সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৫
প্রতিকূলসহিষ্ণু ভবিষ্যৎ গড়ে তুলুন
বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের যুদ্ধ যুগ-যুগান্তরের। আর এই যুদ্ধের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হলো দাবদাহ। সম্প্রতি দেশের কয়েকটি জেলায় দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে। এই অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের সব জায়গাতেই বৃদ্ধি পাচ্ছে গড় তাপমাত্রা। সেইসঙ্গে তাপ বাড়ার বিরূপ প্রভাব পড়ছে মানুষের জীবনে, প্রকৃতিসহ জীব ও উদ্ভিদ জগতে।
আজ শনিবার (২০ এপ্রিল) একাধিক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যমতে, দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহে গরম আরও বেড়ে যাওয়ার শঙ্কায় তিন দিনের জন্য হিট অ্যালার্ট দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আগামীকাল রোববার (২১ এপ্রিল) থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলা। ঈদের ছুটির পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলতে যাচ্ছে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রথম সাময়িক ও বিভিন্ন টেস্ট পরীক্ষা হওয়ারও কথা রয়েছে। অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন, এমন তীব্র গরমের মধ্যে কীভাবে ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে যাবে। অভিভাবকরা স্কুল বন্ধের দাবি তুলেছেন। রাজধানীর একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, কয়েক দিনের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা দরকার। কারণ, শ্রেণিকক্ষে বিদ্যুৎ না থাকলে গরমে শিশুদের অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাপপ্রবাহের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের মাধ্যমে সমন্বিত সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এম তারিক আহসান।
এই তাপপ্রবাহের সময় বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। ঘাম ঝরে বেশি। আর সে জন্য মানুষের ভেতরে অস্বস্তির বোধ হয়। এমন পরিস্থিতিতে প্রচুর পানি পান, রঙিন কাপড় না পরা এবং লবণমিশ্রিত পানি পানের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গতকাল (১৯ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি এ বছরের এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। কোনো এলাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলে গণ্য করা হয়। তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হয়ে গেলে তখন তাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়। গত বছরের ১৭ এপ্রিল পাবনার ঈশ্বরদীতে তাপমাত্রা হয়েছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি ছিল গত বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। আবহাওয়াবিদরা আশঙ্কা করছেন এ বছর এটিও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
তাহলে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হবে, তা লেখাই বাহুল্য। এর মধ্যে হিটস্ট্রোকে দেশের কয়েকটি স্থানে কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। কিছু এলাকায় বারবার লোডশেডিংয়ের কারণে পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে রাজধানীতে যেহেতু খোলামেলা জায়গা কম, গাছগাছালি কম রাজধানীবাসীর দুর্ভোগ আরও চরমে।
বিজ্ঞানী ও গবেষকরা বলছেন, এই হারে তাপ বৃদ্ধির ধারা চলতে থাকলে তার প্রভাব মোকাবিলা করা মানুষের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপরও তাপ বৃদ্ধির ভয়ানক প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে। সৃষ্টি হবে চরম দাবদাহ। যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তনের উৎস বৈশ্বিক, তাই এর সমাধান ও ব্যবস্থাপনাও বৈশ্বিক হতে হবে। শুধু যদি বিশ্বব্যাপী ও পৃথক দেশের প্রচেষ্টাকে সমন্বিত করে কার্যকর নীতি, পরিকল্পনা ও কার্যকর শাসন পদ্ধতির মাধ্যমে পরিচালিত হয়, তবেই কর্মপ্রচেষ্টা সফল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে বহুতল ভবন, কংক্রিটের রাস্তা ও এসি ঢাকাকে একটি তপ্ত ভূখণ্ডে পরিণত করেছে। এ জন্য বিরূপ পরিস্থিতি বাড়ছে। তাই আমাদের সবার জন্য একটি টেকসই ও প্রতিকূলসহিষ্ণু ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য সরকার, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থা, বেসরকারি খাতগুলোর মধ্যে বৃহত্তর সংহতি প্রয়োজন।
এমতাবস্থায় যদি দাবদাহকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা না করা হয়, তাহলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে যাবে। দুর্যোগ ঘোষণার পাশাপাশি জনগণের স্বাস্থ্যসুরক্ষায় সরকারি সাহায্যও প্রয়োজন। নিম্নআয়ের মানুষদের খাদ্য ও স্বাস্থ্যনিরাপত্তা দিতে হবে সবার আগে। যারা দিন এনে দিন খায়, এই তীব্র গরমে ঘর থেকে বেরোতে বাধ্য হলে তাদের জীবনসংশয়ের আশঙ্কা থাকবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে