কূটনীতি
ব্রিকস তার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পরবে?
অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের সফল সমাপ্তি ঘোষণা করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। রাশিয়ার অর্থনীতিকে বৈশ্বিক বাজার থেকে বিচ্ছিন্ন করতে দেশটির ওপর অনেক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে পশ্চিমা বিশ্ব। এরই মধ্যে গত কয়েক দশকের মধ্যে রাশিয়ায় বিশ্বনেতাদের সবচেয়ে বড় সমাবেশটি হয় এই ব্রিকসেই। ৩৬টি দেশের শীর্ষ নেতাদের অংশগ্রহণে তিন দিনের সম্মেলনে রাশিয়া এবং পুতিনকে বিশ্বজুড়ে বিচ্ছিন্ন করতে পশ্চিমাদের চেষ্টা ব্যর্থই হয়েছে।
ট্রাম্পের কারণে বদলে যাচ্ছে ইইউর কূটনীতি
ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২০ সালের নির্বাচনে জো বাইডেনের কাছে হারের পর নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান ও সমর্থকদের উসকে দিয়ে দাঙ্গা বাধিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। এ নিয়ে মামলা ও ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ার পর মনে করা হচ্ছিল, ট্রাম্পের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বুঝি শেষ হতে চলল; কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে ট্রাম্প দোর্দণ্ডপ্রতাপে ফিরে এসেছেন ক্ষমতার মসনদে, যা ইতিহাস গড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের আড়াইশ বছরের ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেছিল আরেকবার। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড চার বছর ক্ষমতায় থাকার পর ১৮৮৮ সালে হেরে যান। ঠিক চার বছর পর ১৮৯২ সালে আবার নির্বাচনে জিতে তিনি হোয়াইট হাউসে ফেরেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাত ধরে ১৩২ বছর পর সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি দেখল যুক্তরাষ্ট্র। এই নির্বাচনে জয়ের মাধ্যমে আরেকটি ইতিহাস গড়েছেন ট্রাম্প। সবচেয়ে বেশি বয়সে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন।
আন্তর্জাতিক কনভেনশন গণহত্যা বিষয়ে নিশ্চুপ কেন?
মানুষে মানুষে সংঘাতের ক্ষেত্রে নিয়ম নির্ধারণের এক দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে; কিন্তু আধুনিক যুগের আগে, বিশ্বের কোনো শক্তিরই সব দেশের ওপর কোনো উল্লেখযোগ্য নিয়ন্ত্রণ ছিল না কিংবা মিত্র দেশগুলোর জোট ছিল না-যাদের ওপর এই কাঙ্ক্ষিত নিয়মগুলো প্রয়োগ বা বাস্তবায়ন করা যাবে। তবে ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে, ইউরোপীয় দেশগুলো নিজেদের মধ্য কিছু চুক্তি স্বাক্ষর করে, যার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক আইন পালন করা বাধ্যতামূলক করা হয়। ইউরোপীয় দেশগুলো মূলত এই সিদ্ধান্তে আসে যে, ওই চুক্তিগুলো আমলে নিয়ে তাদের আন্তর্জাতিক আইন পালনে বাধ্যবাধকতা আরোপের ক্ষমতা রয়েছে। এই শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে, ইউরোপের এই দেশগুলো সামুদ্রিক নিয়মনীতির বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছায়, যা ছিল যুদ্ধের আইনের প্রথম ভিত্তি। এই আইনগুলো বিংশ শতকে ধীরে ধীরে প্রসারিত হতে থাকে এবং এর মধ্যে কিছু আইন আজ অবধি বলবৎ রয়েছে। দুটি বিশ্বযুদ্ধের পরে, মানবিক বিপর্যয় এবং গণহত্যা নির্মূলের ক্ষেত্রে এই আইনের মানবতার দিকগুলো আরও বেশি নজর কাড়ে।
কোন দিকে যাচ্ছে ট্রাম্পের পররাষ্ট্র নীতি
আমেরিকার ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন রাজনীতিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাধ্যমে মার্কিন প্রশাসনের চলমান বিভিন্ন নীতি-কৌশল, অর্থনৈতিক কর্মসূচি, বিদেশনীতি, বৈশ্বিক বাণিজ্য ইত্যাদির প্রতি ভোটারদের আস্থা ও অনাস্থার চিত্র দৃশ্যমান হয়। ফ্লোরিডায় ওয়েস্ট পাম বিচে উল্লসিত সমর্থকদের সামনে এসে ভোটের সর্বশেষ খবরা-খবরের অপেক্ষা না করেই ট্রাম্প নিজেকে নিজেই ‘প্রেসিডেন্ট’ ঘোষণা করেন; যদিও আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা হয়নি, প্রয়োজনীয় ২৭০ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট তখনো ট্রাম্পের ঝুলিতে পড়েনি। বিজয়ের বক্তৃতা দেয়ার প্রস্তুতি ছিল কমালা হ্যারিসেরও, তার বিজয় বার্তা শোনার জন্য তার সমর্থকরা জড়োও হয়েছিল; কিন্তু পরাজয়ের আভাস পেয়ে ওয়াচ পার্টি ছেড়েছেন ডেমোক্র্যাট সমর্থকরা, কমলা হ্যারিসও জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি কোনো বক্তব্য রাখবেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে বাকি বিশ্বের মাথাব্যথা
৪ নভেম্বরের গল্প। না, পরাবাস্তব বা যাদুবাস্তব গল্প নয়, সত্যি ঘটনা। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে বড় পাইকারি কাঁচাবাজার কারওয়ান বাজারে ঢুকলাম দুপুরবেলা। রাস্তার দুপাশে সারি বেঁধে বসে শাক-সবজি বিক্রি করছে অত্যন্ত দরিদ্রপীড়িত, শিক্ষাবঞ্চিত খেটে খাওয়া প্রান্তিক পর্যায়ের কিছু মানুষ। হঠাৎ কানে এলো তাদের মধ্যে থেকে কেউ একজন তার জন্ম এলাকার আঞ্চলিক ভাষায় বললেন, ‘ইবার ট্রাম্প হইয়া যাবি’। আমার কান সচেতন হয়ে উঠল। ইন্টারেস্টিং ডিসকাশন! দাঁড়িয়ে পড়লাম। দেখি একটা মলিন স্যান্ডো গেঞ্জি গায়ে, পরনে লুঙ্গি এবং খালি পায়ে বসে লালশাক, পুঁইশাক বিক্রি করছেন লোকটি। প্রায় একই রকম কন্ডিশনের আরেকজন বিক্রেতা তার কথায় সায় দিয়ে মাথা দোলাচ্ছেন।
মার্কিন নির্বাচনে বেশি ভোট পাওয়া প্রার্থী যে কারণে পরাজিত হতে পারেন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে আগামী ৫ নভেম্বরে ভোট দেবেন সে দেশের নাগরিকরা। আর সেই নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া প্রার্থী কিন্তু বিজয়ী নাও হতে পারেন। মার্কিন গণতন্ত্রের আলাদা কিছু দিক রয়েছে, আর সেগুলো নিয়ে আছে নানা প্রশ্ন। দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের গণতন্ত্রকে অনুকরণীয় হিসেবে দেখিয়ে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে, স্বাধীনতা অর্জনের পরে কিংবা স্বৈরশাসককে সরিয়ে দেয়ার পর গণতন্ত্র পুনর্গঠনে কোনো দেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্র উদাহরণ হতে পারে। আজকের ডেমোক্র্যাটরা যেখানে বহুজাতিগত গণতন্ত্রের ধারণাকে গ্রহণ করছেন, সেখানে রিপাবলিকানরা পুরোনো শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যকে পুনরুজ্জীবিত করে দেশকে আবার মহান করতে চাচ্ছেন। ফলে বহু জাতির গণতন্ত্রের ধারণা এবং শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদের ধারণা এখন সাংঘর্ষিক মুহূর্তে এসে দাঁড়িয়েছে।
ইরানের তেল স্থাপনায় হামলা হলে বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকটে পড়বে
২৬ অক্টোবর, ২০২৪; প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার উড়ে গিয়ে ইসরায়েলের শতাধিক বিমান তিন দফায় ইরানের রাজধানী তেহরান ও পশ্চিমাঞ্চলীয় দুটি প্রদেশের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এই হামলা পহেলা অক্টোবরে ইরানি হামলার প্রতিশোধ। হামলার প্রথম দফায় সিরিয়া, ইরাক ও ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়া হয়। পরবর্তী দুটি দফায় বিনা প্রতিরোধে ইরানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় আক্রমণ চালানো হয়। এই হামলায় ইসরায়েল শুধু ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং দ্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কারখানাকে টার্গেট করেছে, আমেরিকার নিষেধ থাকায় ইরানের পারমাণবিক ও অর্থনৈতিক স্থাপনায় আক্রমণ করেনি। ইসরায়েল তাদের এই হামলার নাম দিয়েছে ‘অনুতাপের দিন’
ট্রাম্প-কমলার ভোটের লড়াই ও বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ
এখন প্রশ্ন হচ্ছে যদি ট্রাম্প জিতে যায়, তাহলে কী হবে? নিশ্চিতভাবে ট্রাম্প তার পুরোনো নীতিতে ফিরে যাবেন। আসলে নিজের প্রথম মেয়াদের ৪ বছরে ট্রাম্প যুদ্ধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং স্থিতিশীলতা এবং আস্থার সম্পর্কোন্নয়নের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার নতুন কূটনীতি গ্রহণ করেছিলেন। ট্রাম্পের নীতি তার পূর্বসূরি রিপাবলিকানদের থেকেও পৃথক ছিল। এ কারণে আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের অনেকেই ট্রাম্পকে ‘রিপাবিলিক্যান প্রেসিডেন্ট’ না বলে যুক্তরাষ্ট্রের একজন স্বতন্ত্র প্রেসিডেন্ট হিসেবে আখ্যায়িত করেন। অতএব, বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও বাইডেন নীতির বিপরীতেই অবস্থান নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প?
বিশ্ব তাকিয়ে আছে ৫ নভেম্বরের দিকে
আর মাত্র কয়েকদিন বাকি পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ও প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের। এ নিয়ে টানটান উত্তেজনা চলছে দেশটিতে। সব মিডিয়া বলছে, হাড্ডাহাড্ডি লড়াই জমে উঠেছে। এ মুহূর্তে দুই প্রার্থী এবং দলীয় প্রচারকারীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন সুইং স্টেট, অর্থাৎ যে রাজ্যগুলো যে কোনো দিকে ঝুকতে পারে সেই রাজ্যগুলোতে। আরেকটু খুলে বললে, ২০১৬ সালে যে রাজ্যগুলো ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জয়ী করেছিল, অথচ ২০২০ সালে এসে বাইডেনকে জয়ী করেছে সেই স্টেটগুলোতে অধিক মনোযোগী হয়েছেন দুই প্রার্থী।
দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার যে অবস্থানে আছে
দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি এখন যেমন বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে পড়েছে, তেমনি আঞ্চলিক শত্রু-মিত্র দ্বারাও প্রভাবিত। চীন তার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কের মাধ্যমে পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং শ্রীলঙ্কার মতো দেশের সঙ্গে প্রভাব বিস্তার করতে চাইলেও যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে চীনের উপস্থিতি ও নিয়ন্ত্রণ কমানোর চেষ্টা করছে। এই জটিল ভূরাজনৈতিক জালের কেন্দ্রে রয়েছে বাংলাদেশ, ভৌগোলিক অবস্থান এবং ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে যার কৌশলগত মূল্য অসীম। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পতন এবং যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কারণে এ অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক গতিবিধি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।