আইন
১১ বছরেও শেষ হয়নি বিচার, রানা বাদে সব আসামি জামিনে মুক্ত
সাভারে রানা প্লাজা ধসের ১১ বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় হত্যা মামলার বিচার শেষ হয়নি; উপরন্তু এ মামলায় ভবন মালিক সোহেল রানা ছাড়া বাকি সব আসামি জামিনে আছেন। আবার ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া সেই ভবন নির্মাণে ত্রুটি থাকার অভিযোগে করা ইমারত নির্মাণ বিধিমালা আইনের মামলাটির বিচারেও অগ্রগতি নেই। প্রতি বছর ২৪ এপ্রিল হলেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ওই ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের স্মরণ করা হয়। দেশের বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন, নিহত শ্রমিকদের স্বজনরা দাবি তোলেন ন্যায় বিচারের; কিন্তু দিন যায়, মাস যায়, বছর যায় বিচার আর মেলে না।
থামেনি নারীর প্রতি যৌন হয়রানি
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে প্রতিদিন কোনো না কোনোভাবে নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির (বিএনডব্লিউএলএ) জরিপে উঠে এসেছে, বর্তমানে ৭১ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবং ৩৯ শতাংশ কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কমিটি থাকলেও কার্যকর মাত্র ৪৪ শতাংশ। তাই নারীর প্রতি যৌন নির্যাতন ও হয়রানি প্রতিরোধ-সংক্রান্ত হাইকোর্টের দেয়া নির্দেশনা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
৪২ লাখ মামলার জটে জর্জরিত বিচারালয়
মামলার ভারে জর্জরিত দেশের সব আদালতে প্রতিদিনই জমা হচ্ছে নতুন নতুন মামলা। যে কারণে কিছুতেই কমছে না মামলার জট। সুপ্রিম কোর্ট ও বিভিন্ন বিচারিক আদালতে বর্তমানে ৪২ লাখেরও বেশি মামলা বিচারাধীন। মামলার দীর্ঘসূত্রতা, অযাচিত মামলা, করোনা মহামারি চলাকালে দুই বছর বিচারকাজ বাধাগ্রস্ত, অনেক ক্ষেত্রে বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের কালক্ষেপণের মতো কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আইনজ্ঞরা।
টর্ট আইনে অপরাধ ও ক্ষতিপূরণ মামলা
'টর্ট' শব্দটি ল্যাটিন শব্দ 'tortum' হতে উদ্ভূত, যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বাঁকা। অতএব, টর্ট বলতে সোজা পথ হতে বিচ্যুতি বা বাঁকা চলন বোঝায়। নরম্যান বিজয়ের পর থেকে এ শব্দটি ব্রিটিশ আইনে অনুপ্রবেশ করে। ইংরেজি ভাষায় এর প্রতিশব্দ হচ্ছে 'Wrong' এবং রোমান ভাষায় বলা হয় 'delict'। বাংলা ভাষায় সকলের ব্যবহারযোগ্য কোনো প্রতিশব্দ এখন বের হয়নি। তাই কেউ একে 'দেওয়ানি ক্ষতি', কেউ 'নিম চুক্তি' আবার কেউ একে 'ব্যক্তিগত অপকার' হিসেবেই আখ্যায়িত করেছেন।
বিচার বিভাগকে স্বাধীন রাখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সবার
গণতন্ত্রের পথ চলা কতটা মসৃণ হবে, তা নির্ভর করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর। আর বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপরই নির্ভর করে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ। বিশ্বের যেসব দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেসব দেশে বিচার বিভাগও স্বাধীন। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা বর্তমানে তুলনামূলক স্বাধীনই বলা যায়। তবে এখনো কিছু ক্ষেত্রে ঘাটতি আছে, যা নিরসনে আইন মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিম কোর্টকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিতে কমাবে মামলার চাপ
আদালতের পাশাপাশি দুপক্ষের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ মীমাংসার প্রচলন আদিম যুগ থেকেই বিদ্যমান। তা ছাড়া আদালত ও মামলা-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে আদালতকেন্দ্রিক বিরোধ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হয়ে থাকে। এ কারণে সবাই উপলব্ধি করতে শুরু করে যে বিকল্প পন্থায় বিরোধ নিষ্পত্তি করাই সবচেয়ে সহজতর ও শ্রেয় পদ্ধতি।
মুসলিম আইনে অভিভাবকত্ব
আরবি ‘হিজানাত’ শব্দ থেকে অভিভাবক তথা গার্ডিয়ান শব্দটি এসেছে। হিজানাত শব্দের অর্থ লালন-পালন, তত্ত্বাবধান ও দায়িত্ব গ্রহণ। অভিভাবক বলতে সে ব্যক্তিকে বুঝায়, যে ব্যক্তির কাছে কোনো নাবালক কিংবা নাবালিকার শরীর, সম্পত্তি বা উভয়ের তত্ত্বাবধান রয়েছে এবং প্রতিপাল্য বলতে তাকে বুঝায়, যার শরীর সম্পত্তি বা উভয়ের জন্য অভিভাবক রয়েছে। মুসলিম আইনের ৩৪৮-৩৬৮ ধারায় এবং ১৮৯০ সালের অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইনে অভিভাবক ও প্রতিপাল্য বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। সাধারণত অভিভাবকত্ব নাবালক-নাবালিকার শরীর, সম্পত্তি ও বিয়ের ক্ষেত্রে বিবেচিত হয়। মুসলিম আইনে ১৫ বছরে পদার্পণ করেনি এমন কোনো নাবালক-নাবালিকাকে বুঝালেও অন্যান্য আইনে নাবালক-নাবালিকা বলতে, যার বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হয়নি এমন কাউকে বুঝায়। উল্লেখ্য, কোনো নাবালক-নাবালিকার শরীর ও সম্পত্তির বিষয়ে অভিভাবক নিযুক্ত হয়ে থাকলে তার বয়স ২১ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত নাবালক বা নাবালিকা হিসেবে বিবেচিত হবে। (ধারা-৩৪৮)।
অর্থঋণ আদালতে করা মামলা নিষ্পত্তিতে কেন বিলম্ব হয়?
মাঝে মধ্যেই আমাদের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়, অর্থঋণ আদালতে করা মামলাগুলো কেন দ্রুত নিষ্পত্তি হয় না! অর্থঋণ আদালত একটি স্পেশাল ‘ল’। মূলত ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায় কার্যক্রম জোরদার এবং ত্বরান্বিত করার জন্যই অর্থঋণ আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। অর্থাৎ একটি বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্যই অর্থঋণ আইনের সৃষ্টি হয়েছিল। প্রশ্ন হলো, সেই বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনে অর্থঋণ কতটা সক্ষম হয়েছে বা আদৌও সক্ষম হচ্ছে কি-না?
বিচার ব্যবস্থায় ডিজিটালাইজেশনের সংকট, কাঠামোগত দুর্বলতা ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা
দেশের আইন ও বিচার ব্যাবস্থা ডিজিটালাইজেশনের পথে অনেকটােই এগিয়ে গেছে। তবে এর ফলে কিছু সংকটও সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া ডিজিটালাইজেশনের কাঠামোগত দুর্বলতায় ভোগান্তিতে পড়ছে বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীরা। আছে আইন প্রয়োগে তথ্যপ্রযুক্ত ব্যবহারের সীমাবদ্ধতাও।
২০০ বছরের পুরনো আইনগুলো খুব বেশি সংস্কার দরকার নেই
বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা এখনো ব্রিটিশদের প্রণীত ফৌজদারি, দেওয়ানি কার্যবিধি, দণ্ডবিধিসহ বিভিন্ন আইনের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও ২০০ বছরের পুরনো আইনগুলো কিছু সংস্কার দরকার হলেও খুব বেশি তা দরকার নেই। আমেরিকার মাত্র ৭টি অনুচ্ছেদ নিয়ে তাদের সংবিধান শত শত বছর ধরে চলছে।