Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে সমর্থন করে কানাডা

Nahida Sobhan

নাহিদা সোবহান

সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশের জনগণের প্রতি কানাডার স্থায়ী সমর্থন এবং গণতন্ত্র ও সামাজিক ন্যায়বিচারে তাদের আকাঙ্ক্ষার কথা তুলে ধরেছেন কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার নাহিদা সোবহান। ভিউজ বাংলাদেশ-এর সিনিয়র রিপোর্টার মো. মিজানুর রহমান হিমাদ্রিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, এই সমর্থন দীর্ঘদিনের সংহতির ঐতিহ্য থেকে উদ্ভূত, যা একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে কানাডার উল্লেখযোগ্য সমর্থন দিয়ে শুরু হয়েছে।

ভিউজ বাংলাদেশ: শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই ছাত্রচালিত বিপ্লবকে কীভাবে দেখছে কানাডা সরকার এবং নাগরিকরা?

নাহিদা সোবহান: ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন দিয়ে আসছে কানাডা। ছাত্র-নেতৃত্বাধীন সাম্প্রতিক আন্দোলন এবং নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও স্বাগত জানিয়ে এটিকে শান্তি ও গণতান্ত্রিক পুনর্নবীকরণের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসাবে দেখছে দেশটি। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনের সাইডলাইনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর বৈঠকেও যুব উন্নয়ন, প্রাতিষ্ঠানিক পুনর্গঠন এবং গণতান্ত্রিক শাসন নিয়ে ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে।

ভিউজ বাংলাদেশ:
গত বছর বাংলাদেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) কমেছে, যা ২০২২ সালে ছিল ৩৫০ কোটি ডলার। আপনি কি বাংলাদেশে কানাডার বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রত্যাশা করেন, বিশেষ করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে? বাংলাদেশের বর্তমান বিনিয়োগের পরিবেশকেই বা কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

নাহিদা সোবহান: জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জের মাঝেই বাংলাদেশের জ্বালানি রূপান্তরে সহায়তার আগ্রহ দেখিয়েছে ব্রুকফিল্ডসহ কানাডার বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। দেশটির ইন্দো-প্যাসিফিক ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভের সাম্প্রতিক সফরও ব্যবসায়িক সম্পর্ক জোরদারে তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে জোর দিয়েছে। এই অংশীদারত্বকে এগিয়ে নিতে ফরেন ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন অ্যান্ড প্রোটেকশন এগ্রিমেন্ট (এফআইপিএ) গুরুত্বপূর্ণ। মুদ্রা ও মূলধন স্থিতিশীলতা, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বকেয়া মোকাবেলা, ব্যাংকিং আইনের আরও স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে এবং কানাডিয়ান বিনিয়োগ বাড়াতে কাঠামোগত সংস্কারে মনোনিবেশ করছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারও।

ভিউজ বাংলাদেশ: বাংলাদেশ-কানাডা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ এখন প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার। আগামী পাঁচ বছরে এই বাণিজ্য সম্প্রসারণে আমাদের লক্ষ্য কী?

নাহিদা সোবহান: কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার, প্রচলিত তৈরি পোশাক খাতের বাইরে রপ্তানি বহুমুখীকরণ এবং টেকসই প্রবৃদ্ধিতে নতুন সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা তৈরিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বাংলাদেশ। বাংলাদেশি পণ্যের প্রচার ও বাণিজ্য বৈচিত্র্য সম্প্রসারণে হাইকমিশন বিজনেস-টু-বিজনেস (বিটুবি) বৈঠককে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। কানাডা-বাংলাদেশ জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সুপারিশ নিয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে উভয় দেশই, যেন অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর নতুন সুযোগগুলো চিহ্নিত এবং তা কাজে লাগানো যায়।

ভিউজ বাংলাদেশ: কানাডায় এখন কতোজন বাংলাদেশি বাস করছেন এবং তাদের অবদানকে সরকার কীভাবে মূল্যায়ন করে? দেশটির অভিবাসননীতির রূপরেখা দিতে পারেন?

নাহিদা সোবহান: এক লাখেরও বেশি বাংলাদেশি কানাডায় বসবাস করেন, যারা সাংস্কৃতিক ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের পাশাপশি স্বাস্থ্যসেবা, প্রকৌশল, একাডেমিক এবং ব্যবসা ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার তরুণ ও প্রবাসীদের সম্পৃক্ততায় আরও সহায়তার লক্ষ্যে কানাডাকে অভিবাসন এবং শিক্ষার্থী ভিসা প্রক্রিয়া সহজতর করার পরামর্শ দিচ্ছে।

ভিউজ বাংলাদেশ: কানাডা কি বাংলাদেশ থেকে আরও দক্ষ পেশাজীবী, বিশেষ করে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও নার্স নিয়োগকে বিবেচনা করতে পারে?

নাহিদা সোবহান: বাংলাদেশের দক্ষ পেশাজীবীদের কাছ থেকে কানাডা লাভবান হবে, বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবায়। হাইকমিশনার হওয়ার পর থেকে আমি এই সুযোগগুলো প্রচারে মনোনিবেশ করেছি। বাংলাদেশি চিকিৎসকদের কানাডায় কাজ করতে নিয়ন্ত্রক প্রয়োজনীয়তা পূরণে অবশ্যই কানাডিয়ান লাইসেন্সিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

ভিউজ বাংলাদেশ: জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো। জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে বাংলাদেশ ও কানাডা কীভাবে সহযোগিতা করছে?

নাহিদা সোবহান: জলবায়ুর স্থিতিস্থাপকতায় যৌথ প্রকল্প, সক্ষমতা বাড়ানো ও জ্ঞান বিনিময়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশ ও কানাডা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কানাডিয়ান দক্ষতা অর্জনে মনোনিবেশ করে পরিবেশগত নীতি এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বকে অগ্রাধিকার দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেন, উন্নত দেশগুলোর আর্থিক সহায়তা জলবায়ু ন্যায়বিচার এবং বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত না করে স্থিতিস্থাপকতা কৌশল অনুসরণে সক্ষম করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভিউজ বাংলাদেশ: গত ২০ বছরে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে। কানাডা কি এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে সহজ ঋণ এবং সহায়তা দিতে পারে?

নাহিদা সোবহান: জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে আরও শক্তিশালী এবং জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান তৈরির লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক গঠন এবং শাসন সংস্কারই নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের মূল অগ্রাধিকার। সক্ষমতা বৃদ্ধি কর্মসূচির মাধ্যমে এই প্রচেষ্টাকে সমর্থনে আগ্রহ প্রকাশ করেছে কানাডাও।

ভিউজ বাংলাদেশ : বাংলাদেশের রপ্তানি তৈরি পোশাকের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। কানাডা কি বাংলাদেশের রপ্তানি বহুমুখীকরণে সহায়তা করতে পারে?

নাহিদা সোবহান: তৈরি পোশাকের বাইরেও কানাডায় বাংলাদেশের রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে সেবা খাতে বাণিজ্য সম্প্রসারণে কানাডার প্রবল আগ্রহ আমি লক্ষ্য করেছি। এ সুযোগকে কাজে লাগাতে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের অবশ্যই কানাডার চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে হবে।

ভিউজ বাংলাদেশ: ধন্যবাদ।

নাহিদা সোবহান: আপনাকেও ধন্যবাদ।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ