রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের এমডি বদল, নীতি বদল কবে?
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে গত ১৯ সেপ্টেম্বর জারিকৃত এক সার্কুলারের মাধ্যমে দেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ৬টি ব্যাংকের (সোনালী, রূপালী, অগ্রণী, জনতা বেসিক ও বিডিবিএল) ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসারের (এমডি ও সিইও) চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের ইতিহাসে এর আগে আর কখনোই একযোগে এতজন এমডির নিয়োগ বাতিল করা হয়নি। একযোগে এতজন এমডির নিয়োগ বাতিলের বিষয়টি ব্যাংকিং খাতে তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনেকেই তাদের বর্তমান অবস্থান নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তারা মনে করছেন, আরও নিচের পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ব্যাপারেও সরকার এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। যেসব ব্যাংকের এমডিদের নিয়োগপত্র বাতিল করা হয়েছে, তারা সবাই আওয়ামী লীগ সরকার আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন। তারা রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যেসব কর্মকর্তার নিয়োগপত্র বাতিল করা হয়েছে, তার মধ্যে বেসিক ব্যাংকের এমডির চুক্তির মেয়াদ ছিল সাত মাস। অন্যদের চাকরির মেয়াদ এক বছর করে ছিল। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এই ৬ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৩২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো মিলে সার্বিকভাবে ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ মোট ছাড়কৃত ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণদানের শর্ত হিসেবে ২০২৪ সালের মধ্যে ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে বলেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব মোতাবেক, ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরি মাণ ২ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে পরিমাণ দেখাচ্ছে, প্রকৃত খেলাপি ঋণের হিসাব নয়। দৃশ্যমান খেলাপি ঋণের সঙ্গে অবলোপনকৃত ঋণাঙ্ক, পুনঃতপশিলীকৃত ঋণাঙ্ক এবং মামলাধীন প্রকল্পের কাছে পাওনা ঋণ যোগ করা হলে প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকা অতিক্রম করে যাবে। সার্বিক বিবেচনায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোও ভালো নেই। এই অবস্থায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের এমডিদের চুক্তি বাতিল করে নতুন এমডি নিয়োগদান হয়তো তেমন কোনো প্রশ্ন উত্থাপনের সুযোগ নেই; কিন্তু এমডি পরিবর্তন করলেও কি ব্যাংকগুলোর পারফরম্যান্স ভালো হবে বা ব্যাংকগুলো দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারবে তা কি নিশ্চিত করে বলা যায়?
যারা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে ব্যাংকগুলোতে এমডি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন নির্বাচনের মাধ্যমে দলীয় সরকার ক্ষমতাসীন হলে তারাও তো একই পরিণতির শিকার হবেন এটা নিশ্চিত করে বলা যেতে পারে। কোনো পদে কেউ দায়িত্ব প্রাপ্তির পর তিনি যদি তার স্থায়িত্বকাল নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকেন তাহলে তার কাছ থেকে ভালো কাজ কখনোই প্রত্যাশা করা যায় না। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে একজন এমডি কোনো ব্যাংকের উন্নয়ন বা ধ্বংসের জন্য কতটা দায়ী? এমডি বদল হলেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের অবস্থা রাতারাতি পরিবর্তিত হবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়? অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের অনেকেই মনে করেন, ব্যাংকের এমডির কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে পরিচালনা বোর্ড। পরিচালনা বোর্ডে যদি সৎ ও যোগ্য লোক নিয়োগ দেয়া হয়, তারা নির্মোহভাবে দায়িত্ব পালন করেন তাহলে ব্যাংকিং কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালিত হতে বাধ্য। তবে সবার আগে প্রয়োজন সঠিক, বাস্তসম্মত এবং আন্তর্জাতিক মানের নীতিমালা। ব্যাংকের এমডি বদলের চেয়ে বিদ্যমান নীতিমালা পরিবর্তন এবং যুগোপযোগী করাটাই বেশি জরুরি।
ব্যাংকিং সেক্টরের উন্নয়নের জন্য ব্যক্তির চেয়ে নীতির পরিবর্তন বেশি প্রয়োজন। কারণ যিনি এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি চাইলেই নীতির বাইরে যেতে পারেন না। যে কোনো কাজ তাকে নীতির আওতায় থেকেই করতে হবে। এমনকি পরিচালনা বোর্ডও নিয়মের বাইরে কোনো কাজ করতে পারে না। ব্যাংকিং খাতে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব আইনি পরিবর্তন সাধন করা হয়েছে, তা এই খাতের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনছে। এসব পরিবর্তিত নীতিমালার কুফল এখনো সম্যকভাবে প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে না। আরও ৮ থেকে ১০ বছর বোঝা যাবে ব্যাংকিং খাতের কতটা ক্ষতি করা হয়েছে আইনি পরিবর্তন/সংশোধনের মাধ্যমে। সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ব্যাংকিং খাতের জন্য এমন সব আইনি পরিবর্তন সাধন করেছেন, যা মূলত ঋণখেলাপি এবং দুষ্টু গ্রাহকদের স্বার্থের অনুকূলে নিবেদিত। আ হ ম মুস্তফা কামালের আগে যারাই অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের কেউই সরাসরি ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তিনি যেসব আইনি পরিবর্তন করেছেন তার প্রায় সবই ছিল ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের স্বার্থ সুরক্ষায় নিবেদিত।
তবে ব্যাংকিং সেক্টরে সুস্থতা ফিরিয়ে আনতে হলে প্রথমেই এই খাতের সৃষ্ট দ্বৈত শাসনের অবসান ঘটাতে হবে। বর্তমানে ব্যাংকিং খাত কার্যত অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ড এবং এমডি নিয়োগদানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারলেও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের তেমন কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। দ্বৈত শাসন কোনো খাতের জন্যই সুফল বয়ে আনতে পারে না। তাই ব্যাংকিং খাতের সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য সবার আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বাতিল করতে হবে। ব্যাংকিং খাত কীভাবে ভালো চলবে, তা বাংলাদেশ ব্যাংকের চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ভালো জানার কথা নয়। প্রসঙ্গক্রমে গত ৫ বছরে ব্যাংকিং খাতে যেসব আইনি পরিবর্তন করা হয়েছে, তার কয়েকটি উল্লেখ করা যেতে পারে।
দেশের আলোচিত উদ্যোক্তা গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপসহ কয়েকটি উদ্যোক্তা গোষ্ঠীকে নজিরবিহীন অনৈতিক সুযোগ দেয়া হয়েছিল। এসব উদ্যোক্তা গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চলতি হিসাবে চেক জমা দিলে সেই অ্যাকাউন্টে যদি টাকা না থাকে তাহলেও চেক ডিজঅনার বা প্রত্যাখ্যাত হতো না। ব্যাংক চেকে উল্লিখিত পরিমাণ টাকা দিয়ে দিতে। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের টাকা পুনর্ভরণ করত। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর এই বিধান রহিত করা হয়েছে। বিগত সরকার দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার কিছুদিন আগে এমন একটি আইনি পরিবর্তন করা হয়, যা খেলাপি ঋণকে উৎসাহিত করে। আগে নিয়ম ছিল কোনো উদ্যোক্তা গোষ্ঠীর একাধিক প্রকল্পের মধ্যে একটিমাত্র শিল্প প্রকল্প ঋণখেলাপি হলে গ্রুপের অবশিষ্ট কোনো শিল্প-কারখানা ব্যাংক ঋণ পাবার অযোগ্য বিবেচিত হতো। এই আইন পরিবর্তনপূর্বক নতুন বিধান জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোনো উদ্যোক্তা গোষ্ঠীর এক বা একাধিক প্রকল্প ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে খেলাপি হলেও অবশিষ্ট প্রকল্পগুলোতে ঋণদানের ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। এই আইনটি ব্যাংকিং খাতে ঋণখেলাপিদের আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
আগে ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকে একযোগে একই পরিবার ২ জনের বেশি পরিচালক নিয়োজিত থাকতে পারতেন না। তারা অব্যাহতভাবে দুই টার্ম (প্রতি টার্ম তিন বছর করে অর্থাৎ ৬ বছর) দায়িত্ব পালন করতে পারতেন; কিন্তু এই আইনটি পরিবর্তন করে একই পরিবার থেকে একযোগে ৪ জন পরিচালক নিয়োগের বিধান করা হয়। তারা অব্যাহতভাবে তিন টার্ম দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। পরবর্তীতে আইএমএফ আপত্তি জানালে এক পরিবার থেকে একযোগে ৩ জন পরিচালক নিয়োগের বিধান করা হয়। তারা একযোগে তিন টার্ম দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। এর মাধ্যমে ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকে পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দ্বার উন্মুক্ত করা হয়।
সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তাফা কামাল তার দায়িত্ব পালনের শেষ প্রান্তে এসে খেলাপি ঋণ হিসাব পুনঃতপসিলীকরণের ক্ষেত্রে এক বিশেষ সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করেন। আগে কোনো ঋণ হিসাব পুনঃতপসিলীকরণ করতে হলে মোট খেলাপি ঋণের ১০ শতাংশ এককালীন নগদে ব্যাংকে জমা দিয়ে আবেদন করতে হতো। ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ড চাইলে সেই ঋণ হিসাব পুনঃতপসিলীকরণ করতে পারত। কোনো ঋণ হিসাব সর্বমোট তিনবার (মোট ৯ বছরের জন্য) পুনঃতপসিলীকরণ করা যেত। প্রথমবার পুনঃতপসিলীকরণের জন্য মোট খেলাপি ঋণের ১০ শতাংশ, দ্বিতীয়বার ২০ শতাংশ এবং তৃতীয়বারের জন্য ৩০ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট ব্যাংকে দিতে হতো; কিন্তু এই আইনি পরিবর্তন করে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে এক বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ মোট ১০ বছরের জন্য ঋণ হিসাব পুনঃতপসিলীকরণের সুযোগ দেয়া হয়। এতে ঋণের কিস্তি আদায় না করেও খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে দেখানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়।
ঋণ হিসাব অবলোপনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন সাধন করা হয়েছে। আগে কোনো ঋণ হিসাব মন্দমানে শ্রেণিকৃত হবার পর ৫ বছর অতিক্রান্ত হলে উপযুক্ত আদালতে মামলা দায়েরপূর্বক শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ করে সেই ঋণ হিসাব অবলোপন করা যেত। সর্বশেষ সংশোধনী মোতাবেক এখন কোনো ঋণ হিসাব মন্দমানে শ্রেণিকৃত হবার পর ২ বছর অতিক্রান্ত হলেই সেই ঋণ হিসাব অবলোপন করা যাচ্ছে। এ জন্য শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণের বিধান প্রত্যাহার করা হয়েছে। পাওনা খেলাপি ঋণাঙ্কের পরিমাণ ৫ লাখ টাকার কম হলে আদালতে মামলা করতে হচ্ছে না।
ব্যাংকিং খাতে যেসব আইন দ্বারা পরিচালিত হচ্ছিল, তা ছিল আন্তর্জাতিক মানের। আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার সুপারিশ এবং পরামর্শক্রমে এসব আইন প্রণীত হয়েছিল; কিন্তু মহল বিশেষের স্বার্থে এসব আইন পরিবর্তন করা হয়। ফলে ব্যাংকিং খাতের পরিচালন কার্যক্রম দুর্বল হয়ে পড়ে। যেসব আইনি পরিবর্তন সাধন করা হয়েছে, তা একটিও নিয়মিত ঋণ পরিশোধকারীদের স্বার্থ রক্ষায় নিবেদিত নয়। নানা আইনি মারপ্যাঁচে ঋণখেলাপিদের সুরক্ষা দেবার জন্য এসব এসব আইনি পরিবর্তন বা সংশোধন করা হয়েছিল। সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে আমাদের দেশে যারা ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করেন, তারা কোনো প্রণোদনা পান না; কিন্তু যারা বছরের পর বছর ঋণের কিস্তি আটকে রাখেন ব্যাংক তাদের নানা ধরনের সুবিধা প্রদান করে। সুদ মওকুফ বা এ ধরনের সুবিধা কিন্তু কোনো নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধকারীকে দেয়া হয় না। একজন ঋণ গ্রহীতা যদি ১০ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করে ৫ বছর অপরিশোধিত রাখেন, তাহলে তিনি কয়েক কোটি টাকা সুদ মওকুফ সুবিধা পেতে পারেন; কিন্তু কেউ যদি ১০ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করে ৫ বছর নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করেন, তাকে কোনো সুদ মওকুফ সুবিধা দেয়া হয় না।
ঋণখেলাপিদের মধ্যে দুটি শ্রেণি আছেন। তাদের মধ্যে একটি শ্রেণি আছেন, যারা নানা প্রতিকূলতার কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারেন না। এরা প্রকৃত ঋণখেলাপি। আর একটি শ্রেণি আছে, যারা অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে থাকেন। গৃহীত ঋণের অর্থ তারা উদ্দিষ্ট প্রকল্পে ব্যবহার না করে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করেন অথবা বিদেশে পাচার করেন। তারা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ব্যাংকের ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেন না এটা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি। এরা ব্যাংকিং খাতের শত্রু। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানাদিতে অংশ গ্রহণ নিষিদ্ধ করা যেতে পারে। তাদের পাসপোর্ট বাতিল করা যেতে পারে। বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ নানাভাবে গৃহীত খেলাপি ঋণের কিস্তি পরিশোধে বাধ্য করা যেতে পারে।
অন্তর্বর্তীকালিন সরকার যদি সত্যি সত্যি ব্যাংকিং সেক্টরের উন্নয়ন চান তাহলে নির্মোহভাবে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা ঋণখেলাপি তাদের শুধু বন্ধকী সম্পত্তি নয় সমুদয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের সম্পদ হারা করতে হবে। অন্যথায় কোনোভাবেই ব্যাংকিং সেক্টরের উন্নতি হবে না। পর্বতপ্রমাণ খেলাপি ঋণের উপস্থিতি ব্যাংকিং খাতে নানা জটিলতা সৃষ্টি করে চলেছে। তারল্য সংকট, ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি এসবের পেছনেও খেলাপি ঋণের ভূমিকা রয়েছে। শুধু এমডি বদল করে কোনো লাভ হবে না।
এম এ খালেক: অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসি ও অর্থনীতিবিষয়ক লেখক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে