মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্তের আগে বন্দিকে কনডেম সেলে রাখা যাবে না: হাইকোর্ট
মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কোনো আসামিকে কনডেম সেলে বন্দি রাখা যাবে না বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। সোমবার (১৩ মে) বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
আদালতের এ রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
এ ব্যাপারে অ্যাডভোকেট শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, মৃত্যুদপ্রাপ্ত তিনজনের উচ্চ আদালতে আপিল শুনানির পূর্বে কনডেম সেলে (মৃত্যু সেল) বন্দি রাখার বিষয়ে ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছিল। ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে উচ্চ আদালত রুল ও নির্দেশনা দেয়।
তিনি আরও বলেন, মৃত্যুদণ্ডের সাজা চূড়ান্ত হওয়ার পূর্বে কনডেম সেলে বন্দি রাখা কেন অবৈধ হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি কতজন নারী ও পুরুষ কনডেম সেলে বন্দি আছে, তার একটি তালিকা আদালতে দাখিল করতে আইজি প্রিজনের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়।
এই আইনজীবী জানান, ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে আজ রায় ঘোষণা করে হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্ত হওয়ার পূর্বে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বলা যাবে না এবং কনডেম সেলে বন্দি রাখা যাবে না। রায়ে বলা হয়, মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে আসামির হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে মামলা নিষ্পত্তি, প্রশাসনিক অনান্য কার্যক্রম ও রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার পরই মৃত্যুদণ্ডের রায় চূড়ান্ত হয়। এরপর নির্জন কক্ষে বন্দি রাখা যাবে।
তিনি বলেন, রায়ে বলা হয়েছে বিশেষ বিবেচনায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত কোনো ব্যক্তির সংক্রামকজনিত সমস্যা বা অন্য কোনো বিশেষ কারণে তার শুনানি নিয়ে তাকে নির্জন কক্ষে আটক রাখা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে। রায়ে বলা হয়েছে, অন্যান্য মামলায় যেরূপ হাইকোর্ট বিভাগে আপিল ও জামিন শুনানি হয় এবং শুনানি শেষে আদেশ হয়, তেমনি মৃত্যুদন্ডের রায়ের বিরুদ্ধে সংক্ষুদ্ধ ব্যাক্তি আপিলের পাশাপাশি জামিনের দরখাস্ত করতে পারবেন। উপযুক্ত আদালত তার জামিন আবেদন বিবেচনা করতে পারবেন।
আদালতের রায়ে দেশের জেল কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে, মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ব্যক্তির বিষয়ে তথ্য অধিকার আইনে কোনো তথ্য চাইলে তা যেন দেয়া হয়। একই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির কর্মকর্তাদেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মৃত্যুদণ্ড সংক্রান্ত মামলার তথ্য সুপ্রিম কোর্ট ওয়েবসাইটে পরিবেশন করার জন্যও আদেশ দেয়া হয়েছে।
অ্যাডভোকেট শিশির মনির জানান, মামলার শুনানি চলাকালে রাষ্ট্রপক্ষ জানায় কারাগার আইন নতুন করে প্রণয়ন করা হচ্ছে। আজ রায়ে আদালত বলেন, রায়ের ফাইন্ডিংস ও পর্যবেক্ষণ নতুন আইনটিতে সংযুক্ত করতে যেন বিবেচনা করা হয়। রায়ে বলা হয়, আগামী দুই বছরের মধ্যে কনডম সেলের আটককৃতদের সাধারণ কয়েদিদের সাথে রাখা নিশ্চিত করতে হবে। বিপরীতে রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে হাইকোর্টের দেয়া এ রায়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
হাইকোর্টে রিট আবেদনকারীরা হলেন-চট্রগ্রাম কারাগারের কনডেম সেলে থাকা সাতকানিয়ার জিল্লুর রহমান, সিলেট কারাগারে থাকা সুনামগঞ্জের আব্দুল বশির ও কুমিল্লা কারাগারে থাকা খাগড়াছড়ির শাহ আলম।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে