দেশ ও রাজনীতি
পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নিন
১০ মে, ২০২৫; কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজ মেয়েকে হত্যা করেছে মা-বাবা। গভীর রাতে ভাইয়ের স্ত্রীর সহযোগিতায় মা-বাবা তাদের কন্যা নবম শ্রেণির ছাত্রী জান্নাতি খাতুনকে রড ও দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে ভুট্টা খেতে ফেলে রাখে। ঘটনা ভিন্ন খাতে নেয়ার লক্ষ্যে তারা বাড়ির খড়ের গাদায় আগুন লাগিয়ে দেয়। ঠিক এক বছর পূর্বে ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪-এ পটুয়াখালী জেলার দশমিনা উপজেলার বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়নের রামবল্লভ গ্রামে আট বছর বয়সী শিশু মরিয়মকে হত্যা করে তার নিজ মা ও চাচা, কারণ একই, জমি সংক্রান্ত বিরোধ। মা রিনা বেগম মেয়ে মরিয়মকে পাশের বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে নতুন পোশাক পরিয়ে বাড়ির পাশের পরিত্যক্ত ভিটায় নিয়ে গিয়ে ওড়না দিয়ে মুখ বেঁধে রাখেন আর চাচা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে।
নারীর সমঅধিকার বনাম নারীর কর্তব্য জ্ঞান
নারীর সম-অধিকার স্থাপনের ব্যাপারে আমার সবচেয়ে বড় মতামত, অধিকার ভোগ করতে হলে কর্তব্য পালন করতে হয়। এটাই নিয়ম। সামাজিক ভাবে নারীর অবস্থান বা নারীর প্রতি পরিবারের মনোভাব সম এবং সম্মানজনক না হলে নারীর মধ্যে কর্তব্য পালনের স্পৃহা জেগে উঠবে না। পারিবারিকভাবে নারীকে সমান হিসেবে গণ্য না করলে নারীর মধ্যে আত্মবিশ্বাস জেগে উঠবে না। নারীর জন্য প্রথমে সবচেয়ে জরুরি নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেয়ার সক্ষমতা ও সাহস অর্জন করা। সেটি না থাকলে, সম্পত্তিতে সম-অধিকার কেবল তার জন্য পীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
ভারত পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ যুদ্ধের সম্ভাবনা
৭ মে থেকে ১০ মে পর্যন্ত চার দিন শুধু উপমহাদেশের জন্য নয়, সারা বিশ্বের মানুষের মধ্যেই ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করেছে। এই চার দিন ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি যে মিসাইল, ড্রোন ও বিমান হামলা চলেছে তা দুই পরমাণু শক্তিধর দেশকে ফুল স্কেল ওয়ারের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। বিশ্বব্যাপী এত আতঙ্ক সত্ত্বেও যুদ্ধ শুরুর পর প্রথম তিন দিনে দুপক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী কাউকে দেখা যায়নি। তখন ভারত এবং পাকিস্তান উভয়ের বডি ল্যাঙ্গুয়েজেই কোনো আপোষের চিহ্ন ছিল না। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের এক উক্তি বিশ্বব্যাপী শান্তিপ্রিয় মানুষকে আরও উদ্বিগ্ন করে তুলেছিল। তিনি বলেছিলেন, ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ আমাদের বিজনেস নয়।
আসন্ন বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে
বিশ্বব্যাপী জাতীয় বাজেটের অন্তত ২০ শতাংশ বা জিডিপির ৬-৮ শতাংশ শুধু শিক্ষার জন্য বরাদ্দের কথা বলা হয়; কিন্তু আমাদের দেশে বরাবরই প্রয়োজনের তুলনায় কম বরাদ্দ দেওয়া হয় শিক্ষা খাতে। বিশ্বের চ্যালেঞ্জিং অর্থনীতির মুখে আমাদের মতো বিশাল জনসংখ্যার দেশে বাজেট করা কঠিন কাজ। অর্থনীতির প্রচলিত নিয়মে একে বাঁধা যায় না। রাষ্ট্রের সামাজিক, অর্থনৈতিক, নৈতিক, মেধা মননের বিকাশের ক্ষেত্রে যে কয়েকটি খাত রয়েছে তার মধ্যে শিক্ষা অন্যতম। এ খাতটি একটি রাষ্ট্রে বসবাসরত প্রতিটি নাগরিকের মেধা, চিন্তা, শক্তি স্বাভাবিক জীবন বোধের জাগরণের সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তু দুর্ভাগ্যভাবে এ খাতের উন্নয়ন কল্পে যা যা পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে তা থেকে রাষ্ট্র অনেক দূরে। বড় সমস্যা আমাদের শিক্ষার উন্নতি কল্পে জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ খুবই কম। অথচ আমাদের পাশ্চাত্য দেশ ভারত, নেপাল, ভূটান, শ্রীলঙ্কায় শিক্ষা খাতে বরাদ্দের পরিমাণের চেয়ে বাংলাদেশে অত্যন্ত কম।
ঘোলা জলে রাজনীতি: অস্থির সময়ের প্রতিচিত্র
রাজনীতিতে যে অস্পষ্টতা, দ্বিধা ও উত্তেজনা জমে উঠছে, তা কেবল ঘটনার সমাহার নয়- এ এক সময়চিত্র। তা আমাদের শাসনব্যবস্থার গভীরে জমে থাকা দুর্বলতা, বৈপরীত্য ও অস্থিরতার বহিঃপ্রকাশ। সরকার পরিবর্তনের প্রায় এক বছর হতে চলছে, অথচ একটি স্পষ্ট রূপরেখা, সময়সীমা, কিংবা দায়িত্ববোধপূর্ণ রাজনৈতিক ভাষ্য নির্মাণ করতে পারিনি। বরং স্পষ্ট হয়ে উঠছে অনিশ্চয়তা, দায়িত্বহীনতা ও অস্বচ্ছ চর্চার এক জটিল চিত্র। ঘটনাবলির পরম্পরা দেখে অনেকে বলছেন, যেন এটি একটি অদৃশ্য পরিকল্পনার অংশ, যার উদ্দেশ্য পানি ঘোলা করে স্বার্থসিদ্ধি। বাস্তবতা হচ্ছে, কোনো না কোনো শক্তি এই ঘোলা পানিকে তাদের হাতের খেলা বানাতে চাচ্ছে বা এ পরিকল্পনার অংশীজন হচ্ছে- এতে কোনো সন্দেহ আছে? যে সরকারকে মনে করা হয়েছিল সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও শক্তিশালী, সেই সরকার আজ ১০ মাস পূর্ণ হতে না হতেই দুর্বলতার লক্ষণ স্পষ্টভাবে প্রকাশ করছে। নীতিগত স্পষ্টতা নেই, সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিভ্রান্তি, এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব জনমনে প্রশ্ন তুলেছে- এই সরকার কি আদৌ জানে কোথায় যাচ্ছে?
‘আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা’
ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ধ্রুবজিৎ কর্মকারের আত্মহত্যা আমাদের সামনে শুধু একটি করুণ মৃত্যুর খবর নয়, এটি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার এক নির্মম, অন্ধকার আয়নাঘরের সন্ধান দেয়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ও কেন নাগরিক উদ্বেগ বাড়ছে!
আমরা, সাধারণ নাগরিকগণ এই প্রথমবারের মতো একটি গণভোটবিহীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন দিয়েছি- যা সংবিধান অনুযায়ী হয়তো কিছুটা বিতর্কিত; কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে একে প্রয়োজনীয় বলেই মেনে নিতে হয়েছে। কারণ, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশ কখনোই একটি পূর্ণাঙ্গ, কার্যকর ও টেকসই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি। বরং দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতালিপ্সা, দুর্নীতি, গুম-খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতা দেশকে এক গভীর আস্থাহীনতার খাদে ঠেলে দিয়েছে।
সরকারের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব কি শুধুই নির্বাচন প্রশ্নে?
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এবং মির্জা আব্বাস সম্প্রতি এমন কিছু কথা বলেছেন, যাতে মনে হচ্ছে বিএনপি বুঝি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান বিরোধী দল। যদিও অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগের ক্ষমতাচ্যুতির পরে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রক্রিয়ায় বিএনপিও বড় ভূমিকা রেখেছে। বিএনপি শুরু থেকেই বলছে যে, এই সরকার তাদের সরকার; কিন্তু দেখা গেল, গত বছরের ৮ আগস্ট এই সরকার দায়িত্ব গ্রহণের মাস কয়েক পর থেকেই বিএনপির সঙ্গে তাদের দূরত্ব বা টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। তাতে প্রশ্ন উঠছে, সরকারের সঙ্গে বিএনপির এই দূরত্ব কী শুধুই নির্বাচন প্রশ্নে নাকি এর পেছনে আরও কিছু কারণ রয়েছে?
আগামী বাজেটে কৃষি খাতের অগ্রাধিকার প্রয়োজন
নয়া বাজেট আসন্ন। আগামী জুন মাসের ২ তারিখ উপস্থাপিত হতে পারে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট। এখন বাজেট প্রণয়নের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে জানা গেছে যে, আগামী বাজেটের আকার হতে পারে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরের মূল বাজেটের তুলনায় তা হবে ৭ হাজার কোটি টাকা কম। স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম টাকার অঙ্কে বাজেটের আকার হ্রাস পাচ্ছে। নিঃসন্দেহে এ বাজেট হবে সংকোচনমূলক। চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি, রাজস্ব আহরণের ধীরগতি ও বাজেট বাস্তবায়নে সক্ষমতার অভাবহেতু একটি আঁটসাঁট বাজেটই আমাদের কাম্য।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন আদৌ হবে কি না সন্দেহ
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ড. ইউনূসের খ্যাতি আকাশচুম্বী, তার আহ্বানে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশে ছুটে এলেন, রোজার মাসে পায়জামা-পাঞ্জাবি পরলেন, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতারও করলেন। ড. ইউনূস ঘোষণা দিলেন, রোহিঙ্গারা যাতে আগামী বছর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গিয়ে ঈদ উদযাপন করতে পারে সেই লক্ষ্যে জাতিসংঘের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন। অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান বললেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মিয়ানমার সরকার কর্তৃক বাছাইকৃত ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে দেয়ার বন্দোবস্ত করতে পারবেন; কিন্তু এই ঘোষণার পর শোনা গেল গত এক বছরে নতুন করে আরও ১ লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। অথচ জাতিসংঘের মহাসচিব ও অন্তর্বর্তী সরকারের দৌড়ঝাঁপ দেখে আমাদের মনে এই প্রতীতি জন্মেছিল যে, এবার কিছু একটা হবে। হয়েছে, রোহিঙ্গাদের সমাবেশে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বক্তব্য রেখে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গাদের সঙ্গে চট্টগ্রামবাসীর আত্মিক সম্পর্কের কথা বিশ্ববাসীকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।