সুন্দরবনের করমজলে মিঠা পানির কুমির রক্ষার পদক্ষেপ
নোনা পানির কুমিরের মতোই মিঠা পানির কুমির প্রজননেও পদক্ষেপ নিচ্ছে বন বিভাগ। মিঠা পানির কুমির সংরক্ষণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে আইইউসিএন বা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার।
এ কারণে এই বিলুপ্ত প্রজাতির তিনটি কুমির ফরিদপুর, পাবনা ও নড়াইলের কয়েকটি নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। কুমিরগুলোকে সযত্নে সংরক্ষণ করা হয়েছে বাগেরহাট জেলার পশ্চিম সুন্দরবনে অবস্থিত করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে। করমজলে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রের কুমির বিশেষজ্ঞ এম আজাদ কবির হাওলাদার এ কথা জানান।
এই কুমিরগুলোর মধ্যে একটি পুরুষ, বাকি দুটি নারী প্রজাতির। এদের মধ্যে একটি মেয়ে কুমিরের বয়স ১৪ বছর এবং এটি প্রজননক্ষম। বাকি দুটি অপ্রাপ্তবয়স্ক কুমিরের মধ্যে ছেলেটির বয়স ১২, মেয়েটির ১০ বছর। একমাত্র পুরুষ কুমিরটি প্রজননক্ষম নয় বলে আসন্ন প্রজনন ঋতুতে এদের বংশবিস্তার করা সম্ভব হচ্ছে না।
বনবিভাগ ২০২৫ সাল নাগাদ এই মিঠা পানির কুমিরগুলোর সন্তান উৎপাদনের বিষয়ে আশাবাদী। করমজল বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রের গত দুই দশক ধরে নোনা পানির কুমিরের প্রজনন ও বংশবৃদ্ধি করবার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
আজাদ কবির বলেন, দেশের প্রথম বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র ২০০০ সাল থেকে কুমির, হরিণ এবং বিরল ও বিলুপ্ত প্রজাতির কচ্ছপের বাচ্চা প্রজনন করে আসছে। করমজলের এই কেন্দ্রে ডিম ফুটে বের হয়ে খানিকটা স্বাবলম্বী হলেই এদের নদীতে ও বনে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার ২০০০ সালে মিঠা পানির কুমির বা মার্শ কুমিরকে বিলুপ্ত প্রাণী হিসেবে তালিকাবদ্ধ করবার পর এ দেশের নদীনালায় আর এই কুমির দেখা যায়নি। এই বছরের ১৭ অক্টোবর ভুবনেশ্বরে একটি পুং প্রজাতির ৯০ কেজি ওজনের মিঠা পানির কুমির পাওয়া যায়। ভুবনেশ্বর পদ্মা নদীর একটি উপনদী যা ফরিদপুর সদরের আলিয়াবাদের কাছ দিয়ে বয়ে গেছে।
এর দিন চারেক পর, ২১ অক্টোবর, একটি সাত ফুট চার ইঞ্চি দীর্ঘ মেয়ে কুমির পাওয়া যায় যার ওজন ছিল ৮০ কেজি। এটি ছিল পাবনার সুজানগর উপজেলার উদয়পুরের পাশ ঘেঁষে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদীতে। শেষ মেয়ে কুমিরটির ওজন ছিল ৮০ কেজি, লম্বায় ছয় ফিট পাঁচ ইঞ্চি। একে পাওয়া গিয়েছিল ২৮ অক্টোবর, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মধুমতি নদীতে।
এরপর ৯ নভেম্বর বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রাকৃতিক সংরক্ষণ বিভাগ এদের প্রজনন ও সংরক্ষণের জন্য প্রেরণ করে করমজল বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রে। কুমিরগুলোকে তিনটি পৃথক আবাসনে রাখা হয়েছে। এদের দেওয়া হয়েছে বিরল কচ্ছপগুলোর মত থাকবার জায়গা। কারণ করমজলের আগের কুমিরগুলো সব নোনাজলের।
এই কুমিরগুলো মিঠা পানির মাছ খেয়ে অভ্যস্ত, এরা শুরুতে মাংস খেতে চায়নি। তবে এই তিনটি কুমির আস্তে আস্তে নোনা পানিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে।
কুমির বিশেষজ্ঞ বলেন, নতুন পুকুর খনন করে এদের তিনজনকে সেখানে স্থানান্তরিত করা হবে। তিনি আরও বলেন, পুরুষ কুমিরগুলো বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়ার আগে প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে কুমিরটি ডিম দিতে পারবে না। আগামী ২০২৫ নাগাদ এর ডিম থেকে বাচ্চা জন্ম দেওয়ার কথা ভাবছে কর্তৃপক্ষ।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে