Views Bangladesh Logo

বায়ুদূষণ রোধে সবাইকে সমান সচেতন হতে হবে

বায়ুদূষণ ঢাকা শহরে পারমাণবিক বোমার মতো হয়ে গেছে। আমাদের ধ্বংসের জন্য হয়তো আর কোনো পারমাণবিক যুদ্ধ লাগবে না, বায়ুদূষণই আমাদের শেষ করে দেবে। ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (আইএআরসি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে বর্তমানে অধূমপায়ীদের মধ্যেও ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

গতকাল বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, টানা চতুর্থ দিন বিশ্বের নগরীগুলোর মধ্যে বায়ুদূষণে শীর্ষে থাকল ঢাকা। গত তিন দিনের মতো আজ বুধবারও ঢাকা বায়ুদূষণে বিশ্বের শীর্ষে আছে। বিশ্বের ১২৩ শহরের মধ্যে বায়ুদূষণে ঢাকার এ অবস্থান তুলে ধরেছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার।

এখন প্রশ্ন, আমরা কি এ শহরে থাকব না চলে যাব? যাব কোথায়! রাজধানী ঢাকা শহরে লাখো মানুষের কর্মস্থল। এ শহরে না থাকলে অনেকেরই হয়তো রুটি-রুজি জুটবে না। বাধ্য হয়েই রাজধানীতে থাকতে হয়। দেশের বেশির ভাগ ভালো সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল এখানে। পাশাপাশি প্রায় সব সরকারি সদর দপ্তরও এখানে। কাজ ও অন্যান্য সেবার সুযোগ বেশি বলে সারা দেশের মানুষ রাজধানীতে ছুটে আসে। ফলে শহরটি পরিণত হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরে। আর এই ঘনবসতিই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে শহরটির জন্য।

বাড়ছে শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, পানিদূষণ। অনেক আগেই ঢাকা শহর বসবাসের অযোগ্য হয়েছে। তাও আমাদের ঢাকা ছেড়ে যাবার উপায় নেই। সরকারও যেন অন্ধ ও বধির। শহরটি উন্নয়নের কোনো চেষ্টাই নেই তাদের মধ্যে। আমাদের যেন এক কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে বন্দি করে রাখা হয়েছে এখানে। বহু বছর ধরেই এ শহরের বায়ুদূষণ নিয়ে কথা হচ্ছে, সংবাদমাধ্যমে বারবার সে খবর প্রচারিত হচ্ছে; কিন্তু সরকারের কর্ণপাত আছে বলে মনে হয় না। বায়ুদূষণ রোধে এ পর্যন্ত কোনো কার্যকর উদ্যোগ চোখে পড়েনি।

এখন, এই যে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হলো, বায়ুদূষণের কারণে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, এতেও নিশ্চয়ই সরকার চুপ থাকবে। রোগে ভুগে মানুষের মৃত্যু আজ রাষ্ট্রের ধর্তব্যের বিষয় না। প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, শুধু ঢাকা শহর নয়, ৩ বিভাগীয় শহরেও দূষণ মারাত্মক। তার মানে আমরা আসলে শহর গড়ে তুলতে পারিনি। শহরের নামে আমরা গড়ে তুলেছি এক ময়লার ভাগাড়। গ্রামেও এমন সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করতে পারিনি, যার কারণে মানুষ গণহারে শহরের দিকে ছুটে না আসে।

এই মারাত্মক মারণাস্ত্র থেকে আমাদের দেশের মানুষকে রক্ষা করতে হবে। বায়ুদূষণের হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে হলে সরকারকে দীর্ঘমেয়াদি সুপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। শহরের লোকসংখ্যা কমাতে হবে। যেখানে-সেখানে যখন-তখন দালানকোঠা গড়তে দেয়া যাবে না। গাড়ি-ঘোড়ার সংখ্যা কমাতে হবে। এবং অবশ্যই ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধ করতে হবে। তার পাশাপাশি দরকার গ্রামের দিকেও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা। গ্রামে কাজ নেই বলে সবাই শহরে ছুটে আসবে এটা কোনো কাজের কথা না। তার মানে সুদূর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রয়োজন। জনসাধারণকেও সচেতন হতে হবে এ বিষয়ে।

যার যার জায়গা থেকে যতখানি পারা যায় বায়ুদূষণ রোধ করতে হবে। সরকারও যেন বায়ুদূষণ রোধে উদ্যোগী হয় তার জন্য সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে। আমাদের সবাইকেই মনে রাখতে হবে বায়ুদূষণ এমন এক বিষ- প্রতিটা শ্বাসে শ্বাসে আমাদের সবার ভেতরেই সেই বিষ প্রবেশ করে। একটি শহরের বাতাস দূষিত হয়ে গেলে মুখে মাস্ক পরে, ঘরে বন্দি থেকে, গ্লাস-তোলা দামি গাড়িতে বসে থেকেও তার হাত থেকে খুব একটা রক্ষা পাওয়া যাবে না।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ