গভীর নিম্নচাপের প্রভাব
ঢাকায় টানা বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় নাকাল নগরবাসী
রাজধানী ঢাকায় বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিপাতে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা ও যানজট। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে এই বৃষ্টিপাত শুরু হয়, যার তীব্রতা বিকেলের পর আরও বাড়তে থাকে। সন্ধ্যার পর রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে তলিয়ে যায়, ফলে বহু যানবাহন বিকল হয়ে পড়ে এবং যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে আটকে পড়ে দুর্ভোগে পড়েন।
জলমগ্ন হয়ে পড়ে রাজধানীর বিজয় সরণি, বনানী, মিরপুর, শেওড়াপাড়া, ধানমণ্ডি ও উত্তরাসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। সাংবাদিক আবাসিক এলাকায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেয়, যেখানে সড়কের পানি প্রায় গলাসমান হয়ে যায়। রাস্তাঘাট, নালা ও খালের মধ্যে পার্থক্য করা কঠিন হয়ে পড়ে। এতে জনজীবনে স্থবিরতা নেমে আসে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিসগামী মানুষ এবং হাসপাতালমুখী রোগীরা মারাত্মকভাবে ভোগান্তিতে পড়েন।
জলাবদ্ধতার জন্য নগর পরিকল্পনার দুর্বলতা এবং পর্যাপ্ত নিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাবকেই দায়ী করছেন নগরবাসী। দীর্ঘদিন ধরেই বর্ষা মৌসুমে এমন দুরবস্থার মুখে পড়তে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে; কিন্তু প্রতিবারই কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ চোখে পড়ে অল্প কিছু সময়ের জন্য।
নাট্যকর্মী জুলিয়েট ‘ভিউজ বাংলাদেশ’কে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘অপরিকল্পিত নগর ব্যবস্থার ফলে আজকের এই দুর্দশা। দুই সিটি করপোরেশন বর্ষা এলেই কিছু তোড়জোড় দেখায়, কিন্তু বাকি সময় কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায় না। সমস্যার মূল সমাধানে তারা ব্যর্থ।’
প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শেখ সানজিদা বলেন, ‘বৃষ্টি হলেই রাজধানীবাসী নাকাল হয়। আর এইবার তো অবস্থা আরও ভয়াবহ। জলাবদ্ধতায় অফিস থেকে বাসায় পৌঁছাতেই সাড়ে চার ঘণ্টা লেগেছে। সব জায়গায় পানি, কিছু বুঝা যায় না।’
টাঙ্গাইল থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন সরকার জয়; কিন্তু শহরে ঢোকার পরই জলাবদ্ধতায় তার যানবাহন বিকল হয়ে পড়ে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এই শহরে জনগণের কথা কেউ ভাবে না। যদি কেউ ভাবত, তাহলে অন্তত এমন অবস্থায় একটা বসবাসযোগ্য রাজধানী গড়ে তুলত।’
এদিকে, জলাবদ্ধতা ছড়ালেও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচলে বড় ধরনের কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি। বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক রাগীব সামাদ জানিয়েছেন, ‘স্বাভাবিক শিডিউল পরিবর্তনের বাইরে আবহাওয়ার কারণে তেমন কোনো বড় ধরনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটেনি।’
নগর পরিকল্পনাবিদরা মনে করছেন, জলাবদ্ধতা এখন ঢাকার এক প্রকট ও বারবার ফিরে আসা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জলাধার ভরাট, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, অবৈধ স্থাপনা এবং খালগুলোর দখল-দূষণের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। তারা বলছেন, এটি শুধু প্রকৃতি নির্ভর দুর্যোগ নয়, বরং মানবসৃষ্ট দুর্যোগও বটে।
বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, টেকসই নিষ্কাশন ব্যবস্থা ও সচেতন নগর পরিকল্পনা ছাড়া এই দুর্দশা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ঘাটতি এবং দ্রুত নগরায়ণের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিকাঠামো উন্নয়ন না হওয়ায় পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে