Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

সরকারি কর্মকর্তাদের হাত থেকে ঝাউবন রক্ষা করুন

Editorial  Desk

সম্পাদকীয় ডেস্ক

শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মুদ্রসৈকতের সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য বাতাসে ঝাউবনের দোলা। মনোরম দৃশ্যের জন্যই যে ঝাউবন প্রয়োজন তা নয়। সাগরপাড়ের মাটির ধরে রাখার জন্যও ঝাউবন প্রয়োজন। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের পুরোটাজুড়েই এক সময় ঝাউবনের সমাহার ছিল; কিন্তু আজ তার অনেকটাই বিলুপ্ত হয়ে যেতে বসেছে। বিশেষ করে কলাতলী থেকে ইনানী বিচ পর্যন্ত তেমন ঝাউবন আর চোখে পড়ে না। এর কিছু সমুদ্র ভেঙে নিয়ে বটে; কিন্তু বেশির ভাগটাই উজাড় হয়েছে মানুষের দৌরাত্ম্যে। অপরিকল্পিতভাবে সমুদ্রতীরে প্রচুর হোটেল-মোটেল বানানোর কারণেই এসব ঝাউবন বিলুপ্ত হয়েছে। এর মধ্যে খবর পাওয়া গেল, সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিলে ঝাউবন উজাড় করছেন একদল দুর্বৃত্ত ব্যবসায়ী।

গত বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেল, কক্সবাজারের টেকনাফে উপকূলের রক্ষক হিসেবে পরিচিত ঝাউবন উজাড় হচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে জোগসাজশে স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ীরা ঝাউগাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত এক সপ্তাহে এখান থেকে অন্তত এক হাজার গাছ কাটা হয়েছে। টেকনাফে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) প্রায় ১ হাজার ১০০ একরে গড়ে তুলেছে সাবরাং পর্যটন পার্ক। এই পার্কের ভেতর সমুদ্রসৈকত ধরে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত রয়েছে সাড়ে চার কিলোমিটার ইটের সড়ক।

এখানে দৃষ্টিনন্দন ঝাউবনের পাঁচ থেকে ছয়টি স্থান থেকে অবাধে গাছ কাটা হচ্ছে। বন উজাড় হওয়ায় সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে দ্রুত ভাঙছে রাস্তা। স্থানীয়দের অভিযোগ, মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে সৈকতের অনেক জায়গা থেকে ঝাউগাছ কেটে নেওয়া হয়েছে। এ সংখ্যা হাজারের কাছাকাছি হতে পারে। সাবরাং পর্যটন পার্কের অসাধু কর্মকর্তাসহ বন বিভাগের সহায়তায় স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ী চক্র এসব গাছ কাটছে।

সরেজমিন টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ সড়কে দেখা যায়, জিরো পয়েন্ট, কাটা বনিয়া, কচুবনিয়াসহ চার-পাঁচটি স্থানে হাজারের বেশি গাছ কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সারিবদ্ধ গাছের মাঝে মাঝে ফাঁকা। পড়ে রয়েছে কাটা গাছের অসংখ্য গোড়া। কিছু কিছু গোড়া বালু দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। অনেক গাছে রয়েছে করাত ও দা দিয়ে কাটার চিহ্ন। সাবরাংয়ের আছরবনিয়ায় মেসার্স মোস্তাক স-মিল অ্যান্ড স্টিল-১, সাবরাং বাজারের পশ্চিম পাশের মামুন স-মিল, সাবরাং রাস্তার মাথার মেসার্স এসএন টিম্বার অ্যান্ড স-মিলসহ একাধিক কাঠ কাটার মিলে ঝাউগাছের স্তূপ দেখা গেছে। অনেকের বাড়িতেও কাটা গাছ দেখতে পাওয়া যায়।

দেশে সরকার পরিবর্তন হয়েছে; কিন্তু সরকারি অনিয়ম-দুর্নীতি এখনো দূর হয়নি। যারা রক্ষক তারাই যদি ভক্ষক হয়ে যায় এটা শুধু দুঃখজনক নয়, আতঙ্কজনকও বটে। তাহলে কে রক্ষা করবে এসব ঝাউবন? আমরা চাই, সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষ এদিকে জরুরি নজর দিক। এভাবে ঝাউবন উজাড় হতে থাকলে উপকূলবাসী ভয়ংকর বিপদে পড়বে। ঘূর্ণিঝড় থেকে উপকূলবাসী আর রক্ষা পাবে না। সমুদ্রের পার ভেঙ্গে সমতলভূমিও এতে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে এ ধরনের অপরাধ বন্ধ করা হোক।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ