উদ্বোধনী সংখ্যা ১ : স্মার্ট বাংলাদেশের পথে যাত্রা
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে
শিক্ষা হলো একটি জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষা মানুষের চিন্তা-চেতনা ও বিবেক-বোধ সৃষ্টি করে, মানুষকে মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে। মানুষের মধ্যে মূল্যবোধ সৃষ্টি করে, মানুষ হিসেবে তার অধিকার ও কর্তব্য নিশ্চিত করে। প্রতি বছর লাখ লাখ ছাত্র-ছাত্রী স্কুল-কলেজে ভর্তি হচ্ছে, আবার একই সংখ্যায় পাস করে বেরও হচ্ছে। অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে ছেলে-মেয়েদের পাসের হার অনেক বেশি; কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীরা মেধা, চিন্তা-চেতনা, মননশীলতা ও মূল্যবোধ বিকশিত হবার সুযোগ পাচ্ছে না। সে পথ রুদ্ধ হয়ে থাকছে। পাস করা বিদ্যার প্রতি আমাদের আগ্রহ বেশি। নম্বরের সূচকে আমরা শিক্ষার্থীর মেধা যাচাই করি। বেছে বের করি কে মেধাবী, কে মেধাশূন্য। এই মানদণ্ড এখন সর্বত্র কার্যকর। ফলে একজন শিক্ষার্থীর যাবতীয় ধ্যান-জ্ঞান, কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে নির্দিষ্ট পরিমাণ মার্কস অর্জনের মধ্যে।
স্কুল-কলেজ, কোচিং বা প্রাইভেট টিচারের কাছে যেখানেই সে শিক্ষা অর্জনের জন্য যাচ্ছে, তাকে ঘুরে ফিরে ওই নির্দিষ্ট কয়েকটি সাবজেক্টের নির্দিষ্ট পরিসীমার ভেতরে আটকে রাখা হচ্ছে। যে শিক্ষায় মনুষ্যত্ববোধ, দেশপ্রেম, মানবতা, বিবেক অর্জিত হয় না, যে শিক্ষা মানুষকে আত্মকেন্দ্রিকতা বিসর্জন দিয়ে মানবতার কল্যাণে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করার অনুপ্রেরণা জোগায় না, সেই শিক্ষা দ্বারা কস্মিনকালেও জাতির ভাগ্য পরিবর্তন হবে না। পাস করা বিদ্যা দিয়ে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়া যায়, উচ্চ বেতনের সরকারি চাকরিজীবী হওয়া যায়; কিন্তু সুশিক্ষার অভাবে সে পেশার পবিত্রতা রক্ষা করা সম্ভব হয় না। তাই দেখা যায়, যতই আমাদের দেশে তথাকথিত শিক্ষার হার বাড়ছে, লাখ লাখ লোক শিক্ষিত হয়ে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, প্রাতিষ্ঠানিক, ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদে বসছে ততই অন্যায়-অবিচার, জুলুম, ধনী-দরিদ্র বৈষম্য, ঘুষ, দুর্নীতি বাড়ছে। এই শিক্ষা মানুষকে অন্যায়-অসৎ কর্মকাণ্ড থেকে ফেরাতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। সর্বপ্রথম আমাদের উচিত হবে পাসের হার না দেখে শিক্ষার মান যাচাই-বাছাই করা, কীভাবে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করা যায়, সে লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা। তবে সবচেয়ে বড় যে পরিবর্তনটা জরুরি তা হলো মনস্তাত্বিক।
মনস্তাত্বিকভাবে আমাদের অর্থ-বিত্তের সংকীর্ণ পরিধি থেকে মুক্ত হয়ে মানবতার কল্যাণে আত্মনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীদেরও স্মার্ট হিসেবে গড়ে তোলা প্রয়োজন। বিজ্ঞান যুগে যুগে মানুষকে সঠিক পথ দেখিয়েছে। বর্তমানে আমরা আধুনিক ও উন্নত মানুষ বলতে মূলত একজন বিজ্ঞানমনস্ক মানুষকেই বুঝি। তাই দেশের সার্বিক উন্নতিকল্পে বিজ্ঞান শিক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়ার বিকল্প নেই। বিজ্ঞানের শিক্ষা বিশ্লেষণধর্মী ও বাস্তবমুখী। তাই বৈজ্ঞানিক উপায়ে কোনো কাজের পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন করাই সর্বোত্তম। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, কেবল এর মাধ্যমেই সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা আমাদের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে পারি। আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে শিক্ষার্থীদেরও স্মার্ট শিক্ষার্থী হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। বিশ্বকে জানার আগ্রহ আমাদের মধ্যে কাজ করছে না। ফলে আমাদের জ্ঞানের পরিধিও বাড়ছে না। অনেকের ধারণা, জ্ঞানচর্চা করে লাভ নেই, শুধু একটি সার্টিফিকেট হলেই হবে। আমাদের দেশে বিজ্ঞানের ছাত্র আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে।
আমাদের পড়ালেখার মূল উদ্দেশ্য চাকরি, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অথচ শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো, জ্ঞানচর্চা করা, বিশ্ব সম্পর্কে জানা, স্রষ্টার সৃষ্টির রহস্য উদ্ঘাটন এবং এ সম্পর্কে গবেষণা করা। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। যে জাতি যত শিক্ষিত, সে জাতি তত উন্নত। তবে এই শিক্ষা দুই ধরনের হতে পারে। একটি প্রাতিষ্ঠানিক, অপরটি অপ্রাতিষ্ঠানিক। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা হলো, কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও কারিকুলামের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা। অন্যদিকে অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা হলো, প্রাকৃতিক শিক্ষা। যে বিদ্যা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটায় না, তাই পুঁথিগত বিদ্যা। যে শিক্ষার সঙ্গে জ্ঞানার্জনের বিশেষ কোনো সম্বন্ধ নেই, কেবল জীবিকার জন্য ব্যবহৃত হয়, তাই পুঁথিগত বিদ্যা। যে জাতি যত বেশি জ্ঞানী, সে জাতি তত বেশি মানবিক। যে জাতি যত বেশি ন্যায়পরায়ণ, সে জাতি তত বেশি ত্যাগী। জ্ঞানার্জনের পিপাসা মানুষকে দান করে অমরত্ব। অর্জিত জ্ঞানের আলো একটু একটু করে পৃথিবীকে আলোকিত করে। প্রত্যেক মানুষের মধ্যে মানুষরত্ন লুকিয়ে আছে। তাকে বের করে আনতে হয়, উপযুক্ত পরিবেশ ও শিক্ষা দিয়ে লালন করতে হয়, কাজে লাগাতে হয়। তারপর একটা মানুষ ‘মানুষ’ হয়। তাতে তার নিজের, সমাজের, দেশ ও দশের কল্যাণ হয়। উপযুক্ত সুশিক্ষার মাধ্যমেই কেবল মানুষকে প্রকৃত মানুষ, সুশিক্ষিত জনগোষ্ঠী এবং জনসম্পদে পরিণত করা যায়, সঠিক পথে চালানো যায়।
মানবসন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করলেই একজন পরিপূর্ণ মানুষের সব গুণ তার মধ্যে বিকশিত হয়ে ওঠে না। এসব গুণাবলি তাকে নিজের সাধনায় অর্জন করতে হয়। প্রকৃত শিক্ষিত ব্যক্তির চোখের গভীরতা, হৃদয়ের প্রসারতা আর দৃষ্টিভঙ্গির দূরদর্শিতা বিশ্ব সভ্যতার জন্য আশীর্বাদ। প্রকৃত শিক্ষা যেন জ্ঞানার্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, আর জীবিকার মাধ্যম হোক কর্মমুখী শিক্ষা। একজন মানুষের সত্যিকারের পরিচয় প্রকাশ পায় তার মনুষ্যত্ব ও যোগ্যতার মধ্যে। পৃথিবী যে রূপে দ্রুততালে এগিয়ে চলেছে, তাতে শিক্ষিত না হলে অনেক পেছনে পড়ে থাকবে। ব্যাপক আকারে প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণ প্রয়োজন। প্রত্যেক রাষ্ট্রের ভিত হলো সে দেশের শিক্ষিত যুব সমাজ। প্রত্যেকটি রাষ্ট্রের ভিত কত মজবুত তা নির্ভর করে সেই রাষ্ট্রের তরুণ সমাজের শিক্ষার ওপর। শিক্ষা সুন্দর আলো, কারুকার্যময় ভবিষ্যৎ এবং আত্মবিশ্বাস দেয়। যত ছাত্র-ছাত্রী পাস করছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে কিন্তু পাস করা ও শিক্ষিত হওয়া এক বিষয় নয়। শিক্ষার সঙ্গে জাতির জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন জড়িয়ে রয়েছে। শিক্ষার মাধ্যমে নাগরিকদের শিক্ষিত করা সমাজের দায়িত্ব। শিক্ষা জীবন গঠন করে ও জীবিকা প্রদান করে। নীতিবিহীন শিক্ষা সমাজে উন্মাদগ্রস্ততার সৃষ্টি করে।
জাতির শিক্ষা-দিক্ষা ও সভ্যতার ধারাই তার আত্মা। শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। শিক্ষার মান এককভাবে শিক্ষার্থীদের ফলাফলের ওপর নির্ভরশীল নয়। দেশের সব শিক্ষার্থী পরীক্ষায় কৃতকার্য হলেও বলা যাবে না যে, দেশের শিক্ষাব্যবস্থা গুনগতমানের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছেছে। শিক্ষার মান নির্ভর করে শিক্ষাক্রমের সফল বিতরণ, শিক্ষাদান পদ্ধতি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভৌত অবকাঠামো সুযোগ-সুবিধা, মানসম্মত শিক্ষক, গুণগত শিক্ষা ও সে শিক্ষার ফলাফলের ওপর। কেবল ফল বা জিপিএ বৃদ্ধি অথবা হাতেগোনো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শতভাগ পাসের হিসাব দিয়ে দেশের শিক্ষার মান কোনোভাবেই বিচার করা যায় না। শিক্ষা হতে পারে পারিবারিকভাবে, সামাজিকভাবে ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে। অথচ শিক্ষাকে এখন পরিপূর্ণভাবে ভারসাম্যহীন করে ফেলা হয়েছে। এখন আর কেউ মানবতার কল্যাণের উদ্দেশ্যে শিক্ষালাভের কথা ভাবে না। বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুল-কলেজে যায় ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হয়ে অর্থ উপার্জন করার লক্ষ্য নিয়ে। ফলে শিক্ষাজীবনের এক শিকল থেকে মুক্ত হয়ে তারা অর্থ নামক আরেক শিকলে নিজেদের জড়িয়ে ফেলেন। তারা এটা বোঝেন না যে, প্রচলিত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে যতই অর্থ-সম্পদের সাগরে অবগাহন করুক না কেন তারা কার্যত শৃঙ্খলিত, পরাধীন। বাস্তবমুখী শিক্ষার কোনো বিকল্প নাই। এই শিক্ষার প্রধান উৎস হলো পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ভালো বই এবং সৎসঙ্গী।
একজন ব্যক্তির বাস্তমুখী শিক্ষা অর্জনে মুখ্য ভূমিকা রাখে তার পরিবার। বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় হাতে কলমে বাস্তবধর্মী শিক্ষাই হলো কারিগরি শিক্ষা। অর্থাৎ যে শিক্ষা ধরাবাঁধা নিয়মের বাইরে গিয়ে কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে দেশের শিক্ষার্থীসমাজকে দক্ষ এবং বাস্তবসম্মত জ্ঞানের অধিকারী হিসেবে করে গড়ে তোলে। বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতা থাকায় কারিগরি শিক্ষাকে চাকরির ক্ষেত্রেও খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। তাই সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিযোগিতার বাজারে কারিগরি শিক্ষা যোগ্য প্রতিযোগী তৈরিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। শিক্ষার বিষয়বস্তুর মধ্যে বৈচিত্র্য থাকতে হবে। বাল্যকাল হতে আমাদের শিক্ষার সঙ্গে আনন্দ নেই। কেবল যা কিছু নিতান্ত আবশ্যক তাই কণ্ঠস্থ করছি। যেমন করে কোনোমতে কাজ চলে মাত্র; কিন্তু মনের বিকাশ হয় না। আমরা চাই আমাদের শিক্ষা পদ্ধতি এমন হোক, যা আমাদের জীবন শক্তিকে ক্রমেই সজাগ, জীবন্ত করে তুলবে। যে শিক্ষা ছেলেদের দেহমন দুটিকেই পুষ্ট করে, তাই হবে আমাদের শিক্ষা। একটি ন্যূনতম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা মানুষের জীবনকে বিকশিত করার জন্য প্রয়োজন। শিক্ষা হবে আনন্দময় সৃষ্টিশীলতা, দক্ষতা, জ্ঞানার্জন ও জ্ঞান বিকাশের মাধ্যম। প্রকৃত শিক্ষার জন্য কর্ম শক্তি, আবেগ ও তীব্র আকাঙ্ক্ষার প্রয়োজন। যে শিক্ষায় জীবনে নিজের পায়ের ওপর দাঁড়াতে পারা যায়, সেই হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষার শেকড় তেতো হলেও এর ফল মিষ্টি। একজন শিক্ষিত লোক নিঃসন্দেহে সম্পদশালী লোক। কেবলমাত্র শিক্ষাই মানুষের সম্পূর্ণ সম্ভাবনাকে বাস্তবে পরিণত করতে পারে। করতে পারে তাকে সমস্ত সামাজিক সম্পদ সৃষ্টির দক্ষ এবং শক্তিশালী কারিগর।
সরকারের বর্তমান গৃহীত উদ্যোগ হচ্ছে, ‘২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উদ্ভাবনী ও জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির স্মার্ট বাংলাদেশ।’ প্রযুক্তির বিশ্বে বিজ্ঞানমনস্ক, প্রযুক্তিবান্ধব, প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত এবং নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা জরুরি। গতানুগতিক চিন্তাভাবনা, জীবনবোধ, মনমানসিকতা ঝেড়ে ফেলে কুসংস্কার, গোঁড়ামিমুক্ত মানবিক জীবনদর্শন অনুসরণ। ব্যক্তিজীবনে, পরিবারে, সমাজে এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় এখনো অনেক পুরোনো চিন্তাভাবনা, দর্শন, সংস্কার, ধ্যানধারণা জেঁকে বসে আছে। বাইরে থেকে দেখে যতই আধুনিক যুগোপযোগী মনে হোক না কেন, ভেতরে ভেতরে সেখানে দীর্ঘদিন ধরে লালিত চেতনা ও নীতিকে বহন করা হচ্ছে। হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার ও হিউম্যানওয়্যারকে সংযুক্ত করে স্মার্ট সিটি, স্মার্ট ভিলেজ সর্বোপরি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট শিল্প-কলকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাণিজ্য, কৃষিসহ সর্বক্ষেত্রে রোবোটিকস, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ন্যানো টেকনোলজি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, জৈব প্রযুক্তি অর্থাৎ ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার নিশ্চিত করতে বিজ্ঞান শিক্ষার বিকল্প নেই। সব পর্যায়ে গবেষণার ওপর জোর দিতে হবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শোষণ-বঞ্চনামুক্ত একটি সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। স্মার্ট দেশ গড়ার মাধ্যমে একটি সুখী-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলে তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে আমাদেরই। আর এভাবেই এই দেশের সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর দায়িত্ব আমাদেরকেই নিতে হবে। ‘স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি-এ চারটি মৌলিক স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে আগামীর বাংলাদেশ গড়তে হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। বাস্তবমুখী শিক্ষার কোনো বিকল্প নাই। এই শিক্ষার প্রধান উৎস হলো পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ভালো বই এবং সৎসঙ্গী। একজন ব্যক্তির বাস্তবমুখী শিক্ষা অর্জনে মুখ্য ভূমিকা রাখে তার পরিবার। বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় হাতে কলমে বাস্তবধর্মী শিক্ষাই হলো কারিগরি শিক্ষা। অর্থাৎ যে শিক্ষা ধরাবাঁধা নিয়মের বাইরে গিয়ে কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে দেশের শিক্ষার্থীসমাজকে দক্ষ এবং বাস্তবসম্মত জ্ঞানের অধিকারী হিসেবে করে গড়ে তোলে। বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতা থাকায় কারিগরি শিক্ষাকে চাকরির ক্ষেত্রেও খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। তাই সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিযোগিতার বাজারে কারিগরি শিক্ষা যোগ্য প্রতিযোগী তৈরিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। শিক্ষার বিষয়বস্তুর মধ্যে বৈচিত্র্য থাকতে হবে।
বাল্যকাল হতে আমাদের শিক্ষার সঙ্গে আনন্দ নাই। কেবল যা কিছু নিতান্ত আবশ্যক তাই কণ্ঠস্থ করছি। যেমন করে কোনো মতে কাজ চলে মাত্র; কিন্তু মনের বিকাশ হয় না। আমরা চাই আমাদের শিক্ষা পদ্ধতি এমন হউক, যা আমাদের জীবন শক্তিকে ক্রমেই সজাগ, জীবন্ত করে তুলবে। যে শিক্ষা ছেলেদের দেহমন দুইকেই পুষ্ট করে, তাই হবে আমাদের শিক্ষা। একটি ন্যূনতম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা মানুষের জীবনকে বিকশিত করার জন্য প্রয়োজন। শিক্ষা হবে আনন্দময় সৃষ্টিশীলতা, দক্ষতা, জ্ঞানার্জন ও জ্ঞান বিকাশের মাধ্যম। তথ্যপ্রযুক্তির নিত্যনতুন উদ্ভাবনের পথ ধরে অপার সম্ভাবনার চতুর্থ শিল্পবিপ্লব বিজয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অদম্য অগ্রগতিতে এগিয়ে যাওয়া আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে প্রকৃত আধুনিক যুগোপযোগী বিজ্ঞান শিক্ষায় জাতিকে গড়ে তুলতে হবে।
লেখক: রেজিস্ট্রার, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জামালপুর।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে