Views Bangladesh Logo

সচিবালয়ের উদ্বেগজনক পরিস্থিতি শান্ত করুন

ত সোমবার সন্ধ্যায় জারি করা ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা ক্রমেই অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। সচিবালয়ের কর্মচারীরা দপ্তর ছেড়ে চার দিন ধরে বিক্ষোভ করছেন এবং এ অধ্যাদেশ বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সচিবালয়ে আন্দোলনরত কর্মচারীরা। দাবি আদায়ে প্রয়োজনে এই আন্দোলন সারা দেশে সরকারি দপ্তরে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন তারা।

অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সরকারি কর্মচারীদের চারটি বিষয়কে অপরাধের আওতাভুক্ত করা হয়। সেগুলো হলো- সরকারি কর্মচারী যদি এমন কোনো কাজে লিপ্ত হন যা অনানুগত্যের শামিল বা যা অন্য যে কোনো সরকারি কর্মচারীর মধ্যে অনানুগত্য সৃষ্টি করে বা শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধার সৃষ্টি করে; অন্যান্য কর্মচারীর সঙ্গে সমবেতভাবে বা এককভাবে ছুটি ছাড়া বা কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া নিজ কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকেন বা বিরত থাকেন বা কর্তব্য সম্পাদনে ব্যর্থ হন; অন্য যে কোনো কর্মচারীকে তার কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকতে বা বিরত থাকতে বা তার কর্তব্য পালন না করার জন্য উসকানি দেন বা প্ররোচিত করেন এবং যে কোনো সরকারি কর্মচারীকে তার কর্মে উপস্থিত হতে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করেন তাহলে তিনি অসদাচরণের দায়ে দণ্ডিত হবেন।

সরকারি কর্মচারীরা আশঙ্কা করছেন, এ অধ্যাদেশের কারণে সরকারি কর্মচারীদের যে কোনো নিবর্তনমূলক সিদ্ধান্তও বিনা প্রতিবাদে মেনে নিতে হবে। পাশাপাশি তাদের মত প্রকাশের অধিকারও ক্ষুণ্ণ হতে পারে। কারণ কাজ বন্ধ করে সভা-সমাবেশ কিংবা কর্মবিরতির মতো প্রতিবাদ কর্মসূচি তারা আর করতে পারবেন না, যেটিকে তারা তাদের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার বলে তারা মনে করেন। আবার এটি প্রয়োগ করে যে কাউকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার মাধ্যমে ভিন্নমতে বিশ্বাসীদের জন্য চাকরি করা কঠিন হয়ে উঠতে পারে বলেও তারা অনেকে মনে করেন।

অন্তর্বর্তী সরকার নানারকম রাষ্ট্রীয় সংস্কারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন মহলের আপত্তিতে তা বাধাগ্রস্তও হচ্ছে। যে কোনো সংস্কারেই বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থের বিঘ্ন ঘটে বটে, তাহলে এত বাধা পার হয়ে সরকার সংস্কার করবে কী করে? দেশের আমলাতন্ত্রের দৌরাত্ম্য নিয়ে অনেক দিন ধরেই কথা হচ্ছে। আমলারা চাইলে রাষ্ট্র অচল করে দিতে পারে। তাই আমলাতন্ত্রের ক্ষমতা কমানো ও তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা জরুরি; কিন্তু এহেন পরিস্থিতিতে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ কী করে সম্ভব?

সংশিষ্টরা বলছেন, ‘কর্মচারীরা এখন বলপ্রয়োগ করে দাবি আদায়ের চেষ্টা করছে এটা যেমন ঠিক, তেমনি সরকার কেন সবার সঙ্গে আলোচনা না করে তড়িঘড়ি করে এ ধরনের একটি অধ্যাদেশ করলো সেই জবাবটাও সরকারকে দিতে হবে।

প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার যদি এখন সংস্কার না করে তাহলে কখন কীভাবে করবে? গতকাল মঙ্গলবার (২৭ মে) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ পর্যালোচনায় কমিটি হচ্ছে। কমিটিতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সাতজন সচিব ও আন্দোলনরত কর্মচারীদের তিনজন প্রতিনিধিকে রাখা হবে বলে জানা গেছে। ধারণা করা যাচ্ছে, বিক্ষোভের মুখে সরকার হয়তো এ অধ্যাদেশ পুনর্বিবেচনা করবে। জারিকৃত অধ্যাদেশের কতটুকু বহাল রাখতে পারবে তা ধারণা করা যাচ্ছে না। তবে, এতটুকু ধারণা করা যাচ্ছে এই পরিস্থিতিকে কেন্দ্রে করে দেশ আরও এক নতুন জটিলতার মধ্যে প্রবেশ করল। জাতীয় নাগরিক পার্টি এই ঘটনাকে এক প্রকার ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভি ক্যু’ (প্রশাসনিক ক্যু) হিসেবে দেখছে। এর পেছনে বড় রাজনৈতিক দলের ইন্ধন থাকতে পারে বলেও তারা সন্দেহ করছেন।

আমরা সত্যিই জানি না দেশে কী হতে যাচ্ছে; কিন্তু দেশের পরিস্থিতি যে উদ্বেগজনক এবং সচিবালয়ের বিক্ষোভ ঘিরে যে দেশের পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে তা স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে। সরকার ও প্রশাসনের মধ্যে বিভাজন রেখা খুবই স্পষ্ট হয়ে গেল। অথচ আমরা জানি সরকার মানেই প্রশাসন। তাহলে দেশ চালাবে কে, দেশের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত কার হাতে তা নিয়ে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে। ঘটনা যাই ঘটুক, বর্তমান পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য সরকারকে সুবিবেচনার সঙ্গে কাজ করতে হবে। দেশের জনগণ বর্তমান পরিস্থিতিতে খুবই উদ্বিগ্নতার মধ্যে আছে। এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সরকারকেই দূর করতে হবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ