টাকা আদায়ে ৪৮টি চিঠি দিয়েছে বিটিআরসি
পদ্মা ব্যাংকের কাছে আটকে আছে বিটিআরসির ২৫ কোটি টাকা
ডুবতে থাকা পদ্মা ব্যাংকের ৫ শাখায় ২০১৭ সালে ৩৮ কোটি টাকার স্থায়ী আমানতের রসিদ (এফডিআর) রেখেছিলো বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। মেয়াদ ছিলো ৬ মাস। তবে বছরের পর বছর পার হলেও এই টাকা ফেরত পাচ্ছে না বিটিআরসি। টাকা আদায়ে ৪৮টি চিঠি দিলেও ব্যাংকটি ফেরত দিয়েছে মাত্র ১২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। বাকি ২৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
বিটিআরসি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থ আটকে থাকার ফলে বর্তমানে বিটিআরসির অর্থনৈতিক কার্যক্রমে প্রভাব পড়তে পারে বলে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মাঝে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
এফডিআর হলো একটি নিরাপদ বিনিয়োগ পদ্ধতি, যা ব্যাংকের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সঞ্চিত থাকে এবং সুদ প্রদান করে থাকে।
বিটিআরসি বিভিন্ন সময়ে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকে বিভিন্ন পরিমাণ অর্থ এফডিআর আকারে জমা রেখেছিলো, যার মধ্যে পদ্মা ব্যাংকও ছিলো।
কমিশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ব্যাংকে অর্থ জমা রেখে প্রথমত সংস্থাটি তার আর্থিক ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা করেছিলো। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন ব্যাংকের মধ্যে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পেলে, সুদের হারও প্রতিযোগিতামূলক হয়, যা বিটিআরসির জন্য আর্থিকভাবে লাভজনক হয়। তৃতীয়ত, বিভিন্ন ব্যাংকের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে বিটিআরসি তাদের ব্যাংকিং পরিষেবাগুলোর গুণমান পর্যালোচনা করতে পারে এবং ভবিষ্যতে আরও ভালো আর্থিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়। কিন্তু পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে এ বিষয়ে হয়েছে উল্টো হিসেব।
২০১৯ সালের জুন মাসের পর থেকে এক সরকারি আদেশে বিটিআরসির রাজস্ব আদায়ের টাকা সরাসরি সরকারি কোষাগারে জমা করার নির্দেশ দেয় অর্থ বিভাগ। এর পর থেকে বিটিআরসি ব্যাংকে এফডিআর আকারে টাকা জমা রাখা বন্ধ করে।
ব্যাংকিং নিয়ম অনুযায়ী, মেয়াদপূর্তির পর জমাকৃত অর্থ উত্তোলন করতে না পারা গ্রাহকের অধিকার লঙ্ঘনের সামিল।
বিটিআরসির কমিশনের কার্যপত্র থেকে জানা যায়, পদ্মা ব্যাংকের গুলশান করপোরেট শাখা, মতিঝিল, মিরপুর, বসুন্ধরা এবং ইমামগঞ্জ এই ৫টি শাখায় ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর হতে ডিসেম্বর সময় পর্যন্ত ৩৮ কোটি টাকার ১২টি স্থায়ী আমানত রাখা হয়। কিন্তু ব্যাংকের পক্ষ থেকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিটিআরসির অর্থ ফেরত দেয়নি।
এরপর বিটিআরসির পক্ষ থেকে একাধিকবার তাগাদা দেওয়ার পরও ব্যাংক থেকে অর্থ আদায় করতে পারছিলো না সংস্থাটি। পরে ব্যাংকটির গুলশান করপোরেট শাখা ২০১৯ সালের ২৭ জুন সুদসহ বিটিআরসির ৩ কোটি এবং ৭ অক্টোবর ২ কোটি ৪০ লাখসহ মোট ৫ কোটি টাকা ফেরত দেয়। মিরপুর শাখা ২০২০ সালের ৩ মার্চ ২ কোটি ৪০ লাখ, বসুন্ধারা শাখা ২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ২ কোটি ৪০ লাখ এবং ইমামগঞ্জ শাখা থেকে একই বছরের ২ অক্টোবর এক কোটি, ১৪ নভেম্বর এক কোটি, ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি ৪০ লাখ টাকা ফেরত দেয়। সবমিলিয়ে বিটিআরসি ৩৮ কোটি টাকার মধ্যে ১২ কোটি ৬০ লাখ টাকার ফেরত পেয়েছে।
ব্যাংকটির কাছে সংস্থাটির এখনো পাওনা ২৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এরমধ্যে মতিঝিল শাখায় ৫ কোটি ৪০ লাখ, মিরপুর শাখায় ৩ কোটি, বসুন্ধরা শাখায় ৯ কোটি এবং ইমানগঞ্জ শাখায় পাওনা ৮ কোটি টাকা।
বিটিআরসির এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমরা পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে এবং বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তারপরও ব্যাংকটির কাছ থেকে অর্থ আদায় করতে পারেনি। ব্যাংকটির পক্ষ থেকে তারল্য সংকটের কথা তুলে ধরে অনেকবার সময় নিয়ে কালক্ষেপন করছে।
তিনি বলেন, আমাদের বিশ্বাস, আমরা এই সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হবো।
ওই কর্মকর্তা জানান, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনগণের আস্থা বজায় রাখতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু এবং বিটিআরসি কোনোভাবেই জনগণের অর্থের নিরাপত্তা নিয়ে আপস করবে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এফডিআর আটকে থাকা এবং ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থার দুর্বলতা আর্থিক খাতে উদ্বেগের সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে বিটিআরসি বা অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের অর্থ আটকে থাকার ঘটনা ব্যাংকগুলোর প্রতি আস্থা কমাতে পারে।
তারা মনে করছেন, এ ধরনের ঘটনা সরকারের নীতিমালা ও ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রতি আস্থা পুনর্বিবেচনার সময় এসেছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে