সিআইডিতে মামলার তদন্ত
অভিযোগপত্র দ্রুত আদালতে জমা দিতে হবে
যেসব স্পর্শকাতর ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থানা-পুলিশকে সমাধান করতে বেগ পেতে হয়, সেসব মামলা থানা-পুলিশ থেকে ডিবি পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশে উচ্চতর তদন্তের জন্য সিআইডিতে স্থানান্তর করা হয়। বাস্তবতা হচ্ছে, প্রতি মাসে সারা দেশ থেকে থানা এবং আদালতে হওয়া কয়েক হাজার মামলা তদন্তের জন্য ঢাকার সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে স্থানান্তরিত হয়। আর এভাবে মামলার তদন্ত জমতে জমতে পাহাড়সম হয়ে গেছে। এতে মামলাগুলো সময়মতো সুরাহা হচ্ছে না, যা ভুক্তভোগীর জন্য যেমন হয়রানির, তেমনি দেশের জন্য অপ্রত্যাশিত।
সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে কর্মব্যবস্ততা এবং মামলার চাপ অত্যন্ত বেশি; কিন্তু তারপরও মানবিক খাতিরে আটকে থাকা মামলার অভিযোগপত্র দ্রুত আদালতে জমা দেয়ার দাবি ভুক্তভোগীদের। কারণ, এতে একে তো ভুক্তভোগীদের ভোগান্তি আরও বাড়ে। দ্বিতীয়ত, দীর্ঘদিন মামলা আটকে থাকার কারণে অপরাধীরাও পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে যায়।
গতকাল সোমবার (৬ মে) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একটি বিশেষ প্রতিবেদন বলছে, তদন্ত শেষ হওয়ার পরও সিআইডিতে আটকে আছে ২০০০ মামলা। কিছু কিছু মামলা দীর্ঘদিন, এমনকি ৩ বছরেরও অধিক সময় আটকে আছে। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণের পরও তা আটকে আছে কেবল সিআইডিপ্রধান স্বাক্ষর না করায়। থানা থেকে আসা মামলাগুলোর তদন্ত শেষে সাক্ষ্য স্মারকলিপি (এমই) সিআইডিপ্রধানের কাছে পাঠানো হলে তিনি সই করবেন, তারপর তদন্ত কর্মকর্তারা সেই মামলা নিয়ে আদালতে জমা দেবেন, তারপর প্রকৃত অপরাধীর মূল বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে- বেশ দীর্ঘ প্রক্রিয়া।
দেখা যাচ্ছে বাস্তবিক কারণেই সিআইডিপ্রধানের কাছে মামলার পাহাড় জমে আছে। তিনি সই করে শেষ করতে পারছেন না। এ জন্য সাবেক সিআইডিপ্রধান মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সিআইডিপ্রধানের পক্ষে হাজার হাজার মামলা দেখা সম্ভব নয়। মূলত তদন্ত তদারক কর্মকর্তা হিসেবে বিশেষ পুলিশ সুপার যে মতামত দেন, সিআইডিপ্রধান সেভাবে সিদ্ধান্ত নেন।
অভিযোগ আছে, বর্তমান সিআইডিপ্রধান পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আলী মিয়া আদালতে করা মামলাগুলোর সিদ্ধান্তের জন্য সিআইডির কোনো ডিআইজিকে দায়িত্ব দিচ্ছেন না, আবার নিজেও দ্রুত সিদ্ধান্ত দিতে পারছে না। ফলে অভিযোগপত্রের দীর্ঘসূত্রতার কারণে আদালত মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু করতে পারছে না। সিআইডিপ্রধান অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বাস্তবতা যাই হোক- আমরা মনে করি, অভিযোগকারীদের জন্য এটা অসহনীয় ভোগান্তির। বিশেষ করে যেসব মামলা যৌন-নির্যাতনের মতো স্পর্শকাতর বিষয়। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি মামলা আদালতে তুলতে তুলতেই অভিযোগকারী বিদেশে পালিয়ে গেছেন, এমন নজিরও রয়েছে। তাই মানবিক দিক বিবেচনা করে মামলার অভিযোগপত্র যত দ্রুত সম্ভব আদালতে জমা দেয়ার দাবি আমাদেরও। তাই মামলাগুলোর জটিলতা দূর করতে সংশ্লিষ্টরা দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেবেন- এমনটিই প্রত্যাশা।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে