Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট নারী

maria  Salam

মারিয়া সালাম

শুক্রবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ডিজিটাল বাংলাদেশ রুপকল্পের আলোকে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, বাণিজ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করেছে। বিশ্বজুড়ে চলমান চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ এখন স্বপ্ন দেখছে একটি প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট দেশ গড়ার। সেই লক্ষ্যে সরকার হাতে নিয়েছে 'স্মার্ট বাংলাদেশ' রুপকল্প ২০৪১। এই স্মার্ট বাংলাদেশ হবে সাশ্রয়ী, টেকসই, জ্ঞানভিত্তিক, বুদ্ধিদীপ্ত উদ্ভাবনী। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ভিত্তি চারটিস্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজ।

 আমাদের মনে রাখতে হবে, স্মার্ট বাংলাদেশ কিন্তু কেবল স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট পরিবহন, স্মার্ট ইউটিলিটিজ, স্মার্ট কৃষি বা ফাইভ জি ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করাই নয়। বরং এই রুপকল্পের মূলমন্ত্র হচ্ছে, স্মার্ট নাগরিক তৈরি করা যাতে করে প্রযুক্তির উৎকর্ষ সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত হয় এবং বাংলাদেশ সরাসরি এর ফল ভোগ করতে পারে।

 বাংলাদেশে এই নাগরিক কারা? নারী এবং পুরুষ উভয়েই নাগরিক এবং আইনুগতভাবেই তারা সমান। সংবিধানের ২৮ () অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘রাষ্ট্র গণজীবনের সর্বস্তরের নারী পুরুষের সমান অধিকার লাভ করিবেন আবার, সংবিধানের ২৮() অনুচ্ছেদে আছে, ‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী,বর্ণ, নারী-পরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না।তাই, স্মার্ট নাগরিক গড়তে হলে আমাদের অবশ্যই নারীদের কথা ভুলে গেলে চলবে না।

 বাংলাদেশের জনশুমারি গৃহগণনা ২০২২ অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে পুরুষের সংখ্যা ,১৭,১২,৮২৪ এবং নারীর সংখ্যা ,৩৩,৪৭,২০৬। সে অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যার ৫০. ভাগই নারী। তাই, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে সর্বপ্রথমে দেশের নারীদের সেই মাপের যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে।

 কয়েকদশক আগের তুলনায় দেশে এখন নারীদের অগ্রগতি এবং নারীর ক্ষমতায়ন উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। কিন্তু, সেটি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে যে দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন সেই তুলনায় অত্যন্ত নগন্য। দেশের জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি নারী হলেও, নারীদের মধ্যেই রয়েছে বিভিন্নধরনের বৈষম্য। বর্তমানে দেশে মোট কোটি লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৬ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা কোটি লাখ হাজার ৭৮৩ জন, শতকরায় যা ৫০ দশমিক ৯৫ শতাংশ। সেই হিসেবে শিক্ষায় নারীর সরব অংশগ্রহণ থাকলেও তার বিপরীত চিত্র কর্মক্ষেত্রে।শিক্ষক বা সেবিকার মতো পেশাতে নারীর অংশগ্রহণ বেশি হলেও অন্যান্যক্ষেত্রে নারীর সংখ্যা খুবই কম। বর্তমানে দেশের ১৫ লাখেরও অধিক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে নারী লাখ ১৪ হাজারের মতো।

 

যেখানে স্মার্ট বাংলাদেশ রুপকল্পের একটি লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে আইসিটি সেক্টরে নারীদের অংশগ্রহণে সমতা আনা, সেখানে এই খাতেই নারীর অংশগ্রহণ তেমন উল্লেখযোগ্য না। কেবলমাত্র মুঠোফোন বা ইন্টারনেট ব্যবহারে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও প্রযুক্তি খাতে ব্যাপকহারে নারীর সম্পৃক্ততায় এখনো বড় ধরনের ফারাক রয়েছে। যদিও অনেক স্বনামধন্য স্টার্ট-আপ দেশে নারীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত নারীরাই এসবের নেতৃত্বে আছেন, তবুও আমাদের প্রযুক্তি শিল্পে এখনও নারীর অংশগ্রহণ অত্যন্ত কম।প্রায় ৩০ শতাংশ নারী তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তিতে পড়াশোনা করলেও সফ্টওয়্যার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং উন্নত প্রযুক্তিতে কর্মরতদের মধ্যে মাত্র - শতাংশ নারী।

 তাই, রুপকল্প ২০৪১ অর্জন করতে হলে আমাদের প্রথমেই পিছিয়ে পড়া নারীদের দিকে নজর দিতে হবে এবং যারা ইতোমধ্যেই এগিয়ে গিয়েছেন, তাদের মান উন্নয়ন দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন। আমাদের মনে রাখতে হবে, নারীর উন্নয়ন ছাড়া স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কোন উপায় নেই। সংবিধানের ২৮() অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে যে,‘নারী বা শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের যেকোনো অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন হইতে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না তাই, নারীর টেকসই উন্নয়ন এবং নারীর ক্ষমতায়নের পথে যে কোন বাধা-বিপত্তি বা সমালোচনা মোকাবেলা করে সরকারকে কাজ করে যেতে হবে।

 অবশ্য, সরকার নারীর ক্ষমতায়নে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তৃণমূল পর্যায়ে হাজার ডিজিটাল সেন্টার, বড় জেলায় বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সারাদেশে কারিগরি ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা নারীর ক্ষমতায়নে সহায়ক হবে। অধিকন্তু, প্রান্তিক নারীদের জন্য ডিজিটাল আর্থিক পরিষেবার সুবিধার্থে নারী-নেতৃত্বাধীন এজেন্ট নেটওয়ার্ক সাথী-এর প্রবর্তন সরকারের একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।

 ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে নারীদের অবদান যেমন অনস্বীকার্য, তেমন নারীদেরক দক্ষতা বৃদ্ধি করে তাদের স্মার্ট করে গড়ে তুলে স্মার্ট বাংলাদেশ রুপকল্প বাস্তবায়নে তাদের কাজে লাগাতে হবে। স্মার্ট নারী গড়ে তোলার জন্য শিক্ষাক্ষেত্র বা কর্মক্ষেত্রে যেমন নারীদের উন্নয়নে পদক্ষেপ নিতে হবে, তেমন নারীদের প্রতি সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দূর করতে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও কাজ করতে হবে। সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া নারীর জন্য সাচ্ছন্দ্যময় কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা প্রায় অসম্ভব। কাজের স্থানে মানসিক শান্তির অভাব, লৈঙ্গিক বৈষম্য বা সহকর্মীদের অসহযোগ থাকলে সেই পরিবেশে দক্ষ এবং স্মার্ট নারী গড়ে উঠতে পারে না। দক্ষতা বৃদ্ধির সাথে সাথে মানসিক প্রশান্তি নিশ্চিত করারটাও তাই অত্যন্ত জরুরি। নারীর জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণ যেমন জরুরি তেমন সমাজের প্রত্যেকের নৈতিক মানউন্নয়নও জরুরি।

 উন্নত সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা ছাড়া সমাজে তথা দেশে নারীর শতভাগ অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব নয় আর বঞ্চিত কোন জনগোষ্ঠীর পক্ষেই দক্ষ স্মার্ট হয়ে উঠা অসম্ভব।  সমাজের স্মার্ট চিন্তাধারা তৈরি করবে স্মার্ট নারী আর স্মার্ট নারী এগিয়ে নিয়ে যাবে দেশকে। তারাই বিনির্মাণ করবে স্মার্ট বাংলাদেশ। মনে রাখতে হবে, বিশ্বাস করতে হবে, নারীর উন্নয়ন কেবল তার ব্যক্তিগত নয়, একটি দেশের উন্নয়ন।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ