সিনেমা: মুসলিম দেশগুলোতে
সিনেমা। এই শব্দটির ব্যাপকতা, প্রভাব ইদানীং অনেক বেশি। জনরুচির প্রাধান্য দিতে কিংবা জনরুচিকে প্রভাবিত করতে পারে এই মিডিয়াম। তাই সাধারণ মানুষের রুচি বা অভিরুচি মাথায় রেখেই বেশিরভাগ সিনেমা তৈরি হয় দেশে দেশে, বিশ্বে। কিছু সিনেমা আবার নির্মাতা নিজের ভালোলাগা, দর্শন, দায়িত্ব এবং দায়িত্ববদ্ধতার নিরিখে নির্মাণ করেন। তবে এসব সিনেমা ব্যাপকভাবে দর্শকদের কাছে পৌঁছায় না। একটা নির্দিষ্টসংখ্যক দর্শকের কাছে অজানাই থাকে। তবে বিভিন্ন দেশের বিভিন্নরকম সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকে। থাকে ভ্যালুজ, ইডিওলজি, ট্যাবু এবং ধর্মীয় ইথিকসের বেড়াজাল, যা সিনেমার ভেতর স্বাধীনতাকে সংকুচিত করে দেয়। আমরা এটাও জানি, রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম হয় না, হয় ব্যক্তির।
রাষ্ট্রের কোনো ধর্মের প্রয়োজন নেই। তারপরও বিশ্বের অনেক দেশের স্ট্রেট রিলিজিয়ন রয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশে আছে ইসলামিক শাসন ব্যবস্থা। সেখানে সিনেমার ফ্রিডম বারবার হয়েছে বাধাগ্রস্ত। তবুও কিছু দেশে কঠিন পরিস্থিতি মুখোমুখি হয়ে সিনেমাকে এগিয়ে নিয়েছে। হয়েছে নির্মিত। আসুন আমরা বৈরী পরিস্থিতির ভেতরও সিনেমায় যেসব দেশ কাজ করে চলেছে এমন কিছু দেশের সিনেমা পরিস্থিতি জানার চেষ্টা করি। এটা সত্য যে, প্রতিটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশের সিনেমার কিছুটা আলাদা এবং স্বতন্ত্র কালচার রয়েছে, যা হিস্ট্রি এবং বেইজ উভয় ক্ষেত্রেই ভিন্ন। হিস্ট্রিক্যাল উপাদানের মধ্যে রয়েছে মূল ঘটনা এবং ট্রিগার পয়েন্ট যা মধ্যপ্রাচ্যে সিনেমার সূচনা বা উত্থান ঘটিয়েছে। ফান্ডামেন্টাল মেটার বর্তমান প্রতিষ্ঠান অথবা সিস্টেমগুলোকে সংজ্ঞায়িত করে যা লোকালি, ইন্টারন্যাশনালি সিনেমার অর্থায়ন, উন্নয়ন, প্রদর্শনীকে করে সহজতর।
মুসলিম দেশগুলোর জন্য ২০১১ সালটি গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়পর্বে, আরববিশ্বের অনেক দেশে পরিবর্তন সূচিত হয়। ইসলামী গণজাগরণ, এটা একটি মৌলিক অন্তর্নিহিত পরিবর্তন এনে দেয় কিছু ভূখণ্ডে। বিশেষ করে বাহরাইন, লিবিয়া, ইয়েমেন, তিউনিশিয়া, মিশর এবং সৌদি আরবে। আর ইরানের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকজীবনে আসে এক মৌলিক পরিবর্তন। কঠোর অনুসরণ নির্মাতাদের ভিন্ন পথে হাঁটতে বাধ্য করে। কখনো তা মেটাফরিক। কখনো হয়ে উঠে পোস্ট কলোনিয়াল ইমেজিক। এই গণজাগরণ কি বিপ্লব অধ্যুষিত আরব দেশগুলোর সিনেমার নতুন কোনো অধ্যায়ের সূচনা করতে পেরেছে? পেরেছে বা পারিনির মধ্যবিন্দুতে আলো ফেলে দেখা দরকার কি তার ফল। আপডেট।
বলা যায়, আরব সিনেমার প্রধান ধারা গড়ে উঠেছে মূলত মিশরে। প্রচুর সিনেমা তৈরি হয়েছে মিশরে এবং আরব বিশ্বে মিশরের ফিল্মের ব্যাপক জনপ্রিয়তাও রয়েছে। এক সময় মধ্যপ্রাচ্যের হলিউড বলা হতো মিশরকে। মিশর, ১৯২৭ সালেই সিনেমা নির্মাণের সূচনা করে। নির্বাক সে সিনেমাটির নাম ছিল ‘লায়ল’। তারপর ধারাবাহিকভাবেই তারা সিনেমা করে গেছে। একের পর এক সিনেমা। যদিও উত্থানপতন মেনেই এগিয়েছে শিল্প যাত্রা। সঙ্গে তুলনা করলে অবশ্য বাংলাদেশের থেকে পুরোনো তাদের সিনেমা যাত্রা।
পরে মিশরে সিনেমা একটি কালচারাল শিল্পপণ্য হিসেবে পরিচিতি পায়। আরব কালচারনির্ভর সিনেমা মেকিং ও তার বিস্তার ব্যাপকভাবে ঘটতে থাকে। বিগত কয়েক দশকে আরব দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়েও মেলোড্রামা টাইপের সিনেমা নির্মিত হচ্ছে বেশিহারে; কিন্তু দেশটিতে এমনকি সত্তরের দশকে নির্মিত সাদাকালো সিনেমাতেও সমাজ এবং মানব সম্পর্কের ইনার উঠে আসতো তাদের সিনেমায়। যা প্রগতিশীল জনরার ছিল। দেশটির এখনকার অনেক চলচ্চিত্র নির্মাতারা বলছেন সিনেমায় প্রেমের দৃশ্য দেখানোর সময় অনেক নিয়ম মেনে চলতে হয় তাদের। আগের মতো ফ্রিডম নেই নির্মাণে। ফলে অনেক বুদ্ধিমান বা প্রতিভাবান সিনেমা মেকার রূপক ও মেটাফরের মাধ্যমে গল্প বলার চেষ্টা করে, এতে সিনেমার গুণগত মান বেড়ে যায়, কাব্যিক হয়ে ওঠে। বিশেষ করে ইরানের সিনেমা মেকাররা এইভাবে সিনেমা মেকিং করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে। আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালগুলোতে এদের সিনেমা স্থান করে নিচ্ছে। পুরস্কৃতও হচ্ছে।
২০১১ সালটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দেশগুলোর আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনে আরব বসন্তের প্রভাব পড়ে জোরালোভাবে। যা কালচারাল ইস্যুতে একটি নতুন বাধ্যবাধকতা তৈরি করে। এক সময় পর্দায় যা দেখানো হতো স্বাভাবিকভাবে, আজ তা নিয়েই উঠছে নানা বিতর্ক। যেমন ১৯৭১ সালে নির্মিত ‘মাই ওয়াইফ অ্যান্ড দ্য ডগ’ সিনেমায় প্রেমের সিকোয়েন্সে নায়ক-নায়িকাকে বেশ ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখা যায়; কিন্তু আজ সেটা প্রায় অসম্ভব।
তিউনিশিয়া। আরব দেশগুলোর মধ্যে তিউনিসিয়া গুরুত্বপূর্ণ। প্রচুর সিনেমা নির্মাণ হয়েছে সেদেশে। তিউনিশিয়ার পিপল এবং স্যোসাল বিষয় নিয়েই বেশিরভাগ সিনেমা নির্মিত হয়েছে। আরব বিশ্বের বাইরেও জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে তিউনিশিয়ার সিনেমা। কামাল শরিফের ‘আলামতে মালেকিয়াত’-এর মতো সিনেমা উল্লেখযোগ্য। তবে তিউনিশিয়ায় ডকুমেন্টারি ফিল্ম নির্মাণে এগিয়ে আছে। তিউনিশিয়ায় হয়তো বছরে চার-পাঁচটার বেশি ফিচার ফিল্ম নির্মিত হয়; কিন্তু ডকুমেন্টারি নির্মিত হয় বিরতিহীন। তিউনিশিয়ায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যপূর্ণ প্রচুর সুটিং স্পট রয়েছে। বিদেশি অনেক সিনেমা মেকার সেদেশে সুটিংয়ের উদ্দেশ্যে যায়। প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে সিনেমার। সিনেমা ফেস্টিভ্যালও হয়। সামনে এই ধারা আরও ত্বরান্বিত হবে আশা করি।
তিউনিশিয়া ১৯৯৫ সাল থেকে অনিয়মিত ভিত্তিতে সিনেমা জমা দিয়ে আসছে বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্রের জন্য একাডেমি পুরস্কারের আসরে। ২০২৩ সাল পর্যন্ত, দশটি তিউনিশিয়ান সিনেমা সেরা আন্তর্জাতিক ফিচার ফিল্মের জন্য একাডেমি পুরস্কারের জন্য জমা দেওয়া হয়েছে। বেশকিছু স্বীকৃতিও পেয়েছে দেশটির সিনেমা। ‘দ্য ম্যান হু সোল্ড হিজ স্কিন’ সিনেমাটি ৯৩তম আসরে পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল। এটাই প্রথম তিউনিশিয়ান সিনেমা, যা এত বড় আসরে স্বীকৃতি পেল। ডকুমেন্টারি সিনেমা ‘ফোর ডটারস’ও একাডেমিক অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয়েছিল। এর নির্মাতা কাউথার বেন হানিয়া।
ইরান। বিশ্ব সিনেমার ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল নাম। এর সাফল্য কথা লিখতে হলে আলাদাভাবে লিখতে হবে। পরিসরও বড় হবে। আরব দেশগুলোতে সিনেমা ভুবনে ইরানের নামই বেশি উচ্চারিত হয়। বিশেষ করে স্বাধীনতাহীন, অবদমিত সামাজের চাপকে টপকিয়ে বা ইসলামী ভ্যলুজের ফাঁক গলিয়ে শ্লীল, শোভন ও সামাজিক ধারার সিনেমার আদর্শ হিসেবে ইরানি সিনেমাকেই মানা হয় মানদণ্ড।
আরব সিনেমা মেকারদের কাছে ইরানি সিনেমা একটি আদর্শ নমুনা। এ কারণে ইরানি সিনেমা মেকাররাও আরব দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলতে এবং সম্পর্ক বিস্তারে আগ্রহী। সারা বিশ্বের সিনেমা মেকারদের প্রেরণার উৎস ইরান। ইরানি সিনেমা। তার আন্তর্জাতিক ভিত্তি রচনা করেন দারিউশ মেহরজুই। ১৯৬৯ সালে তার ‘দ্য কাউ’ সিনেমার মাধ্যমে। ইটালির নিউ রিয়েলিজম বা ফান্সের নিউ ওয়েভ ধারা প্রাণিত হয়ে দারিউস মেহেরজুই ‘দ্য কাউ’ নির্মাণ করে। এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন।
প্রতি বছরই ইরানে জনপ্রিয় ধারার প্রচুর সিনেমা তৈরি হয়, অন্যদিকে দেশটির শৈল্পিক সিনেমা আন্তর্জাতিকভাবে হচ্ছে সমাদৃত। ২০১২ সালে ইরানে নির্মিত সিনেমা ‘এ সেপারেশন’ সেরা বিদেশি ভাষার সিনেমা হিসেবে অস্কার জয় করে। ‘এ সেপারেশন’ ও ‘দ্য সেলসম্যান’ আসগর ফারহাদি নির্মিত পরপর দুটি সিনেমা বিদেশে সুনাম অর্জন করে। অন্যতম সেরা সিনেমা মেকার ইরানের, আব্বাস কিয়রোস্তামি। কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পুরস্কার পাম দোর অর্জন করেছেন তার ‘টেস্ট অব চেরি’ সিনেমার জন্য। ইরানি সিনেমা মেকারদের মধ্যে বাহমান ঘোবাদি, মহসিন মাখমালবাফ, সামিরা মাখমালবাফ, হিনা মাখমালবাফ, তাহমিনা মিলানি, জাফর পানাহি, মাজিদ মাজিদি, মোহাম্মদ রসুললুফ প্রমুখ অন্যতম। তারা নিজ নিজ প্রতিভার সাক্ষর তাদের সিনেমায় রেখে চলেছেন। অর্জন করেছেন অনেক আন্তর্জাতিক পুরস্কার। স্বীকৃতি।
তুরস্ক। ইলমাজ গুনে। তিনি সারা বিশ্বে তুরস্কের সিনেমাকে মর্যাদার আসনে বসিয়েছেন। (ইলমাজ গুনে, এপ্রিল ১৯৩৭-৯ সেপ্টেম্বর ১৯৮৪) ছিলেন একজন কুর্দি সিনেমা নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার, লেখক, অভিনেতা এবং রাজনৈতিক কর্মী। তিনি তুর্কি সিনেমা শিল্পে দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তার অনেক কাজ একটি দূর-বাম দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি করা হয়েছিল এবং তুরস্কের শ্রমিকশ্রেণির মানুষের দুর্দশার জন্য নিবেদিত হয়েছিল। ১৯৮২ সালে কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘ইওল’ (দ্য রোড) সিনেমার জন্য পালমে ডি-অর জিতেছিলেন।
ইলমাজ গুনে রাজনীতির কারণে ২০ বছর জেল খেটেছেন তুরস্কের কারাগারে। জেলে থেকেই তিনটি সিনেমা পরিচালনা করেছেন। সিনেমাগুলোর স্ক্রিপ্ট এমনভাবে তৈরি করেছেন, যাতে তিনি জেলে থেকেও তা নির্মাণ করতে পারেন, স্ক্রিপ্ট লিখেছেন প্রতি মিনিটের শট বিভাজন করে। জেল থেকে তার নির্দেশনা নিয়ে শুট করতেন স্ক্রিপ্ট ধরে তার সহযোগীরা। একটা বড় অংশই এভাবে করা হয় এই সিনেমার। যখন সিনেমা প্রায় শেষের দিকে, তখন ইলমাজ গুনে জেল থেকে পালিয়ে ইউরোপের কোনো এক দেশে চলে যান, নিরাপত্তার জন্য গোপন রাখেন দেশের নামটি। সেখানে তিনি এ সিনেমার এডিটিং শেষ করে কান উৎসবের অফিসে নিজ হাতে সিনেমা নিয়ে হাজির হোন। মুগ্ধ হয়ে যায় সিনেমাটি দেখেই জুরিরা। গণদাবি তৈরি হয়েছিল পুরস্কারের পর, ইউরোপজুড়ে।
তাছাড়া তুরস্কের বর্তমান সময়ের উজ্জ্বল তারকা নির্মাতা নুরে বিলগে জিলান। তার ‘উইন্টার স্লিপ’ ‘ওয়ান সাপনেটাইম অনাতোলিয়া’ ও ‘থ্রি মাঙ্কি’। সিনেমাগুলো ব্যাপকভাবে তুরস্কের নাম আলোকিত করেছে আন্তর্জাতিক ফেস্টিভ্যালে। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান, দেশটির স্বাধীনতার পর থেকে স্যোসাল কালচারে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে সিনেমা। পাকিস্তানি সিনেমা ললিউড নামে পরিচিত। সব দেশের মতো ওখানেও দুটি ধারায় রয়েছে সিনেমায়। মূলধারা ও বিকল্প ধারা। উর্দু ও পাঞ্জাবি ভাষায় নির্মিত হয় সিনেমা।
তবে দেশের অন্যতম বড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ললিউড, যার ভাষা উর্দু। জয়ল্যান্ড নামের একটি সিনেমা ২০২২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়। প্রশংসিত হয়। পাকিস্তানি সিনেমার ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, ১৯৪৮ সাল থেকে নির্মিত হয়ে আসছে বিভিন্ন রকম সিনেমা। তবে ১৯২৯ সালে প্রথম সিনেমা নির্মিত হয় পাকিস্তানে। আবদুর রশিদ কারদার নির্মিত সিনেমাটির নাম ‘হুসন কা ডাকু’। স্বাধীন হবার পর প্রথম পাকিস্তানি সিনেমা ছিল, তেরি ইয়াদ। নির্মাতা দাউদ চাঁদ। তাছাড়া পাকিস্তান ধারাবাহিকভাবে নির্মাণ করে আসছে বাণিজ্যিক ফর্মুলা সিনেমা, যা জনরুচির নিরিখে গ্রহণীয়।
মালেয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াতেও সিনেমা নির্মাণ হয়। সেসব দেশের সিনেমাও সারা বিশ্বে সমাদৃত। আমরা (বাংলাদেশ) দেখেছি, সেসব দেশের অনেক সিনেমা। ১৯৭০-এর দশকে, সৌদি আরবের জনগণ সিনেমা হলে গিয়ে সর্বশেষ সিনেমা দেখেছে। পরবর্তীতে দেশটির কট্টরপন্থি ইসলামিক নেতাদের চাপে সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়ে যায়। সৌদি আরবে সিনেমা হল নেই প্রায় ৪০ বছর ধরে। তবে সম্প্রতি সিনেমা হলের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির রাজ পরিবার। সিনেমা হল চালু করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। ৪০টি সিনেমা হল নির্মিত হবে আগামী ৫ বছরে, ১৫টি সৌদি শহরে।
তার অংশ হিসেবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সিনেমা হল চেইন অ্যামেরিকান মুভি ক্ল্যাসিকস বা এএমসির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে দেশটির। বলা চলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সৌদি আরবে সিনেমার বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু হবে এবং নির্মিত হবে প্রচুর সিনেমা। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ছাড়াও পশ্চিম এশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকার কিছু অংশকেও বোঝায়।
হ্যাঁ, কমবেশি সব দেশেই সিনেমার চর্চা হয় বা শুরু হয়েছে। মিশর, ইরান, বাহরাইন, ইরাক, ইসরায়েল, জর্ডান, কুয়েত, লেবানন, ফিলিস্তিন, ওমান, কাতার, সৌদি আরব, সিরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইয়েমেন এবং কিছু আফ্রিকার দেশকেও এই তালিকায় রাখা যায়। প্রতিটি দেশই স্ট্রাগল করছে সিনেমা নিয়ে। নির্মাণের নতুন ওয়েভ বা ভাষা আয়ত্ত করার জন্য। বর্তমান পরিবর্তীত পৃথিবীতে তথ্য প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সিনেমার নির্মাণ কৌশল এবং ফিলোসফি পরিবর্তন হচ্ছে দ্রুত। এমনকি জনরুচিও পরিবর্তীত হচ্ছে। নিজের দেশের সিনেমা জনগণ দেখতে না পারলেও স্মার্ট পৃথিবীর প্রযুক্তির নিরিখে আনায়াসে হাতে পেয়ে যাচ্ছে আজকের পৃথিবীর সেরা সিনেমাটি। অনলাইনে দেখে নিচ্ছে ইচ্ছা অনুযায়ী। তাই বিধিনিষেধ বা সেন্সরযুক্ত করেও কোনো লাভ নেই নির্মাণ ও প্রদর্শনে। এতে কেবল জাতি হিসেবে ওই দেশটি পিছিয়ে যায়। আখরে কোনো লাভ হয় না।
লেখক: কবি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে