Views Bangladesh Logo

এই শীতে বেড়ে গেছে শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগ

পৌষের শুরু থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই জেঁকে বসেছে শীত। এ সময় ঠান্ডাজনিত রোগে কাবু হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। চিকিৎসকদের মতে, শীতে শিশুদের ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের রোগ দেখা দিচ্ছে।

রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বাংলাদেশ শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটসহ সরকারি হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে শিশু রোগীর চাপ।

শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক সৈয়দ শফি আহমেদ মুয়াজ বলেন, গত ২৪ ঘণ্টার রেকর্ড বলছে ইনস্টিটিউটের বহির্বিভাগে ১৮ শিশু চিকিৎসা নিয়েছে। এদের মধ্যে জরুরি বিভাগে ২১০ জন, মেডিসিন বিভাগে ৬০০ জন চিকিৎসা নিয়েছে। এই শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ৭২ জন, সাধারণ ঠান্ডাজনিত রোগে ভুগছে ১৩৫ জন, অ্যাজমা আক্রান্ত ১৮ জন, স্ক্যাবিজে ১৪৪ জন আর ২২১ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত।

এ সময় অভিভাবকদের সতর্ক থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, শৈত্যপ্রবাহের কারণেই দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে অনেক শিশু আসছে চিকিৎসা নিতে। বর্তমানে হাসপাতালে ৪৭ জন নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি আছে। এদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে ৭ জন আর গত ১২ দিনে ৮৩ জন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের বেড আছে ৬৮০টি। প্রতিদিন রোগী আসছেন একশর অধিক। এত রোগী আসছেন যে তাদের জায়গা দিতে পারছি না ফলে অনেক রোগী চলে যাচ্ছেন।’

এই পরিস্থিতিতে শিশুদের প্রতি বিশেষ যত্ন নেয়ার ওপর জোর দেন তিনি। তিনি বলেন, শিশুদের সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। সেই সঙ্গে শিশুকে নিয়ে অযথা যখন তখন বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। ‘স্কুলে যাচ্ছে এমন শিশুদের শীতের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন গরম কাপড় এবং প্রয়োজনে মাস্ক পরাতে হবে।’

তিনি বলে, শিশুদের পারসোনাল হাইজেনিক মেইনটেইন করা শেখাতে হবে। খাওয়ার আগে অবশ্যই হাত ধুতে হবে। বেশি অসুস্থ শিশুদের স্কুলে না পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক না খাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন।

এই শিশুবিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘অনেক সময় ডায়রিয়া মৃত্যুরও কারণ হতে পারে। তাই আপনার শিশুর ডায়রিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়া মাত্র খাবার স্যালাইন দেবেন। নিয়ম মেনে খাবার স্যালাইন ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুকে খাওয়ালে রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠবে। পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়া, জ্বর আসা, পেটে ব্যথাসহ বমি হলে রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয়।’ এক্ষেত্রে দ্রুত একজন চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।

ডা. মুয়াজ বলেন, যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে এমন রোগীরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে ওরস্যালাইন খেতে বিভ্রান্তিতে ভোগেন রক্ত চাপ বেড়ে যাওয়ার ভয়ে। আবার ওরস্যালাইনে চিনি বা গ্লুকোজ থাকে তাই ডায়াবেটিস রোগীরা খেতে ভয় পান।

ডায়রিয়া হলে এসব মাথায় না আনাই সঠিক সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন তিনি। যে কোনো সমস্যায় চালিয়ে যেতে হবে ওরস্যালাইন। স্যালাইন তৈরির প্রকৃত নিয়ম- আধা লিটার পানিতে এক মুঠো গুড়, এক চিমটি লবণ মিশিয়ে তৈরি করা। বাজারে প্যাকেট ওরস্যালাইন তৈরির ক্ষেত্রে আধা লিটার পানিতে প্যাকেটের পুরো ওষুধ দিয়ে স্যালাইন তৈরি করতে হয়।’

তিনি বলেন, শুধু শীতে নয়, এখন বায়ুদূষণেও আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। জ্বর-সর্দি-কাশি গলায় ইরিটেশন হচ্ছে। দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের ব্রংকিউলাইটিস এবং দুই বছরের বেশি বয়সী শিশুদের নিউমোনিয়া দেখা দিচ্ছে। যাদের অ্যাজমা আছে, শীতে তা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

ছয় মাসের কম বয়সী শিশুদের জন্য বুকের দুধ খাওয়ানো খুবই জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু বুকের দুধপানে স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকটা কমে যায়। সময়মতো টিকাগুলো দিতে হবে। যাদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, দুর্বল প্রকৃতির শিশু, যাদের নিউমোনিয়া বারবার হয় বা হওয়ার আশঙ্কা আছে, তাদের জন্য সরকারি টিকার পাশাপাশি প্রতি বছর ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা নিতে পারলে নিউমোনিয়ার ঝুঁকি কমে আসবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ