Views Bangladesh Logo

বাংলাদেশ কী ভারতকে হারাতে পারবে?

ইসিসির যেকোনো টুর্নামেন্টে ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচ মানেই বাড়তি উত্তাপ-উত্তেজনার। এই দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলের লড়াইয়ের মতোই বাংলাদেশ-ভারত দ্বৈরথও কালের পরিক্রমায় বিশেষ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। ২০১৫ সালে মিরপুরের মাঠে বাংলাদেশের কাছে ভারত তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে হেরে যাওয়ার পর থেকেই প্রতিবেশী দুই দেশের ক্রিকেট লড়াইয়ে যুদ্ধংদেহী মনোভাবই দেখা যায়। কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলে না। ম্যাচে উত্তেজনা-উত্তাপের বারুদ ছড়ায়।

বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) আবারো এই দুই দল চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মঞ্চে মুখোমুখি হচ্ছে। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টায় বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচটি শুরু হবে। এ ম্যাচ দিয়েই দুদলের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মিশন শুরু। আশা করা হচ্ছে, মরুর বুকে দুদলের ম্যাচটি অত্যন্ত উপভোগ্য হবে এবং প্রতিদ্বন্দ্বীতার আলাদা ঝাঁঝ ছড়াবে।
প্রতিপক্ষ হিসেবে ভারত খুবই শক্তিশালী। বাংলাদেশের তুলনায় শক্তি ও সামর্থ্যরে দিক থেকে দলটি অনেক এগিয়ে। এই দলটি টুর্নামেন্টে ফেভারিটদের মধ্যে অনতম। এমন একটি দলের বিপক্ষে যে শুরুতেই কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে, সেটি আগে থেকেই জানা নাজমুল হোসেন শান্ত বাহিনীর। ভারতের বিপক্ষে খুব একটা ওয়ানডে ক্রিকেট খেলা হয় না বাংলাদেশের। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর গত আট বছরে সব প্রতিযোগিতা মিলে মাত্র ৮টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষের বিপক্ষে বেশি ম্যাচ না খেলার যেমন ঘাটতি আছে, একই ভাবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতিটাও হয়নি বাংলাদেশের। শুধু বিপিএল খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে সরাসরি টুর্নামেন্টে খেলছেন শান্ত, মিরাজরা। অবশ্য পাকিস্তান শাহিনসের (‘এ’ দল) বিপক্ষে একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে তারা। যেখানে দল আত্মবিশ্বাসী হতে পারেনি। বরং ব্যাটিং বিভাগকে নিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ। দুবাইয়ের মাঠে পাকিস্তানি দলটির বিপক্ষে ৩৮.২ ওভারেই অলআউট হয় শান্তরা। দলের কোনো ব্যাটারই ফিফটির ইনিংস খেলতে পারেননি। ফলে অনেকটা অপ্রস্তুত হয়েই চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জেতার মিশনে নামছে বাংলাদেশ। যেখানে ভারত ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের খেলার তরতাজা সুখস্মৃতি নিয়ে লড়াইয়ে নামবে। প্রস্তুতির বড় ঘাটতি নিয়ে টুর্নামেন্টে খেলা বাংলাদেশ কী প্রথম ম্যাচে ভারতকে হারাতে পারবে?

চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতোই দল ভারত। এই দলটিকে হারাতে হলে অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখাতে হবে। তবে ভারত ম্যাচে বেশ কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে বাংলাদেশের। প্রথমত, বিধ্বংসী পেসার জাসপ্রিত বুমরাহকে ছাড়া খেলবে রোহিত শর্মার দল। দলটির সঙ্গে পেস বোলিংয়ের তুলনা করা হলে তাসকিন, মোস্তাফিজ, নাহিদ রানারা কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই। দুবাইয়ের মতো কন্ডিশনে প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের জন্য আতঙ্কের বড় কারণ হতে পারেন তারা। এরপর বলা হতে পারে, ভারত তো স্পিনে বলিয়ান। বাংলাদেশের স্পিনও ফেলে দেওয়ার মতো নয়। বোলিংয়ে দারুণ বৈচিত্র আছে। রিশাদ, মিরাজ, নাসুমরা জলে উঠতে পারেন যেকোনো সময়।

অন্যদিকে, ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ যেমন বিশ্বনন্দিত, তেমননি অভিজ্ঞতায়ও সমৃদ্ধ। তাদের ব্যাটিং গভীরতা অনেক। বিপরীতে বাংলাদেশও নিজেদের দিনে ব্যাটিংয়ে সেরাটা খেলতে পারলে ম্যাচের ফল পক্ষে আসতে পারে। আরেকটি বিষয় হলো- কন্ডিশন। গত অক্টোবরে শারজাহতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। যদিও হারের অভিজ্ঞতা তাদের। তবে আমিরাতের কন্ডিশন বাংলাদেশের কাছে বেশ ভালো ভাবেই পরিচিত হয়ে গেছে। অপরদিকে, ২০১৮ সালে এশিয়া কাপে দুবাইয়ের মাঠে খেলার পর আমিরাতে আর কোনো ওয়ানডে ম্যাচ খেলেনি ভারত। সাড়ে ৬ বছর পর আমিরাতের মাঠে খেলতে নেমে কিছুটা হলেও অসুবিধায় পড়তে হবে তাদের। অবশ্য যেকোনো টুর্নামেন্টে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার অভ্যস্ততা কোহলিদের আছে।

এদিকে, সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচের মুখোমুখিতেও ভারতের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ, এশিয়া কাপ ও দ্বিপক্ষীয় সিরিজ মিলে শেষ পাঁচ ম্যাচের মধ্যে বাংলাদেশের জয় ৩টি এবং ভারতের জয় ২টি। ২০২২ সালে তিন ম্যাচের হোম সিরিজে ভারতকে ২-১ ব্যবধানে হারায় বাংলাদেশ। এরপর ২০২৩ সালে শ্রীলংকার মাঠে এশিয়া কাপের ম্যাচে ভারতকে ৬ রানে হারানো সুখস্মৃতি আছে। ১৯৯৮ সালের অক্টোরব থেকে এ পর্যন্ত সব প্রতিযোগিতা মিলে বাংলাদেশ ও ভারত ৪১টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে। এর মধ্যে ৮টি ম্যাচে জিতেছে বাংলাদেশ। ৩২টি ম্যাচে জয় ভারতের। অপর ম্যাচটির ফল হয়নি। তবে আইসিসি টুর্নামেন্টে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের রেকর্ড মাত্র একটি। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপের ১৭তম ম্যাচে ক্রিনিদাদের মাঠে ভারতকে ৫ উইকেটে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ওই অবিস্মরণীয় জয়ী দলের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি দলে এবারও আছেন মুশফিকুর রহিম। এছাড়া দ্বিপক্ষীয় সিরিজ জয়ের পাশাপাশি ২০১২ সালের এশিয়া কাপেও ভারতকে হারানো সাফল্য রয়েছে বাংলাদেশের।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ