Views Bangladesh Logo

জনপ্রশাসন সংস্কার

কমিশনের প্রস্তাবনা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

Manik Miazee

মানিক মিয়াজী

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের নেতৃত্বাধীন উচ্চপর্যায়ের কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে জনপ্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলির প্রক্রিয়া নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। অনেক কর্মকর্তা আশঙ্কা করছেন, এই পরিবর্তনের ফলে প্রশাসনে রাজনীতিকরণের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমের গতি কমে যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উপদেষ্টাদের কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে নিয়োগ ও বদলির ক্ষেত্রে আইনগত বাধা না থাকলেও, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের ক্ষমতা সীমিত হয়ে যাবে। ফলে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় জটিলতা বাড়তে পারে।

নতুন কমিটির গঠন ও এর কার্যকারিতা
গত মাসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনপ্রশাসন, পুলিশ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মকর্তাদের নিয়োগ, বদলি ও শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ দিতে উপদেষ্টাদের নেতৃত্বে তিনটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বিগত সরকারের সময় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া ৯৯ শতাংশ কর্মকর্তার চুক্তি বাতিল করেছে। পাশাপাশি, অবসরে যাওয়া ১৪ জন কর্মকর্তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যারা বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন।

কর্মকর্তাদের প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সাধারণত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) অনুবিভাগ এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। নতুন কমিটির সুপারিশ বাধ্যতামূলক হলে, এপিডি অনুবিভাগের ক্ষমতা কমে যাবে এবং দক্ষ কর্মকর্তাদের যথাযথ মূল্যায়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।

এদিকে, সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) উপসচিব থেকে সচিব পর্যায়ে পদোন্নতির দায়িত্বে থাকলেও, নতুন কমিটির ভূমিকা কী হবে তা স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা না থাকায় কর্মকর্তাদের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে।

প্রশাসনিক কার্যক্রমের গতির সম্ভাব্য প্রভাব
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘সরকারের এই পদক্ষেপ প্রশাসনের কাজের গতি কমিয়ে দিতে পারে। পদোন্নতি ও বদলি-পদায়ন প্রক্রিয়া মন্থর হলে তা প্রশাসনের কার্যকারিতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাৎক্ষণিক বদলির প্রয়োজন হলে সেটিও জটিল হয়ে উঠবে।’

অন্যদিকে, সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার মনে করেন, এই কমিটি যৌক্তিক। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে পদ-পদবির জন্য প্রশাসনে যে আন্দোলন চলছে, তা সামাল দিতে একটি নীতিগত কাঠামো প্রয়োজন। তবে, সচিবদের সক্রিয় ভূমিকা থাকলে কাজের গতি ধীর হবে না।’

প্রশাসনের নীতি নির্ধারণ ও কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনার প্রয়োজন। নতুন কমিটির ভূমিকা ও ক্ষমতা সম্পর্কে পরিষ্কার নির্দেশনা না থাকলে, প্রশাসনে অস্থিরতা ও জটিলতা তৈরি হতে পারে। এখন দেখার বিষয়, এই নতুন ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রশাসন কীভাবে কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সক্ষম হয়।

রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত জনপ্রশাসন কমিশন বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে। প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেছেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে বুধবার। ইতোমধ্যে কমিশন দুটি রিপোর্ট চূড়ান্ত করেছে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ