‘হার্ট অ্যাটাক’ আতঙ্কে বগুড়া জেলা কারাগার
বগুড়া জেলা কারাগারে এক মাসে আওয়ামী লীগের চার নেতার মৃত্যুর পর এবার অসুস্থ হলেন সদ্য গ্রেপ্তার হওয়া বগুড়া-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু। মৃত চারজনের মতোই তিনিও ‘হার্ট অ্যাটাকে’ আক্রান্ত বলে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।
রিপুর মতোই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন ওই চার নেতাও।
একই কারাগারে একের পর এক আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু ও একই ধরনের অসুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন ও শঙ্কা তৈরি হয়েছে আত্মগোপনে ও কারাগারের বাইরে থাকা নেতাকর্মীদের মাঝে।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাগেবুল আহসান রিপু। কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই ঢাকায় নেয়া হয় বলে জানিয়েছেন জেল সুপার ফারুক আহমেদ।
গত ১৮ ডিসেম্বর রাত একটার দিকে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে গ্রেপ্তার হন আওয়ামী লীগ নেতা রিপু।
রিপুর শ্যালক শফিক খান বলেন, ‘বছর দশেক আগে রিপুর হার্টের সমস্যা হলেও চিকিৎসায় সুস্থই ছিলেন তিনি। গ্রেপ্তারের পর আবারও শুনলাম, তার হার্টের সমস্যা হয়েছে। তবে এখনো বিস্তারিত জানি না’।
‘জেল সুপার বলছেন, কারাগারে বুকে ব্যথা অনুভব করছিলেন রিপু’- বলেন শফিক।
এর আগের মৃত চার নেতা হলেন গাবতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলার দুর্গাহাটা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন মিঠু, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বগুড়া পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শাহাদাৎ আলম ঝুনু, শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ এবং শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম।
কারা কর্তৃপক্ষ বলছেন, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা থেকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন আওয়ামী লীগের ওই নেতারা। পরে অসুস্থ হয়ে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তারা।
আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, কারাগারে আসলে কি হচ্ছে, জানতে পারছেন না তারা। এভাবে নেতাকর্মীদের মৃত্যু ভীতি তৈরি করছে। তারা আশঙ্কা করছেন, প্রতিটি মৃত্যুই অস্বাভাবিক কি না। বগুড়া কারাগার বলতেই তারা এখন ‘হার্ট অ্যাটাক আতঙ্কে’ ভুগছেন।
তারা জানান, সম্প্রতি কারাগারটিতে থাকা যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে জানতে চাইলে কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারেননি অনেকে। আশপাশে জেল পুলিশ থাকায় কিছু একটা গোপন করেন সবাই।
‘তবে কারাগারে আওয়ামী লীগের কেউই ভালো নেই’- বলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতাকর্মীরা।
কারা হেফাজতে থাকা অবস্থায় সর্বশেষ ৯ ডিসেম্বর সকালে মারা যান ৬৫ বছরের আব্দুল মতিন মিঠু। ৩ নভেম্বর একটি হত্যা ও বিস্ফোরক মামলায় মিঠুকে গ্রেপ্তার করে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।
সে সময় জেলার সৈয়দ শাহ শরীফ জানিয়েছিলেন, ৮ ডিসেম্বর গভীর রাতে অসুস্থ হয়ে পড়েন মিঠু। পরে শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে মিঠুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
২৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় মারা যান অধ্যক্ষ শাহাদাৎ আলম ঝুনু। বেলা পৌনে ১২টার দিকে কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে শজিমেক হাসপাতালে নেয়া হয়। বিকেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেয়ার পথে সিরাজগঞ্জে তার মৃত্যু হয়। ২৪ আগস্ট থেকে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন ঝুনু।
২৩ নভেম্বর জেলা কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আব্দুল লতিফকে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৫ নভেম্বর সকালে তার মৃত্যু হয়। ১১ নভেম্বর একই কারাগারে অসুস্থ হয়ে মারা যান শহিদুল ইসলাম।
জেল সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, মৃত্যুর ওপর কারও হাত নেই। কারাগারে শুধু আওয়ামী লীগের চার নেতারই মৃত্যু হয়নি। আরও অনেকে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। আওয়ামী লীগের সবাই হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। জেল কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের দায়িত্বে অবহেলা নেই।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে