সম্পাদকীয় মতামত
সবার আগে মানুষ হওয়া জরুরি
যে কোনো রাষ্ট্রীয় ইস্যুতে জনগণকে জিম্মি করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ-আন্দোলন ঐতিহাসিক ব্যাপার। জিম্মি না করে এখানে সম্পৃক্ত শব্দটাই সমীচীন। কিন্তু দিন দিন জনগণ যেভাবে শিক্ষার্থীদের হাতের পুতুলে শিকার হচ্ছে তাকে জিম্মি বলাই শ্রেয়। দেশে নানা শ্রেণিপেশার মানুষ কম নেই, রাষ্ট্রীয় ইস্যুরও অভাব নেই; যখন যার যে দাবি-দাওয়া তখন তা নিয়ে রাস্তায় নামে আন্দোলনে; তাতে জনগণের ভোগান্তি কোন স্তরে পৌঁছায় তা ভুক্তভোগীমাত্রই জানেন। তাই এর মধ্যে সংঘর্ষে জড়ানোয় শিক্ষার্থীদের মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।
পুলিশের তল্লাশি টহলে গাফিলতি কেন?
এমনিতেই দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক, নানা স্থানে চুরি-ডাকাতি ছিনতাই বাড়ছে। এর মধ্যে জানা গেল, পুলিশের তল্লাশি, টহল কাগজপত্রেই; বাস্তবে নেই তার যথাযথ প্রয়োগ। গতকাল রোববার (২৬ জানুয়ারি) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, রাতে ঢাকার রাস্তায় পুলিশ যেন অমাবস্যার চাঁদ। তাদের তল্লাশিচৌকি ও টহল দল কাগজ-কলমে রয়েছে, তবে সড়কে দেখা যায় খুবই কম। ওদিকে ছিনতাইয়ের আতঙ্কে বাস করছেন নগরবাসী। এমন খবর দেশবাসীর জন্য উদ্বেগজনক।
দাগি অপরাধীরা প্রকাশ্যে ঘোরাঘুরি করার সাহস পায় কী করে?
গণঅভ্যুত্থানের পর আশা করা হয়েছিল সমাজে অপরাধ কমবে; কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, অপরাধ তো কমেইনি বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেড়েছে। দাগি অপরাধী হিসেবে যারা চিহ্নিত, তারা কেবল প্রকাশ্যে ঘুরছে না, তারা খুনাখুনিতেও জড়াচ্ছে। তাদের নামে অসংখ্য মামলা থাকা সত্ত্বেও পুলিশ তাদের কিছু বলছে না এবং অনেক আসামি জেলখানা থেকে ছাড়া পেয়ে নতুন নতুন অপরাধে জড়াচ্ছে।
বৈরী আবহাওয়ায় শিশুদের বিঘ্নিত পড়াশোনা নির্বিঘ্ন করুন
বিশ্বজুড়ে জলবায়ু সংকটের কারণে যতগুলো দেশে সবচেয়ে মারাত্মক বৈরী প্রভাব পড়ছে তার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে শুধু কৃষিতে, স্বাস্থ্যে, বাসস্থানে নয়, চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার প্রভাবে আমাদের দেশের শিশুদের পড়াশোনারও চরম ক্ষতি হচ্ছে। এই ক্ষতি আরও অনেক দেশের শিশুদেরই হচ্ছে, তবে আমাদের দেশের শিশুদেরই সবচেয়ে বেশি। চরম আবহাওয়ায় ২০২৪ সালে ২৪ কোটি শিশুর পড়াশোনা বিঘ্নিত হয়েছে। আর ক্ষতির শিকার হওয়া এ শিশুদের সাড়ে ৩ কোটিই বাংলাদেশের।
ফর্মুলা দুধের আধিপত্য বন্ধ করুন
নবজাতক শিশুর শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে মায়ের দুধের কোনো বিকল্প নেই। ছয় মাস বয়স পর্যন্ত কেবল বুকের দুধ খাওয়ালে শিশুর প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত করা যায় এবং কমে মৃত্যুঝুঁকি; কিন্তু দেশে জন্মের প্রথম ছয় মাসে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর হার বাড়ছে না। বরং শহর এলাকায় এ হার দিন দিন কমে যাচ্ছে। তা ছাড়া বুকের দুধ খাওয়াতে চান এমন মায়েরা পাচ্ছেন না সঠিক দিক-নির্দেশনা। অন্যদিকে ফর্মুলা দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ আসে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের কাছ থেকে। ফলে দেশজুড়ে বাড়ছে নবজাতক শিশুর স্বাস্থ্য ও মৃত্যুঝুঁকি, যা দেশের জন্য অশনিসংকেত।
চাল নিয়ে চালবাজি বন্ধ হোক
ভাত বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য। প্রতিদিন তিনবেলা তারা ভাত খায়। ভাত বাঙালির জন্য এমনই বিশেষ খাদ্য যে, তারা যদি একবেলা পোলাও খায়, পরের বেলা ভাত চায়; কিন্তু দিন দিন চালের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে ভাত খাওয়া সামনে অসম্ভব হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে। সম্প্রতি আমরা জানতে পারলাম, আমনের ভরা মৌসুমেও চালের দাম বেড়েই চলেছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত এক মাস ধরে প্রায় সব ধরনের চালের মূল্যই বেড়েছে। মাঝারি মানের চালের মূল্য এখন ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি, গত বছরও যার মূল্য ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। আর একটু ভালো চাল হিসেবে যেগুলো পরিচিত, মিনিকেট ও নাজিরশাইলের মূল্য ৭০ থেকে ৮৪ টাকা কেজি, ১ বছর আগে যেগুলোর মূল্য ছিল ৬০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি।
গুমের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের অপরাধ-অত্যাচারের ঘটনা যতই সামনে আসছে ততই মনে হচ্ছে বাংলাদেশ এক আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগ পার করেছে। ঘটনাগুলো এমন শিউরে ওঠার মতো সত্যিই অবিশ্বাস্য মনে হয়, কোনো সরকার তার দেশের সাধারণ মানুষের ওপর এমন বর্বরোচিত অত্যাচার চালাতে পারে!
শিক্ষার্থীদের হাতে দ্রুত নতুন বই তুলে দিন
স্মরণকালের ইতিহাসে বাংলাদেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জীবনে এমন বিব্রতকর ঘটনা আর ঘটেনি। গত দেড় দশক ধরে জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকেই হাতে নতুন বই পেয়ে অভ্যস্ত শিক্ষার্থীরা। নতুন বই হাতে নিয়ে তাদের শুরু হয় বই উৎসব। কিন্তু এবার জানুয়ারি মাস শেষ হয়ে যেতে চলল অথচ এখনো তারা সব বই হাতে পায়নি। অনেকে দু-তিনটি বই পেলেও সব বই কবে নাগাদ হাতে পাবে তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। গতকাল সোমবার (২০ জানুয়ারি) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, শিক্ষা বিভাগ থেকে বলা হচ্ছে, সব বই পেতে ফেব্রুয়ারি লেগে যাবে। তবে যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে, তাতে প্রাথমিকের সব বই হয়তো ফেব্রুয়ারিতে দেয়া সম্ভব হতে পারে। কিন্তু মাধ্যমিকের সব বই পেতে মার্চ মাস লেগে যেতে পারে বলে মনে করছেন ছাপা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
স্থবির সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে সচল করুন
১৯৬৮ সালে ফ্রান্সের ছাত্র-আন্দোলনের পর দেখা গিয়েছিল সে দেশের সংস্কৃতিতে একটা গণজোয়ার বয়ে যাচ্ছে। বই বিক্রি বেড়েছিল ৪০ গুণ। গান-নাটক-সিনেমায় সাংস্কৃতিক সর্ব অঙ্গনে ছাত্র-আন্দোলনের প্রভাব পড়ছে দারুণভাবে। কিন্তু আমাদের দেশে সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দেখা যাচ্ছে বিপরীত চিত্র। প্রকাশকরা জানাচ্ছেন বই বিক্রি অনেক কমে গেছে। আর দেশের কোথাও যে তেমন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নেই তা তো দেখাই যাচ্ছে। শীতের মৌসুমে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে নানা ধরনের ঐতিহ্যবাহী দেশীয় সাংস্কৃতিক উৎসব লেগেই থাকে কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম। সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনগুলো পতিত হয়েছে এক প্রকার ঝিমিয়ে-পড়া দশায়।
পুলিশ যেন জনবান্ধব হয়
গত ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পুলিশ সংস্কার কমিশন তাদের সংস্কার প্রস্তাবগুলো জমা দিয়েছে। বলপ্রয়োগ, আটক, গ্রেপ্তার, তল্লাশি, জিজ্ঞাসাবাদ, মানবাধিকার, প্রভাবমুক্ত ও জবাবদিহিমূলক বাহিনী গঠন, থানায় জিডি রেকর্ড, মামলা রুজু, তদন্ত ও ভেরিফিকেশনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সুপারিশ করেছে পুলিশ সংস্কার কমিশন। বিশেষ করে বেআইনি সমাবেশ ও শোভাযাত্রা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের শক্তি প্রয়োগের সীমা নির্ধারণ, পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার ও আসামিকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে কিছু নির্দেশনা চেয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। তাছাড়া বাহিনী সংস্কারের জন্য ২২টি আইনের সংশোধন ও পরিমার্জন চেয়েছে কমিশন।