বাজেট ২০২৪-২৫
লাগামহীন মূল্যস্ফীতির হাত থেকে সুরক্ষা দিতে হবে
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে বাস্তবানুগ বলে উল্লেখ করেছেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আতিউর রহমান। তবে তিনি আরও বলেছেন, এই প্রস্তাবনাগুলোকে আরও ন্যায়ানুগ করার সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর এবং উন্নয়ন সমন্বয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. আতিউর রহমান বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেটটি প্রাথমিকভাবে দেখে একে বাস্তবতার প্রতি অনেকটাই সংবেদনশীলই মনে হচ্ছে। একই সঙ্গে এই বাজেটটিতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আরেকটু কল্যাণমুখী হওয়ার সুযোগ যে ছিল, সেটিও মানতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাংলাদেশের প্রস্তাবিত বাজেট ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা, যা ২০২৩-২৪-এ এসে বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকায়। অর্থাৎ এ সময়কালে গড়ে বছরে বাজেটের আকার বেড়েছে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ হারে। আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও চলতি বছরের বাজেটের চেয়ে আকার বেড়েছে। তবে আগের হারে বাড়েনি। মাত্র ৪ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে ৭ লাখ ৯৭ হাজার টাকা হয়েছে। ফলে বাস্তবতার প্রতি সংবেদনশীল বাজেট-প্রণেতারা সংকোচনের পথেই এগোতে চাইছেন- তা দৃশ্যমান।
মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় করে রাজস্বনীতিকে সংযত রাখার অংশ হিসেবে বাজেট ঘাটতি ৪ দশমিক ৫ শতাংশ রাখার আকাঙ্ক্ষাটিও বাস্তবতার নিরিখে মোটামুটি গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন তিনি। তবে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রাকে তিনি উচ্চাভিলাষী মনে করেন। তার মতে ‘মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে তিন শতাংশের মতো কমিয়ে সাড়ে ছয় শতাংশে নামিয়ে আনা মোটেও সহজ হবে না।’ এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য বাজেট ঘাটতি আরও কমিয়ে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণের পরিমাণ কমানোর কোনো বিকল্প নেই।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো সামাজিক খাতে বরাদ্দ, কৃষির জন্য বরাদ্দ এবং বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে সহায়ক খাতে/কর্মসূচিতে/প্রকল্পে বরাদ্দে এই কাটছাঁটের প্রভাব যতটা সম্ভব কম ফেলা যায়, ততই কল্যাণকর বলে মনে করেন ড. আতিউর রহমান। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘প্রায় এক দশক ধরেই আমাদের মোট জাতীয় বাজেটের ১৫-১৭ শতাংশ যাচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাবদ। বরাদ্দের এই ধারাবাহিকতার প্রভাবেই দারিদ্র্য ও অতিদারিদ্র্য হার নাটকীয় মাত্রায় কমিয়ে আনা গেছে।
এবারও বাজেটের ১৭ শতাংশের বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাবদ। তবে লাগামহীন মূল্যস্ফীতির হাত থেকে নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে এখানেও বরাদ্দের ক্ষেত্রে কিছুটা প্রবৃদ্ধি আশা করেছিলাম। মূল্যস্ফীতি যেহেতু ১০ শতাংশের আশপাশে, তাই সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ অন্তত ১০ শতাংশ বাড়ালে কার্যক্রমটির উপকারভোগীরা মূল্যস্ফীতি মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট জোর পেতেন বলে মনে করি।’
আতিউর রহমান: অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে