দেশ ও রাজনীতি
ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এখন ফাটলে রূপ নিচ্ছে
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ময়দান থেকে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের শুরু। আত্মপ্রকাশ ঘটে ভূরাজনৈতিক ব্লকের। যুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্বে সমাজতান্ত্রিক ব্লক সোভিয়েত ইউনিয়নের বাড়-বাড়ন্তে উদ্বেগ বাড়তে থাকে ওই ব্লকের। বাড়তে থাকে উত্তেজনা। শুরু হয় একে অপরের মধ্যকার বহুমাত্রিক প্রতিযোগিতা। উভয় ব্লকেরই দাবি ছিল, বিপরীত ব্লক তাদের ভেতরকার ঐক্য ধ্বংস করতে চায়। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদল যেমন পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে অবস্থান নিতে পারত না, তেমনি সোভিয়েত ট্যাঙ্কগুলোও প্রুশিয়ান ময়দানে প্রবেশ করতে পারত না যুক্তরাষ্ট্রের কারণে। তখন ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বিচ্ছিন্ন করার এই প্রক্রিয়াকে তখন ‘ডিকাপলিং’ বলা হতো। উভয় ব্লকের কয়েক দশকের দ্বন্দ্ব যা করতে পারেনি, তা এখন কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই করতে চলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
গাজা যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান ইসরায়েলি লেখকদের
চলতি বছরের জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও মার্চেই তা ভেঙে পড়ে। ইসরায়েলি বাহিনী এখনো গাজায় গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। এই অমানবিক যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে, যুক্তরাষ্ট্র, মরোক্ক, তুরস্ক, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। এবার প্রতিবাদকারীদের দলে যোগ দিলেন খোদ ইসরায়েলের লেখক-কবি-সাংবাদিকরা। ইসরায়েলি নেতাদের উদ্দেশ্যে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে এক চিঠিতে সই করেছেন ইসরায়েলের কমপক্ষে ৩৫০ জন লেখক।
ক্ষমতায় থাকার পুরোনো তরিকা
‘রাস্তা থেকে মানুষ বলে আপনারা আরও ৫ বছর থাকেন।’ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর এই বক্তব্যের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলমের একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসের বেশ মিল রয়েছে।
বিদেশি ব্র্যান্ডের ওপর হামলা দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে
ইসরায়েলের বোমার আঘাতে এখন আর কেবল বাড়ি-ঘর ধ্বংস হয় না, ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনকণার সঙ্গে মানবদেহও আকাশে উড়ছে। অকল্পনীয় ও হৃদয়বিদারক দৃশ্য। ইসরায়েলকে কেউ থামাতে পারল না, পারবেও না। অসহায় সাধারণ মুসলমান অহর্নিশ সৃষ্টিকর্তার করুণা ভিক্ষা করছে, দোয়া করছে, প্রার্থনা করছে বিগত ৭৬ বছর ধরে। ছিয়াত্তর বছর ধরে ভিটেবাড়ি ছাড়া ফিলিস্তিনিরা, ২০ লাখ অধিবাসীর গাজা বিগত পনেরো মাস ধরে আমেরিকা আর ইসরায়েলের বোমার আঘাতে ছিন্নভিন্ন হচ্ছে, প্রতিদিন লোক মরছে, আহত হচ্ছে, অসংখ্য লাশ ভবনের নিচে চাপা পড়ে আছে, খাবার নেই, বিদ্যুৎ নেই, পানি নেই। এত লাশ, কবর দেয়ার জায়গা নেই। স্বজন, সম্পদ, আশ্রয় সব হারিয়ে নিঃস্ব গাজাবাসী। এমন রোমহর্ষক দৃশ্য দেখেও জগতবাসী নির্বিকার। মনে হচ্ছে ফিলিস্তিনিরা মানুষ পদবাচ্য নয়, মানুষ হলে শত শত শিশুর মৃত্যুতে যুদ্ধ এতদিনে থেমে যেত। জগতে সৃষ্ট প্রজাতির মধ্যে মানুষ হচ্ছে সবচেয়ে হিংস্র প্রাণী, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে দিয়ে তা প্রমাণ করা সহজ।
আন্দোলনের পরে নীরবতা, নীরবতার ফাঁকে দুর্নীতি
আমরা এক অদ্ভুত জাতি- জেগে উঠতে পারি, প্রতিবাদে ফেটে পড়তে পারি, রাজপথে দাঁড়াতে পারি। কিন্তু সেই আন্দোলনের প্রাপ্তি কি শুধু ব্যানার, পোস্টার আর পুলিশের লাঠিচার্জে সীমাবদ্ধ? আমরা বারবার প্রমাণ করেছি, ‘আমরা পারি’; কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছি- আমরা ঠিক কী পারি? আর কী পারি না? কেন পারি না? বছরের পর বছর ধরে আমরা দেখে আসছি- বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ কখনো কোটা সংস্কারের দাবিতে, কখনো শিক্ষার বৈষম্যের বিরুদ্ধে, কখনো আবার বেতনবৈষম্য, ভর্তি দুর্নীতি, প্রশ্নপত্র ফাঁস, কিংবা আবাসিক সমস্যার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য, শাহবাগ, প্রেস ক্লাব কিংবা চট্টগ্রামের আন্দোলনস্থলগুলো এসব আন্দোলনের নীরব সাক্ষী।
রাষ্ট্র সংস্কার করতে হলে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন করতে হবে
বাংলাদেশে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত কঠিন যা মূলত রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতার জটিলতার সঙ্গে সম্পর্কিত। সংস্কার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ার পেছনে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অনীহা, কায়েমি স্বার্থবাদীদের প্রভাব এবং সামাজিক চাহিদার দুর্বলতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদিও বাংলাদেশ বিভিন্ন সময়ে নীতি সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তবে তা কাঠামোগত ও কার্যকর রূপ লাভ করতে পারেনি। বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও ক্ষমতার কেন্দ্রীভূত প্রকৃতি সংস্কার বাস্তবায়নের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ কাঠামোতেই গণতন্ত্রের অভাব থাকায় তারা জাতীয় পর্যায়েও গণতন্ত্র ও সুশাসনের সংস্কার বাস্তবায়নে আগ্রহী নয়। দলীয় নেতাদের একচ্ছত্র আধিপত্য, উত্তরাধিকারভিত্তিক নেতৃত্ব এবং দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনিয়মিত প্রক্রিয়া রাজনৈতিক সংস্কারের পথে বড় অন্তরায়।
এই ধ্বংসযজ্ঞের মানসিকতা থেকে উত্তরণ কি সম্ভব?
ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান বলে যে বাটার দোকানে হামলা ও চুরি হলো সেই বাটা কোম্পানি ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান নয়, এর জন্ম চেক প্রজাতন্ত্রে, অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্যের সময়, ১৮৯৪ সালে। কেন্টাকি ফ্রাইড চিকেন (কেএফসি)-এর প্রতিষ্ঠা যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকি অঙ্গরাজ্যের লুইসভিল শহরে, যার প্রতিষ্ঠাতা কর্নেল স্যান্ডার্স একজন খ্রিষ্টান, পরবর্তীতে যারা কোম্পানিটি কিনে নেন তারাও খ্রিষ্টান। তারপরও প্রতিষ্ঠান দুটিতে হামলা করা হলো কোন যুক্তিতে? কিংবা হামলাকারীরা কি আদৌ কোনো যুক্তি খুঁজেছিল?
লুটপাট কোন ধরনের প্রতিবাদ?
প্রতি মুহূর্তে আকাশ থেকে আগুন ঝরছে, প্রতিটি ঘরে শোকের ছায়া। হাসপাতালগুলোর মেঝেতে সারি সারি রক্তাক্ত লাশ। নবজাতক শিশুরা অক্সিজেনের অভাবে মায়ের কোলে মারা যাচ্ছে, হাসপাতালের ধ্বংসস্তূপের নিচে চিকিৎসকরা চাপা পড়ে যাচ্ছেন, অথচ বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো নীরব দর্শকের ভূমিকায়। শিশুদের কান্না, মায়েদের আর্তনাদ, ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে মানবতা।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: বাস্তবতা বনাম শোরগোল
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যু নিয়ে বারবার আশ্বাস ও চুক্তির পরও বাস্তবে কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। কিছু সময় পরপর আন্তর্জাতিক মহল কিছু আলোচনার ধোঁয়া তুলে আবার নীরব হয়ে যায়। এতে প্রশ্ন জাগে- এই প্রচারণা কি সত্যিই সমস্যা সমাধানে উৎসাহী, নাকি শুধু কূটনৈতিকভাবে চাপমুক্ত হওয়ার একটি মাধ্যম?
দ্বৈত মানদণ্ডভিত্তিক জাতিগত শুদ্ধিকরণই নীতি
যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতির বিশ্বাসযোগ্যতা এখন প্রশ্নের মুখে। যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল যৌথ সামরিক মহড়া এবং ইরানের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়ার শঙ্কার মাঝেই ট্রাম্পের উত্তরাধিকার মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ সংঘাত, বিশেষ করে গাজা ও এর বাইরের অঞ্চলগুলোতে বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে।