সম্পাদকীয় মতামত
শিক্ষার্থীদের হাতে দ্রুত নতুন বই তুলে দিন
স্মরণকালের ইতিহাসে বাংলাদেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জীবনে এমন বিব্রতকর ঘটনা আর ঘটেনি। গত দেড় দশক ধরে জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকেই হাতে নতুন বই পেয়ে অভ্যস্ত শিক্ষার্থীরা। নতুন বই হাতে নিয়ে তাদের শুরু হয় বই উৎসব। কিন্তু এবার জানুয়ারি মাস শেষ হয়ে যেতে চলল অথচ এখনো তারা সব বই হাতে পায়নি। অনেকে দু-তিনটি বই পেলেও সব বই কবে নাগাদ হাতে পাবে তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। গতকাল সোমবার (২০ জানুয়ারি) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, শিক্ষা বিভাগ থেকে বলা হচ্ছে, সব বই পেতে ফেব্রুয়ারি লেগে যাবে। তবে যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে, তাতে প্রাথমিকের সব বই হয়তো ফেব্রুয়ারিতে দেয়া সম্ভব হতে পারে। কিন্তু মাধ্যমিকের সব বই পেতে মার্চ মাস লেগে যেতে পারে বলে মনে করছেন ছাপা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
স্থবির সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে সচল করুন
১৯৬৮ সালে ফ্রান্সের ছাত্র-আন্দোলনের পর দেখা গিয়েছিল সে দেশের সংস্কৃতিতে একটা গণজোয়ার বয়ে যাচ্ছে। বই বিক্রি বেড়েছিল ৪০ গুণ। গান-নাটক-সিনেমায় সাংস্কৃতিক সর্ব অঙ্গনে ছাত্র-আন্দোলনের প্রভাব পড়ছে দারুণভাবে। কিন্তু আমাদের দেশে সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দেখা যাচ্ছে বিপরীত চিত্র। প্রকাশকরা জানাচ্ছেন বই বিক্রি অনেক কমে গেছে। আর দেশের কোথাও যে তেমন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নেই তা তো দেখাই যাচ্ছে। শীতের মৌসুমে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে নানা ধরনের ঐতিহ্যবাহী দেশীয় সাংস্কৃতিক উৎসব লেগেই থাকে কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম। সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনগুলো পতিত হয়েছে এক প্রকার ঝিমিয়ে-পড়া দশায়।
পুলিশ যেন জনবান্ধব হয়
গত ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পুলিশ সংস্কার কমিশন তাদের সংস্কার প্রস্তাবগুলো জমা দিয়েছে। বলপ্রয়োগ, আটক, গ্রেপ্তার, তল্লাশি, জিজ্ঞাসাবাদ, মানবাধিকার, প্রভাবমুক্ত ও জবাবদিহিমূলক বাহিনী গঠন, থানায় জিডি রেকর্ড, মামলা রুজু, তদন্ত ও ভেরিফিকেশনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সুপারিশ করেছে পুলিশ সংস্কার কমিশন। বিশেষ করে বেআইনি সমাবেশ ও শোভাযাত্রা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের শক্তি প্রয়োগের সীমা নির্ধারণ, পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার ও আসামিকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে কিছু নির্দেশনা চেয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। তাছাড়া বাহিনী সংস্কারের জন্য ২২টি আইনের সংশোধন ও পরিমার্জন চেয়েছে কমিশন।
বনপ্রহরীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে বনও নিরাপদ থাকবে না
সোনার গহনার বাক্স নিয়ে একটা শোলক প্রচলিত আছে গ্রামবাংলায়। কে বেশি দামি- সোনার গহনা না কি গহনা রাখার সিন্দুক? কথাটা এ জন্য বলা হয় যে, সিন্দুক যদি সুরক্ষিত না হয়, তাহলে গহনা চুরি যাওয়ার ভয় থাকে। তেমনি একটি দেশে বন যেমন সোনার গহনার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সেই বন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বনপ্রহরীও গহনা রাখার সিন্দুকের মতোই মূল্যবান। চোর-ডাকাতের হাত থেকে জীবন বাজি রেখে বনকে রক্ষা করেন মূলত বনপ্রহরীরা; কিন্তু আত্মরক্ষার কোনো হাতিয়ার না দিয়ে বনপ্রহরীদের যদি বনে পাঠানো হয়, তার মানে হাত-পা বেঁধে কাউকে কুমির-হাঙ্গরভর্তি নদী-সমুদ্রে ফেলা।
‘পাতা ছেঁড়া নিষেধ’ গ্রাফিতি ঘিরে কেন এত অরাজকতা?
মাঝে মাঝে মনে হয় দেশটি যেন মগের মল্লুক হয়ে গেছে। কখন যে কে কেন কী করে কিছুই বুঝে আসে না। যেন যা খুশি তাই করার দেশ। যে পাতায় লেখা হয়েছে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যর বাণী, সে পাতা নিয়েই হট্টগোল, মারামারিতে ৩৩ জন আহত। এ রকম ঘটনা সম্ভবত বাংলাদেশেই সম্ভব। কারণ এ জাতি আজ কাণ্ডজ্ঞান হারিয়েছে, যৌক্তিক বুদ্ধি বিচার হারিয়েছে। বিশেষ করে কিছু বিশেষ মহল সারাক্ষণই ঘোলা পানিতে রাঘব বোয়াল শিকারের পাঁয়তারা করে। এ ছাড়া এ ঘটনাকে আর কোনোভাবেই ব্যাখ্যা করা যায় না।
আমলাদের চাপে কমিশনের পিছু হটা শুভ লক্ষণ নয়!
গণঅভ্যুত্থানের পর যখন অন্যান্য কমিশনের সঙ্গে ‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন’ গঠিত হলো তখন আমরা আশা করেছিলাম এই কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে সক্ষম হবে। প্রয়োজনীয় এবং উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সংস্কার করে আমলাতন্ত্রের বিষদাঁত কিছুটা ভাঙতে পারবে। কিন্তু উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসনের ৫০ শতাংশ কোটার প্রস্তাবকে অযৌক্তিক দাবি করে, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীর পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা যখন গত ২৫ ডিসেম্বর প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেন তখন আমাদের আস্থায় কিছুটা ফাটল ধরে যায়, আমাদের মধ্যে সংশয় দেখা দেয়, প্রশ্ন দেখা দেয়, সত্যিই এই আমলাতন্ত্রের চাপে সংস্কার কমিশন কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে!
অপহরণ-চাঁদাবাজি বন্ধ করুন
গণঅভ্যুত্থানের পর মানুষ আশা করেছিল এবার বোধহয় একটু শান্তিতে বাঁচতে পারবে। কিন্তু বাংলাদেশের অবস্থা অনেকটা ছেঁড়া কাঁথার মতো, একদিকে ঢাকতে গেলে আরেকদিক দিয়ে গা উদোম হয়ে যায়। এমনিতেই গ্যাস সংকট-দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে নাগরিক জীবন যখন অস্থির তখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অপহরণ-চাঁদাবাজির আতঙ্ক। তুলে নিয়ে মুক্তিপণ আদায় ও চাঁদার জন্য প্রকাশ্যে কোপানোর মতো ঘটনা মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। এর সঙ্গে আগে থেকেই রয়েছে ছিনতাই আতঙ্ক। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসায়ীদের হুমকি দেয়ার ঘটনাও ঘটছে। পুলিশ বলছে, অপহরণ-চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ঘটনায় পেশাদার অপরাধীদের পাশাপাশি শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
গ্যাস সংকটে সরকারের যদি কিছু করার না থাকে ভুক্তভোগীরা কোথায় যাবে?
গত প্রায় ১৫ দিন ধরে রাজধানীর বেশিরভাগ বাসাবাড়ির রান্না হচ্ছে বৈদ্যুতিক চুলায়। যারা বৈদ্যুতিক চুলা কিনতে পারছেন না, তারা হয় মাটির চুলায় রান্না করছেন, না-হয় বাইরে থেকে খাবার কিনে আনছেন। গ্যাসের এমন তীব্র সংকট রাজধানীবাসী ইতোপূর্বে কখনো অনুভব করেনি। রাজধানীর সঙ্গে এরকম গ্যাস সংকট তৈরি হয়েছে অন্যান্য জেলাগুলোয়ও। কুমিল্লা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের ব্যাপক সংকটে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। অনেক জায়গায় দিনের বেলায় গ্যাস থাকছে না। রান্নার চুলা জ্বালাতে রাতের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। প্রয়োজনীয় গ্যাস পাচ্ছেন না শিল্পের গ্রাহকরাও। ফলে রপ্তানিমুখী কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাসের অভাবে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান নতুন বিনিয়োগের উৎসাহ পাচ্ছে না। দিন যত যাচ্ছে গ্যাসের জন্য হাহাকার ও ভোগান্তি ততই বাড়ছে।
নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরও কেন হাসপাতাল বুঝে নিতে গড়িমসি
এরকম অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা সম্ভবত বাংলাদেশেই সম্ভব: নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরও কয়েক বছর ধরে হাসপাতালটি বুঝে নিচ্ছে না সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষ। বছরের পর বছর ধরে হাসপাতালটি অহেতুক পড়ে আছে। ঠিকাদার নিজেদের লোক দিয়ে প্রায় চার বছর ধরে হাসপাতালটি পাহারা দিচ্ছেন। বারবার চিঠি দিলেও কর্তৃপক্ষ হাসপাতালটি বুঝে নিচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকায় হাসপাতালের বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি হয়ে যাচ্ছে।
উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে আকস্মিক শুল্ক-কর বাড়ানো কেন?
গত দুই বছর ধরে লাগামহীন উচ্চ মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছে দেশের জনগণ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, গেল বছর গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে এলেও খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ শতাংশের উপরেই। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৯২ শতাংশ, খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ২৬ শতাংশে।