চীন বাংলাদেশের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে কার স্বার্থে
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস একটি প্রতিনিধি দলসহ চার দিনের সফরে আগামী ২৬ মার্চ চীন যাচ্ছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের পর এটাই ড. মোহাম্মদ ইউনূসের প্রথম দ্বিপক্ষীয় রাষ্ট্রীয় সফর। তাই এই সফর ঘিরে বিশ্লেষকদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সাড়ে ১৫ বছরের একনায়কতান্ত্রিক স্বৈরশাসনের অবসানের পর পরিবর্তিত পরিপ্রেক্ষিতে এই সফর বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তাই পর্যবেক্ষক মহল ড. মোহাম্মদ ইউনূসের সম্ভাব্য চীন সফরকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছেন। কারণ জুলাই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ৫ আগস্ট সরকার পতন হলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। ভারত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে এবং নিরাপত্তা বিধান করেছে।
আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাত্যাগী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দেবার জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে অনুরোধ জানানো হলেও দেশটি তাতে সাড়া দেয়নি। এ নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। শেখ হাসিনা ইস্যুতে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় আগামীতে আরও খারাপ হবার আশঙ্কা রয়েছে। এই অবস্থায় চীন বাংলাদেশের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা চাইছে বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও উন্নত এবং মজবুত করার জন্য। চীন ড. মোহাম্মদ ইউনূসকে নেবার জন্য বিশেষ বিমান পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে। এতে অনুধাবন করা যায় চীন ড. মোহাম্মদ ইউনূসের সফরকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে। ড. মোহাম্মদ ইউনূসের সম্ভাব্য চীন সফর অত্রাঞ্চলের ভূরাজনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চীন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেকে সমর্থন না করলেও পরবর্তীতে তারা বাংলাদেশের হিতাকাঙ্ক্ষী হিসেবে নিজেদের প্রমান করেছে। চীন আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশের অবস্থানকে সমর্থন জুগিয়েছে। চীন একটি আদর্শিক রাষ্ট্র। চীনের রাষ্ট্রীয় কাঠামো সমাজতান্ত্রিক আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত। চীন সমাজতান্ত্রিক আদর্শের ধারক হলেও তারা বাইরের বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেদের আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নিজেদের বিকশিত করে চলেছে। কয়েক দশক ধরে চীন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থার মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত করছে। দেশটি ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থার সুবিধা পূর্ণ মাত্রায় ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চীনের অর্থনৈতিক অবস্থা ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে। আর এটা কে না জানে যে, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একটি দেশের অবস্থান নির্ণীত হয় অর্থনৈতিক শক্তির ভিত্তিতে। অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল অথচ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নেতৃত্ব করছে এমন একটি দেশের দৃষ্টান্তও দেখানো যাবে না। একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা কয়েক বছর আগে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। তাতে বিশ্ব অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি তুলে ধরা হয়েছিল। সংস্থাটির মতে, চীন যেভাবে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন করে চলেছে তা অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সালের আগেই দেশটি অর্থনৈতিক শক্তির বিবেচনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অতিক্রম করে যাবে।
সাম্প্রতিক দশকগুলোতে চীন বিস্ময়কর উন্নয়ন এবং অগ্রগতি অর্জন করেছে। জাপান বিশ্ব অর্থনীতিতে ৪৪ বছর ধরে নিজেদের দ্বিতীয় অবস্থানে ধরে রাখতে সক্ষম হলেও কয়েক বছর আগে জাপানকে অতিক্রম করে চীন বিশ্ব অর্থনীতিতে দ্বিতীয় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বিশেষ করে আধুনিক প্রযুক্তিতে চীন বিস্ময়করভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। চীন প্রমাণ করেছে যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায় তাহলে অতিরিক্ত জনসংখ্যা একটি দেশের জন্য সমস্যা নয় বরং সম্পদ। জনসংখ্যা তখনই সমস্যা হিসেবে পরিগণিত হয় রাষ্ট্র যখন জনসংখ্যাকে জনসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়। চীন তার বিপুল জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করেছে। এ ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যান্য দেশ চীনের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে পারে। বাংলাদেশে ২০০০ সাল থেকে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে; কিন্তু আমরা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থার সুফল কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছি। এমনকি ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড কি সে সম্পর্কেও নীতি নির্ধারকদের মাঝে উপলব্ধির অভাব রয়েছে। ফলে জনসংখ্যা এখনো আমাদের জন্য সঙ্কট তৈরি করে চলেছে। চীন কীভাবে তার বিশাল জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করেছে বাংলাদেশ সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা অর্জন করতে পারে।
চীন বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে সহযোগিতা করা ছাড়াও চীন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে চলেছে। এক সময় ভারত ছিল বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে সবার শীর্ষে। বাংলাদেশ তার প্রয়োজনীয় পণ্যের বেশির অধিকাংশই ভারত থেকে আমদানি করত। এখন সেই স্থান দখল করে নিয়েছে চীন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ-চীন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ২৫ ট্রিলিয়ন টাকা। একই সময়ে বাংলাদেশ-ভারতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৪৬ ট্রিলিয়ন টাকা। ঐ বছর বাংলাদেশের মোট আমদানি বাণিজ্যে চীনের অংশিদারিত্ব বৃদ্ধি পায় ১৫ দশমিক ১৭। আর বাংলাদেশ-ভারতের বাণিজ্য হ্রাস পায় ৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ মোট ৬৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য চীনে রপ্তানি করে। এর বিপরীতে চীন থেকে বাংলাদেশ আমদানি করে ২২ দশমিক ৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য।
বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে চীনের বিনিয়োগ ক্রমাগত বাড়ছে। চীন বাংলাদেশে ২১টি ব্রিজ ও ২৭টি পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের কাজ করছে। বাংলাদেশে চীনের দেয়া ঋণের পরিমাণ প্রতি বছরই উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ছে। গত ২ বছরে চীন বাংলাদেশকে প্রতি বছর ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ ঋণ ছাড়করণ করেছে। বাংলাদেশকে ঋণদানকারি শীর্ষ ১০টি দেশ ও সংস্থার মধ্যে চীনের অবস্থান উপরে দিকেই রয়েছে। এ পর্যন্ত চীন বাংলাদেশকে ৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছে। বাংলাদেশ আরো ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সফট লোন চাইবে চীনের কাছ থেকে। বাংলাদেশ চীনের বিনিয়োগের চারণভূমিতে পরিণত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। গত ১০ বছরে বাংলাদেশে আসা চীনা বিনিয়োগের পরিমাণ হচ্ছে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অভ্যন্তরীণ বাজারে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে চীনা পণ্য নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হবার কারণে চীনা উদ্যোক্তারা তাদের বিনিয়োগ অন্যত্র সরিয়ে নেবার চিন্তা-ভাবনা করছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর চীন,কানাডা এবং ব্রাজিল থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বর্ধিত শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনা পণ্যের প্রবেশাধিকার আগের চেয়ে সংকুচিত হয়ে যেতে পারে। চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ তাৎক্ষণিক কোনো ঘটনা নয়। এটা চলছে দীর্ঘ দিন ধরেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বাজারে চীনা পণ্যের উপস্থিতি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে স্থানীয় উৎপাদকরা তাদের পণ্য নিয়ে অভ্যন্তরীণ বাজারে চীনা পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় কুলিয়ে উঠতে পারছে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে, চীন স্থানীয় উৎপাদকদের সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের মুদ্রা ইউয়ানের মূল্যমান কমিয়ে রাখছে। এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য উৎপাদকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। চীন অবশ্য দৃঢ়ভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিযোগ অস্বীকার করে চলেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্য আমদানির ওপর বর্ধিত হারে শুল্কারোপ করায় চীনের তুলনামূলক কম পুঁজি সংবলিত কোম্পানিগুলো তাদের প্রতিষ্ঠান অন্য কোনো গন্তব্যে সরিয়ে নেবার চিন্তা করছেন। এক্ষেত্রে তাদের প্রথম পছন্দ হচ্ছে ভিয়েতনাম। বাংলাদেশ যদি চেষ্টা করে তাহলে অন্তত কিছু চীনা কোম্পানি বাংলাদেশে নিয়ে আসতে পারবে। ড. মোহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরকালে বিনিয়োগ আহরণের বিষয়টি প্রাধান্য পাবে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া চীন এর আগে বাংলাদেশকে যে ঋণ প্রদান করেছে তার শর্ত সহজীকরণ ও কিস্তি পরিশোধের সময় সীমা বাড়ানোর বিষয়টিও আলোচনা হতে পারে। ড. মোহাম্মদ ইউনূস চীন সফরকালে অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি চীনা প্রেসিডেন্ট দেং জিয়াও পিংয়ের সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় আলোচনা বৈঠক করবেন। ড. মোহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরকালে বেশ কয়েকটি চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব চুক্তির আওতায় আগামীতে বাংলাদেশ চীনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন মাত্রায় উন্নীত হতে পারে।
ড. মোহাম্মদ ইউনূসের আসন্ন চীন সফর শুধু অর্থনৈতিক কারণেই গুরুত্বপূর্ণ তা নয়। এর রাজনৈতিক এবং সামাজিক গুরুত্বও রয়েছে। আঞ্চলিক রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ হবার সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হবার পরিপ্রেক্ষিতে চীন বাংলাদেশকে কাছে পেতে চাইবে। কাজেই আগামীতে যদি এই অঞ্চলের দেশগুলো নতুন করে আঞ্চলিক সম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলেও বিস্মিত হবার কিছু থাকবে না। তবে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বাংলাদেশ যদি অতিমাত্রায় চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ে তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যমান সুসম্পর্কের ওপর তার বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের প্রভাব এবং আধিপত্যকে রুখে দেবার জন্য সচেষ্ট রয়েছে।
বাহরাইনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত থাকাকালে আমি প্রত্যক্ষ করেছি এ ধরনের দ্বিপক্ষীয় সফর দুটি দেশের বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়ন ও মেরামতের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। তাই নিশ্চিত করেই বলতে পারি ড. মোহাম্মদ ইউনূসের আসন্ন চীন সফর বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ-চীনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হতে পারে শিক্ষা ও কারিগরি সহায়তা খাত। চীন একটি আদর্শিক রাষ্ট্র। তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী। তাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় সমাজতান্ত্রিক আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত। অন্যদিকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে গণতান্ত্রিক আদর্শ লালন করে থাকে। কাজেই চীনের প্রচলিত শিক্ষা কারিকুলাম থেকে আমাদের হয়তো তেমন কিছু গ্রহণ করার নেই। চীন বর্তমানে কারিগরি জ্ঞানে উন্নত দেশগুলোর সমকক্ষতা অর্জন করেছে। তারা রোবোটিক যুগে প্রবেশ করেছে। চীনের উন্নত কারিগরি জ্ঞান আহরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ উপকৃত হতে পারে। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক শিল্পের যন্ত্রপাতি এবং কাঁচামাল চীন থেকে আমদানি করে থাকে। উদ্যোক্তা উন্নয়ন এবং উৎপাদন যন্ত্র আধুনিকায়নে চীন বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করেছে। শিক্ষক ও প্রশিক্ষক বিনিময় চুক্তি হতে পারে।
বাংলাদেশ থেকে ছাত্ররা উন্নত প্রযুক্তি জ্ঞানার্জনের জন্য চীনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করতে পারে। চীনের উন্নত কারিগরি জ্ঞানার্জনের জন্য আমাদের এখানে চীনা ভাষা শেখার ব্যবস্থা করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনা ভাষা শেখার ব্যবস্থা আছে, তবে তা খুবই সীমিত পরিসরে। চীনা ভাষা শিক্ষা কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে শিক্ষা বিনিময় কার্যক্রমের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ এবং ফাহিয়েনের ভ্রমণ বৃত্তান্ত থেকে বাংলাদেশ ও চীনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বিবরণ পাওয়া যায়। এক সময় বাংলাদেশি পন্ডিত শ্রীজ্ঞান অতীশ দ্বীপঙ্কর চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে সুনাম অর্জন করেছিলেন। চীনের বৌদ্ধ ভিক্ষুরা এদেশে এসে শিক্ষা বিস্তারের কাজ করতেন। পুরোনো ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় আবারও বাংলাদেশ ও চীন শিক্ষা ও কারিগরি জ্ঞান বিনিময়ের ক্ষেত্রে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করতে পারে। এখনো বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন চীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছে। চীনের কিছু ছাত্রছাত্রীও বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করছে।
বাংলাদেশ ও চীন যেহেতু পরস্পর বন্ধুপ্রতীম দেশ তাই আমাদের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আগামীতে আরও দৃঢ় হবে এটাই স্বাভাবিক। চীন পরীক্ষিত বন্ধু। চীন কোনো দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করলে বিপদের দিনে তারা পাশে এসে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং নিরাপত্তা বিধানের ক্ষেত্রে চীনের সহায়তা প্রয়োজন হতে পারে। ড. মোহাম্মদ ইউনূসের চীন সফর বাংলাদেশ চীন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও উন্নত এবং গতিশীল করবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী: সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক রাষ্ট্রদূত।
অনুলিখন: এম এ খালেক
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে