ৩ হাজার ২৫ জন গ্রাহক। এ সময় নিবন্ধিত অংশগ্রহণকারীরা ছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত গ্রাহকরা টেলিযোগাযোগ সেবা সর্ম্পকে তাদের প্রশ্ন উপস্থাপন করেন।
গণশুনানিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ডিজিটাল কানেক্টিভিটি, সারাদেশে সুলভ মূল্যে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছানো, রাজস্ব আদায়, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং প্রযুক্তি শিল্প বিকাশে বিটিআরসির অসামান্য ভূমিকা রয়েছে। বর্তমান চাহিদা এবং ভবিষ্যতের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে আধুনিক ও ভবিষ্যতমুখী টেলিযোগাযোগ আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, টেলিযোগযোগ আইন-২০১০ এর সর্বশেষ সংশোধনী অনুসারে বিটিআরসির কর্মপরিধি এবং দায়িত্ব নির্ধারিত থাকবে। ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের জন্য যেসব তরঙ্গ বরাদ্দ করা হয়েছে সেটা যাতে ফোর-জি সেবার মানোন্নয়নে ব্যবহার হয় সে বিষয়ে বিটিআরসিকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
গণশুনানিতে সভাপতির বক্তব্যে অংশগ্রহণকারী সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান প্রকৌশল মো: মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, বিটিআরসির সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয় জণগণের মানসম্মত সেবা নিশ্চিতের জন্য। সেবার মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে গণশুনানি মাধ্যমে প্রাপ্ত গঠনমূলক পরামর্শ ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রম গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ্য ভূমিকা পালন করে। কমিশনের পরবর্তী গণশুনানি রাজশাহী বিভাগে অনুষ্ঠিত হবে।
টাওয়ার স্থাপন সংক্রান্ত বিষয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, টাওয়ার স্থাপনের সংখ্যা কমিয়ে আনার জন্য বিটিআরসি টাওয়ার শেয়ারিং চালু করেছে। এর ফলে এক টাওয়ার থেকে সব অপারেটর সেবা গ্রহণ করতে পারবে। বিটিআরসি সারাদেশে বিভিন্ন শহর ও উপজেলায় টাওয়ার রেডিয়েশন পরিমাপ করে এবং এর ফলাফল বিটিআরসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। দেশের রেডিয়েশন মাত্রা আন্তর্জাতিক মানদন্ডের চেয়ে নিচে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, রেডিয়েশনের নিয়ে শংকার কিছু নেই।
এ সময় গণশুনানি সংক্রান্ত কার্যক্রম নিয়ে বক্তব্য রাখেন কমিশনের সিস্টেমস্ এন্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খলিল-উর-রহমান। তিনি বলেন, মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত দেশে মোবাইল সিম সংযোগ সংখ্যা ১৯ কোটি ২২ লাখ, ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা ১৩ কোটি ৪৭ লাখ, মোবাইল ডেনসিটি ১০৮.৪১% এবং ইন্টারনেট ডেনসিটি ৭৫.৭৪%। মার্চ ২০২৪ সাল পর্যন্ত ব্যান্ডউইথ তথা ডাটার ব্যবহার হয়েছে ৫ হাজার ৯১২ জিবিপিএস। বর্তমানে দেশে ৯৯ ভাগ মোবাইল হ্যান্ডসেট স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হচ্ছে, যার মধ্যে স্মার্টফোন পেনিট্রেশন ৬০ ভাগের বেশি।
গণশুনানি চলাকালে মোবাইল নেটওয়ার্ক সংযোগ না পাওয়ার অভিযোগ করেন ধানমন্ডির এক ব্যবসায়ী নাহিয়ান। জবাবে কমিশনের ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক কাজী মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, যে সকল এলাকায় বহুতল অবকাঠামো রয়েছে সেখানে নেটওয়ার্ক কাভারেজ সহজে প্রবেশ করতে পারে না। অপারেটরগুলো নতুন সাইট স্থাপন করতে চাইলেও জণগণ বিভিন্ন এলাকায় নতুন সাইট নির্মাণের অনুমতি না দেয়ার ফলে পর্যাপ্ত সাইট স্থাপন করা যাচ্ছে না।
খিলগাঁওয়ের আরেক ব্যবসায়ী মুন্সি আমানুর রহমান স্থানীয় প্রভাবশালীদের কারণে পছন্দের ব্রডব্যান্ড সংযোগ নিতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেন। এর জবাবে কমিশনের ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিটিআরসি এ সংক্রান্ত অভিযোগ পেলে অবৈধ ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে থাকে।
আমিনুল ইসলাম নামে ঢাকার এক শিক্ষার্থী বলেন, তরঙ্গ বরাদ্দের পরও অপারেটরগুলো যথাসময়ে রোলআউট না করায় গ্রাহকরা মানসম্মত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এ বিষয়ে স্পেকক্ট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জুয়েল বলেন, অপারেটরদেরকে যথাসময়ে তরঙ্গ রোলআউটের নির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে, যা বাস্তবায়ন হলে মোবাইল নেটওয়ার্কের মান বাড়বে।
ঝিনাইদহ থেকে গণশুনানিতে অংশগ্রহণ করেন ইমরান হোসেন। তিনি প্রত্যন্ত এলাকার সিমের মালিকানা পরিবর্তন, এমএনপিসহ সকল টেলিযোগাযোগ সেবা এজেন্ট পয়েন্টের মাধ্যমে গ্রহণের সুবিধা চালুর বিষয়ে মতামত দেন।
এ বিষয়ে সিস্টেমস এন্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খলিল-উর-রহমান বলেন, সিমের মালিকানা পরিবর্তন ও এমএনপির জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য যাচাইয়ের প্রয়োজন হয়, বিধায় তা এজেন্ট পয়েন্টের মাধ্যমে সম্ভব হয় না। ভবিষ্যতে মোবাইল অপারেটর সংক্রান্ত সকল সেবা যাতে অনলাইনে নিয়ে আসা যায় সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।
বর্তমানে যে সকল অনিবন্ধিত ফোন রয়েছে তা বন্ধ হয়ে যাবে কি না- এ বিষয়ে জানতে চান কেরাণীগঞ্জের বাসিন্দা রাসেল।
এ বিষয়ে স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার প্রকৌশল শেখ রিয়াজ আহমেদ বলেন, নেটওয়ার্কে সচল সকল মোবাইল হ্যান্ডসেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হচ্ছে। তাই আপাতত কোনো মোবাইল হ্যান্ডসেট বন্ধ হবে না।
বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, এবারের গণশুনানির বিষয়বস্তু ছিল মোবাইল অপারেটরদের সেবার মান অর্থাৎ কলড্রপ ও বিভিন্ন প্যাকেজ (ভয়েস, ডাটা বান্ডল) এর মূল্য এবং ইন্টারনেট সেবা সংক্রান্ত অভিযোগ, প্রত্যন্ত এলাকায় ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধি, মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি, সাইবার অপরাধ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য টেলিকম সেবা প্রদানকারীদের সেবার মান।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব বিভাগের কমিশনার ড. মুশফিক মান্নান চৌধুরী, সিস্টেমস্ এন্ড সার্ভিসেস বিভাগের কমিশনার মো: দেলোয়ার হোসাইন, প্রশাসন বিভাগের মহাপরিচালক জনাব আবদুল্লাহ আল মামুন, লিগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং বিভাগের মহাপরিচালক আশীষ কুমার কুন্ডু, সচিব (বিটিআরসি) মো: নুরুল হাফিজ এবং পরিচালকবৃন্দসহ বিটিআরসির উধ্বর্তন কর্মকর্তারা।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে