কূটনীতি
জেলেনস্কি-ট্রাম্প মিটিং ট্রান্সঅ্যাটলান্টিক জোটে কী পরিবর্তন আনছে?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে সম্প্রতি যে মিটিং হলো তাতে বোঝা যাচ্ছে বিশ্বব্যাপী কূটনৈতিক সম্পর্কে বড় ধরনের একটা পরিবর্তন আসছে। এতে করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউক্রেনে যেমন উদ্বিগ্নতা বাড়বে, বাড়বে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। বহুপাক্ষিক প্রতিশ্রুতি থেকে পশ্চাদপসরণ যা দীর্ঘস্থায়ী জোটের নির্ভরযোগ্যতাকে বিপন্ন করে। জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক- যা আগে শক্তিশালী মার্কিন-ইউক্রেন সম্পর্কের প্রতীক ছিল- ওয়াশিংটনের পরিবর্তনশীল কৌশলগত অগ্রাধিকারের বিষয়ে শঙ্কা উত্থাপন করেছে৷ ট্রাম্প প্রকাশ্যে কিয়েভের নেতৃত্ব যাচাই-বাছাই করেছেন এবং ক্রেমলিনের অনুরূপ বর্ণনার প্রতিধ্বনি করেছেন। এই পুনর্বিন্যাস ইউক্রেন সংঘাতের গতিপথের জন্য যথেষ্ট প্রভাব ফেলে এবং মৌলিকভাবে বৈশ্বিক ব্যবস্থাকে নতুন আকার দিতে পারে।
ইউক্রেন যুদ্ধের ৩ বছর: যুদ্ধ থামবে না কি অন্যদিকে মোড় নেবে?
আজ সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫; রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ৩ বছর পূর্ণ হলো। যদিও এ যুদ্ধকে শুধু ইউক্রেন যুদ্ধই বলা হয়; কারণ, যুদ্ধ পুরোটাই হচ্ছে ইউক্রেনের ভূখণ্ডে। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করেছিল। ভ্লাদিমির পুতিন আশা করেছিলেন খুব অল্প সময়ের মধ্যেই রাশিয়া ইউক্রেন দখল করে নিতে পারবে। তখনই অনেকে বলাবলি করছিলেন এই যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে রূপ নিবে। সত্যিই তাই হলো, সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের পর এই প্রথম রাশিয়া এমন দীর্ঘমেয়াদি এক যুদ্ধে জড়াল। ইউক্রেন দাবি করছে, এই যুদ্ধে রাশিয়া এখন পর্যন্ত ৪ লাখ সৈন্য হারিয়েছে। সঠিক সংখ্যাটা অবশ্য জানা যাচ্ছে না। তাও বিবিসি ও আল জাজিরা নানা সূত্রের বরাত দিয়ে জানাচ্ছে, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত রাশিয়া কমপক্ষে দেড় লাখ সৈন্য হারিয়েছে। ইউক্রেনের সৈন্য নিহত হয়েছে অর্ধ লাখের মতো। সৈন্য কম নিহত হলেও ইউক্রেনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রচুর। তাদের প্রায় ৮০ লাখ মানুষ দেশছাড়া হয়েছে, ৫০ লাখ আভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আর ইউক্রেনের ৪ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা দখল করেছে রাশিয়া। দুদেশের অন্যান্য অর্থনৈতিক ও কাঠামোগত ক্ষতির কথা বাদ দিলেও বলা যায় এই যুদ্ধে বিশ্ববাসীও ভুক্তভোগী হয়েছে প্রচুর। বিশেষ করে এশীয় ও ইউরোপের অনেক অঞ্চলে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে অনেক। করোনা মহামারির পর এমন একটা ভয়াবহ যুদ্ধ কারও কাছেই প্রত্যাশা ছিল না। কোনো যুদ্ধই সাধারণ মানুষের প্রত্যাশায় থাকে না।
ট্রাম্পের যুগে আমেরিকার গণতন্ত্রের আড়ালে অমাবস্যার হাতছানি
আর দরিদ্র মানুষের জন্য আইনের শাসন কেবল কাগজে-কলমেই আছে; কারণ তারা পর্যাপ্ত পয়সা খরচ করে ভালো আইনজীবী নিতে পারে না। তবুও আমেরিকার গণতন্ত্র অনেক দিন ধরে এমনভাবে টিকে আছে যেন এটি এক ধরনের বিশ্বাসের অংশ। খ্রিষ্টধর্মের অনেক ধারণা আমেরিকার রাজনীতিতে ঢুকে গেছে। যেমন, আমেরিকা মনে করে তাদের মূল্যবোধ সব মানুষের জন্য এবং তারা সেসব মূল্যবোধ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চায়। পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্সও একই কাজ করেছে, কারণ ফ্রান্স ও আমেরিকার গণতন্ত্র দুই বিপ্লব থেকে এসেছে। আর এই বিপ্লব আলোকিত যুগের ধারণার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল।
সোজা কথায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের কর্মপদ্ধতি
যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় সুপার পাওয়ার এতে কারও কোনো সন্দেহ নেই। তাকে ম্যাকডোনাল্ড আইল্যান্ড, চুখোতকা অখরুক থেকে শুরু করে এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ, ল্যাটিন আমেরিকা পর্যন্ত নজর রাখতে হয়। ওই যে দুটি অতি ক্ষুদ্র দূরদ্বীপের নাম বললাম, আমরা সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, হয়তো আমাদের ফরেইন অফিসও জানে না; কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের জানতে হয়। ওইসব স্থানের অর্থনীতি, কৌশলগত অবস্থান, বেনিফিট সম্পর্কে নিয়মিত পলিসি অবলম্বন করতে হয়।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভয় দেখাচ্ছেন, নাকি সত্যি?
সবেমাত্র ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এরই মধ্যে তিনি তার ক্ষমতাবলে বহু আদেশ দিয়ে এবং আগামীতে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ইচ্ছা ব্যক্ত করে বিশ্বব্যাপী অনেকের পিলে চমকে দিয়েছেন। রীতিমতো হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। ইতোমধ্যেই তিনি এতগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যা অনেকের কাছেই স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে না। বিগত দিনে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব গ্রহণ করেই এভাবে এতগুলো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেননি; অন্য দেশকে হুমকি দেননি। সমালোচকরা কেউ কেউ তাকে উগ্র জাতীয়তাবাদী হিসেবে হিটলারের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তার অতি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজাকে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নেয়া এবং গাজার অধিবাসীদের অন্যত্র স্থানান্তরিত করা, কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্যে পরিণত করা, যার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে একাধিকবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে ‘গভর্নর’ বলে উল্লেখ করেছেন; পরবর্তীতে কানাডা, মেক্সিকো এবং চীনের ওপর উচ্চহারে ট্যারিফ ধার্য করা, ইউএসএইড বন্ধ করে দেয়া, অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডিপোর্ট করা, ডেনমার্কের কাছ থেকে গ্রিনল্যান্ড নিয়ে নেয়া, পানামা ক্যানেলের দখল পুনরুদ্ধার করা, ইউক্রেনের খনিজসম্পদের বিনিময়ে সামরিক সাহায্য দেয়া এবং সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট বাইডেনের গোয়েন্দা তথ্যে প্রবেশের অধিকার বন্ধ করাসহ আরও অনেকগুলো বিষয়।
ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ মূলনীতি বিশ্ববাসীকে যে বার্তা দিল
দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইট হাউসে ফিরছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প আর তার এই ফেরা বৈশ্বিক রাজনীতি ও অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় দফায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পরই তার ঘোষিত ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ মূলনীতি বাস্তবায়ন শুরু করবেন। ট্রাম্পের এই এজেন্ডা মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির খুঁটিনাটি তো পরিবর্তন করবেই, পাশাপাশি এর ফলে আমেরিকার সীমানার বাইরে বসবাস করা কোটি মানুষের জীবনও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হবে। প্রধান প্রধান আন্তর্জাতিক ইস্যুগুলোর ক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হতে পারে তা নিয়ে মানুষের জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। নির্বাচনি প্রচারণার সময় বিভিন্ন বক্তব্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার বলেছেন যে, তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এক দিনের মধ্যে শেষ করতে পারবেন। যদিও সেটি ঠিক কীভাবে করবেন সে বিষয়ে বিস্তারিত কখনোই খোলাসা করেননি তিনি।
বাংলাদেশের অভিবাসী বিষয়ে ট্রাম্পের নীতিনির্ধারণী কী হবে?
অবৈধ অভিবাসীদের প্রতি খড়গহস্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো ২০ জানুয়ারি অভিষিক্ত হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ‘এই মুহূর্তে আমেরিকার স্বর্ণযুগ শুরু হলো’ বলে ভাষণ শুরু করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমরা সব দেশের ঈর্ষার কারণ হব। কাউকে আমাদের কাছ থেকে বাড়তি সুবিধা আদায়ের সুযোগ দেব না। ট্রাম্প প্রশাসনের প্রধান নীতিই হবে “আগে আমেরিকা”। আমাদের সার্বভৌমত্ব আর নিরাপত্তা পুনরুদ্ধার করতে হবে। বিচারের দাড়িপাল্লায় পুনঃভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে হবে। আমেরিকা আগের চেয়ে বহুগুণ মহান ও ব্যতিক্রম হবে। আমরা এক নতুন যুগে প্রবেশের দ্বারপ্রান্তে আছি। আমেরিকার পতন আজ থেকে শেষ হয়ে গেল। ঈশ্বর আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন আমেরিকাকে আবার মহান করার জন্য।’
টিউলিপের পদত্যাগ: ব্রিটিশদের কাছে তুচ্ছ হলেও বাংলাদেশিদের কাছে মুখ্য কেন?
বাংলাদেশের অবকাঠামো প্রকল্প থেকে ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাতের অভিযোগের তদন্তে যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকের নাম এসেছে। তার পরিবার এই অর্থ আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। আর তাই ব্রিটেনের ইকোনমিক সেক্রেটারি টু দি ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিক পদত্যাগ করেছেন। বাংলাদেশে দুর্নীতির তদন্তে তার নাম আসার পর থেকেই তার ওপর পদত্যাগের চাপ বাড়ছিল। সম্প্রতি বাংলাদেশে দুর্নীতির একটি মামলায় তার মা, ভাই বোন ও খালার পাশাপাশি তাকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে টিউলিপ সিদ্দিক বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ট্রাম্প যুগের শুরু কি নিউ ওয়ার্লড অর্ডার?
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বর্তমান যুগে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের সঙ্গে প্রতিটি দেশের সম্পর্ক রয়েছে। আর এই সম্পর্ক কোনো দেশের সঙ্গে কোনো দেশের ভালো, আবার কোনো দেশের সঙ্গে কোনো দেশের বৈরী। অর্থাৎ কোনো না কোনোভাবে প্রতিটি দেশেরই, বিশেষ করে বড় দেশগুলোর সঙ্গে স্বার্থ জড়িয়ে আছে। সেই অনুযায়ী পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অর্থনীতি এবং সামরিক শক্তির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রায় প্রতিটি দেশের বাণিজ্যিক, সামরিক এমনকি আদর্শিক সম্পর্ক বা বিরোধিতা রয়েছে। এই সম্পর্কে আবার জোয়ার-ভাটাও দেখা যায়। মাঝখানে একটু বলে রাখা ভালো, যারা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রে যে দলই সরকার গঠন করুক না কেন তাদের পররাষ্ট্রনীতিতে বিশেষ পরিবর্তন আসে না, তারা সেকেলে চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত। এমন চিন্তা পুরোনো, শীতল যুদ্ধের সময়ের। তখন যুক্তরাষ্ট্রে যে দলই সরকার গঠন করুক না কেন, তাদের সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং সমাজতান্ত্রিক বলয়ের দেশগুলোর ব্যাপারে কোনো নীতির পরিবর্তন হতো না। কিন্তু বর্তমানে সেই বলয় ভেঙে গেছে। এমনকি চীনের মতো বিশাল সমাজতান্ত্রিক দেশও মুক্তবাজারের নীতিতে পরিচালিত হচ্ছে।
জাস্টিন ট্রুডোর রাজনৈতিক উত্থান ও পতন
দোলনায় দুলতে দুলতেই রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল জাস্টিন ট্রুডোর। ১৯৭১ সালের ক্রিস্টমাস ডে-তে জন্ম তার। পিতা এলিয়ট ট্রুডো ছিলেন কানাডার ১৫তম প্রধানমন্ত্রী। মা মার্গারেটও ছিলেন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বাবা-মার কল্যাণে ছোটবেলা থেকেই জাস্টিন ট্রুডোর ওপর এসে পড়েছিল রাজনীতির আলো। রাজনৈতিক পরিবেশেই বেড়ে উঠেছেন তিনি; কিন্তু এখন তার সময়টা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। কাছের মিত্রদের কাছ থেকেই পরিত্যক্ত। বিশ্বব্যাপী ক্ষমতাচক্রের যে বলয় পরিবর্তন হচ্ছে তাতেও কানাডা যোগ দিতে পারছে না।