‘বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে’
মেয়েদের স্কুলে উপস্থিতি বাড়লেও, সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের বাল্যবিবাহ পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপের দিকে যাচ্ছে।
‘বাংলাদেশে শিশুর অধিকার ও কল্যাণ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ ২০২৪’ শীর্ষক জরিপে এ তথ্য উঠে আসে। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) এডুকো’র আয়োজনে রাজধানীর একটি হোটেলে জরিপটি তুলে ধরেন ইনস্পায়ার অ্যাডভাইসরি অ্যান্ড কনসাল্টিং-এর পোর্টফোলিও ম্যানেজার মোহাম্মদ আদনান রহমান।
মোহাম্মদ আদনান রহমান বলেন, ‘২০২২ সালে ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ ১৮ বছরের আগে বিয়ে করেছিলেন। এই হার ২০২৩ সালে বেড়ে ৪১ দশমিক ৬ শতাংশে পৌঁছেছে এবং এদের মধ্যে ৮ দশমিক ২ শতাংশ ১৫ বছরের আগে বিয়ে করেছেন।’
আদনান জানান, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে বাল্যবিবাহের হার বেড়েছে এবং প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী এই সংখ্যা আরও বাড়ছে।
তিনি উল্লেখ করেন, জরিপটি ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিচালিত হওয়ায় ২০২৪ সালের তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
এক প্রশ্নের উত্তরে আদনান বলেন, ‘জরিপ অনুযায়ী বাল্যবিবাহ বৃদ্ধির কারণগুলো প্রায় একই রকম রয়ে গেছে– দারিদ্র্য, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব, ধর্মীয় বিষয়, নিয়ন্ত্রণহীন ডিভাইস ব্যবহার এবং জলবায়ু সমস্যা।’
তিনি বলেন, ‘মোবাইল ডিভাইস এবং ইন্টারনেটের অবাধ ব্যবহারের কারণে কমবয়সী কিশোর-কিশোরীদের যৌন সক্রিয় হওয়ার ঘটনা দেখা গেছে, যা অনেক অভিভাবককে তাদের সন্তানদের দ্রুত বিয়ে দিতে বাধ্য করেছে।’
অনুষ্ঠানে পপি’র উপ-পরিচালক সিনা চৌধুরী বলেন, ‘বাল্যবিবাহ শুধু দূরবর্তী গ্রামীণ এলাকায় নয়, শহর এবং শহরতলীতেও বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
‘ভিউজ বাংলাদেশ’ এর সঙ্গে আলাপকালে সাতক্ষীরাভিত্তিক এনজিও ‘উত্তরণ’র সমন্বয়কারী ফাতিমা হালিমা আহমাদ বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট দারিদ্র্যের কারণে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের বিয়ে দিচ্ছেন। পাশাপাশি, কম বয়সে সন্তানদের যৌন সক্রিয় হওয়ার ঘটনা দেখে অভিভাবকরা তাদের সম্মান রক্ষার জন্যও বিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এমনকি ছেলেদের বিয়ের ঘটনাও বেড়েছে।’
এডুকো বাংলাদেশের পলিসি ও অ্যাডভোকেসি ম্যানেজার হালিমা আক্তার শিশুদের কল্যাণে পৃথক অধিদপ্তর গঠন এবং যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন প্রণয়নের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ বলেন, ‘জাতির উন্নয়নে শিশুদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক এনজিওগুলো সরকারের সাথে হালনাগাদ তথ্য ভাগাভাগি করলে তা সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করবে।’
অনুষ্ঠানে এডুকো বাংলাদেশের প্রোগ্রামস ডিরেক্টর আব্দুর রহিম এবং এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক আনোয়ার হোসেনসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে