আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (বাংলাদেশ)
বিচারকশূন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জমছে মামলা
কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঘটা হত্যা, গণহত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্তদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এর পরিপ্রেক্ষিতে একের পর এক মামলা হচ্ছে ট্রাইব্যুনালে। তবে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজ এখন সম্পূর্ণ বন্ধ। বর্তমানে বিচারকশূন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালে থাকা সর্বশেষ সদস্য বিচারক এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়াকে তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৭ আগস্ট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ বিচারকের অব্যাহতির পর ট্রাইব্যুনালে এখন আর কোনো বিচারক নেই। এর আগে চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদারকে নতুন চেয়ারম্যান করে পুনর্গঠন করা হয়েছিল মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
অন্যদিকে নতুন সদস্য করা হয়েছিল অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) থাকা ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়াকে। আর অপর সদস্য বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমকে তার পদে বহাল রাখা হয়। এর মধ্যে গত জুনে অবসরে যান চেয়ারম্যান বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার। চলতি মাসে হাইকোর্টে ফেরত আনা হয় বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমকে।
অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল গত ১৪ আগস্ট বলেছেন, ‘জুলাই গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করা হবে। গণহত্যা ও গুলি বর্ষণের ঘটনায় বিচারের জন্য ইতোমধ্যে কিছু মামলা হয়েছে। আমরা নিজেরা, রাজপথে থাকা বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন, জনগণের বিভিন্ন গোষ্ঠী দাবি করেছেন যে, এটাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে বিচার করার সুযোগ আছে কি না। আমরা সেটা খতিয়ে দেখেছি।
১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন আছে, সেটা পরে ২০০৯ ও ২০১৩ সালে সংশোধনী হয়েছে। সেই আইনে আমরা জুলাই গণহত্যা; আগস্টের প্রথম পাঁচ দিনের গণহত্যাও বোঝাচ্ছি। এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য কাজ করছি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একটি ইনভেস্টিগেশন টিম আছে, প্রসিকিউশন টিম আছে। এগুলোকে আমরা রি-অর্গানাইজড করার চেষ্টা করছি, আদালতটা একটু পরে করব।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকালে হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এরই মধ্যে সাতটি অভিযোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতের কর্মী হত্যা এবং বাকিগুলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে হত্যার শিকার ভিকটিম পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে গণহত্যার ঘটনায় সর্বশেষ গত ২৯ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৫২ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
এই গণহত্যাকাণ্ডে উসকানি দেয়ায় ৩২ জন সিনিয়র সাংবাদিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে। রাজধানীর ধানমন্ডিতে আইসিটির তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে আন্দোলনে নিহত নাসিফ হাসান রিয়াদের বাবা মো. গোলাম রাজ্জাকের পক্ষে এ অভিযোগ করেন আইনজীবী গাজী এইচ তামিম। ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর ২০১২ সালের ২২ মার্চ আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়, যা ট্রাইব্যুনাল-২ নামে পরিচিতি পায়।
এরপর ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দুই ট্রাইব্যুনালকে একীভূত করে একটি ট্রাইব্যুনাল করা হয়। এখন পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে ৪৪টি এবং ট্রাইব্যুনাল-২ থেকে ১১টি মামলার রায় এসেছে। এসব মামলায় দণ্ডিত আসামির সংখ্যা ১৪৯। বর্তমানে প্রাক-বিচার, বিচার ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন পর্যায়ে ট্রাইব্যুনালে ৩০টি মামলা বিচারাধীন। রাষ্ট্রপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, দণ্ডিত ১৪৯ আসামির মধ্যে ১০৬ জন মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি। তাদের মধ্যে ৫০ জন এখনো পলাতক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে