চাকরিতে বয়সসীমা ৩৫ করার দাবি
পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি ভুলে বাস্তবতা মোকাবিলা করুন
বাংলাদেশে বেকারসংখ্যা বাড়ার বড় কারণ চাকরি ও শ্রমবাজার ছোট, সরকারি চাকরি আরও কম। তার মধ্যে সেশনজটসহ নানা কারণে শিক্ষার্থীদের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করে বেরোতে দেরি হয়ে যাচ্ছে। করোনা মহামারির কারণেও অনেকের শিক্ষার ধারাবাহিকতায় বিঘ্ন ঘটেছে। স্বাভাবিকভাবে শিক্ষাজীবন অগ্রসর হলে বর্তমানে একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ চব্বিশ-পঁচিশ বছর বয়সে স্নাতকোত্তর শেষ করে বেরোতে পারেন। সেশনজটে পড়লে আরও দু-চার বছর বাড়ে। স্নাতকোত্তর শেষ করে বেরোতে বেরোতে কোনো কোনো শিক্ষার্থীর ২৭-২৮ বছরও লেগে যায়। তারপর চাকরির প্রস্তুতি নিতে নিতে দু-চার বছর এমনিতেই চলে যায়।
আজ রোববার (১২ মে) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। সমাবেশ শেষে গণভবন অভিমুখে পদযাত্রা করতে গিয়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়েছেন তারা। পুলিশের অভিযোগ, শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছিলেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় অবরোধস্থল থেকে ১৩ জনকে আটক করা হয়েছে বলে আন্দোলনকারীরা দাবি করেছেন।
খবর এতটুকু হলেও জটিলতা অনেক। ঔচিত্যবোধ দিয়েই এর সমাধান করা যাবে না। কে সঠিক, কে ভুল পক্ষে-বিপক্ষে এই যুক্তি দিতে গেলে কেবল সমস্যাই বাড়বে, বাস্তবতা মোকাবিলা করা যাবে না। বাস্তবতা হলো বর্তমানে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৫ লাখ ৯০ হাজার। গত ৬ মে এ কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।
বর্তমানে দেশে সরকারি চাকরিতে আবেদনের সর্বোচ্চ বয়স ৩০ বছর। অবসর গ্রহণের বয়স ৫৯ বছর। সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পাওয়ার জন্য একজন আবেদনকারীর বয়স সর্বোচ্চ কত হতে পারে, এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা-পর্যালোচনা চলছে। কিছুদিন আগে শিক্ষামন্ত্রী এই বয়সসীমা ৩৫ বছর করার সুপারিশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। এর সূত্র ধরে বিষয়টি নিয়ে অনেকে পক্ষে-বিপক্ষে মত প্রকাশ করছেন এবং সপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করছেন।
চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে যাদের বয়স একটু বেশি থাকে, তারাই আবেদনের বয়সসীমা বাড়ানোর আন্দোলন করে থাকেন। দুই দশক ধরে এ রকম আন্দোলন নিয়মিতভাবে সংবাদমাধ্যমে আসতে দেখা যায়। আন্দোলনকারীদের যুক্তি, বিভিন্ন দেশে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ থেকে ৫৯ বছর পর্যন্ত দেখা যায়। সুতরাং বাংলাদেশের গ্র্যাজুয়েটরা কেন এই সুযোগ পাবেন না? তাদের মতে, বয়স নয়, যোগ্যতাই হতে পারে একজন প্রার্থী বাছাইয়ের প্রধান বিবেচ্য। তা ছাড়া মানুষের গড় আয়ু বেড়ে যাওয়ার ব্যাপারটিও তারা উল্লেখ করেন।
কিন্তু অন্যদিকে আবার এ কথাও সত্য, প্রতি বছরই কয়েক লাখ নতুন শিক্ষার্থী চাকরিবাজারে প্রবেশ করেন। যাদের বয়স একটু বেশি প্রতি বছরই তাদের নতুন চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে লড়াই করতে হয়। তা ছাড়া যে কোনো চাকরিতেই ‘ফ্রেস গ্র্যাজুয়েট’ যারা তাদেরই প্রাধান্য দেয়া হয়। তার মানে দিন দিন পুরোনো চাকরিপ্রার্থীদের বাস্তবতা কঠিনই হয়ে পড়বে।
কিন্তু তারা আমাদেরই কারও ছেলেমেয়ে বা ভাইবোন। চাকরি না পেলে তারা যাবে কোথায়? অনেকে হতাশায় দিন পার করছেন। অনেকে চাকরির আশা ছেড়ে দিয়ে যা হোক একটা কিছু করার চেষ্টা করছেন। আরও একটি বড় সমস্যা এর সঙ্গে জড়িত, ভালো একটি চাকরি না পেয়ে তারা বিয়েও করতে পারছেন না। ভবিষ্যৎ নিয়ে সারাক্ষণই অনিশ্চিয়তায় ভুগছেন। এমতাবস্থায় নীতিনির্ধারকদের আরও সহনশীল ও বাস্তবানুগভাবে বিষয়টি চিন্তা করতে হবে। আইন দিয়ে না হয় এদের ঠেকিয়ে রাখা যাবে; কিন্তু জীবনের পথে যদি এরা বাধাগ্রস্ত হয় তার দায়িত্ব কে নেবে?
সরকারি চাকরির বয়স ৩৫ করা যেমন এক দিকে জটিল, না করাও আরেকদিকে জটিলতার সৃষ্টি করবে। চাকরিপ্রার্থীদের নানা দিকে দক্ষতা বাড়ানো ও শ্রমবাজার বড় করা ছাড়া এ থেকে উত্তরণের পথ নেই। বাস্তবতা মেনে নিয়ে সরকার এ ব্যাপারে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে