বেপরোয়া তরুণদের নিয়ন্ত্রণ করুন
বেশ কয়েক বছর ধরেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে, রাজধানী ঢাকাসহ বাংলাদেশের জেলা শহরের কিছু ধনী লোকের সন্তান খুব বেপরোয়া হয়ে উঠছে। নৈতিক শিক্ষার অভাবে তারা এক ধরনের উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করছে। রাত-বিরাতে তারা গাড়ি, মোটরসাইকেল নিয়ে খোলা রাস্তায় রেস খেলে, অনেক সময় নেশাগ্রস্ত থাকে, সড়ক দুর্ঘটনায় তারা নিজেরা যেমন প্রাণ হারায়, তেমনি পথচারীদের জন্যও অপত্যাশিত বিপদ ডেকে নিয়ে আসে। তেমনি এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা দেখা গেল গত বৃহস্পতিবার রাতে।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ঢাকা থেকে মোটরসাইকেলে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ৩০০ ফুট সড়কে ঘুরতে গিয়েছিলেন তিন বন্ধু মোহতাসিম মাসুদ, মেহেদী হাসান খান ও অমিত সাহা। তিনজনই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী। রাতে ফেরার পথে বালু ব্রিজের যাত্রী ছাউনির সামনে পুলিশের তল্লাশি চৌকির (চেকপোস্ট) মুখে পড়েন তারা। এ সময় একটি বেপরোয়া গতির প্রাইভেটকার চেকপোস্ট ভেঙে মোটরসাইকেলে থাকা তিনজনকে চাপা দেয়। মুমূর্ষু অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিলে মোহতাসিমকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। মেহেদী রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ও অমিত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পুলিশ জানিয়েছে, এদিন প্রাইভেটকারের চালকের আসনে ছিলেন মুবিন। দুর্ঘটনার পর পুলিশ তার ড্রাইভিং লাইসেন্স পায়নি। গাড়িটির নিবন্ধন মুবিনের বাবা সাবেক সেনা কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুনের নামে। প্রাইভেটকারে মদের একটি খালি বোতল ও এক ক্যান বিয়ার পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তার তিনজন মদ্যপ ছিলেন কি না- নিশ্চিত হতে দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে (ভিক্টোরিয়া) ডোপ টেস্ট করা হয়।
মদ্যপ অবস্থায় বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোয় আগেও দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন অনেক পথচারী। এই যে এত একশ্রেণির তরুণ এত বেপরোয়া হয়ে উঠছে এর কারণ কী? নিঃসন্দেহে এর জন্য সমাজতাত্ত্বিক গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। দেখা যাচ্ছে ধনী পরিবারের সন্তানরাই এমন বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। তাদের ওপর পরিবারের নিয়ন্ত্রণ নেই। সমাজ-দেশ-রাষ্ট্র নিয়েও তাদের তেমন ভাবনা নেই। অর্থের বিকারে তারা সারাক্ষণ নিজেদের দাপট দেখাতেই ব্যস্ত। জীবনের কোনো আদর্শ-দর্শন-মূল্যবোধ-নীতিবোধ না থাকায় দিন দিন তারা উচ্ছৃঙ্খল হয়ে পড়ছে।
সম্প্রতি আমাদের দেশে তরুণদের নেতৃত্বে এক অবিস্মরণীয় গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। এই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেয়া বেশির ভাগ তরুণই ছিল মধ্যবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আগত। যেমনটা আমাদের মুক্তিযুদ্ধেও ঘটেছিল। অস্তিত্বের প্রয়োজনেই মধ্যবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরা যখন জীবনসংগ্রামে ব্যস্ত, ধনী লোকের কিছু অবাধ্য সন্তান তখন উচ্ছৃঙ্খল জীবন কাটাতে ব্যস্ত।
কিন্তু এর তো একটা আশু সমাধান প্রয়োজন। ধনী লোকের সন্তানরা সর্বকালে, সব দেশেই কিছুটা উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করে বটে, তারপরও দেখা গেছে অনেক ধনী লোকের সন্তানরা শিল্প-সাহিত্য-বিজ্ঞানেও আত্মনিয়োগ করেন। কিন্তু আমাদের খুব কম ধনী লোকের সন্তানদের মধ্যেই এটা দেখা যায়। এর কারণ আমাদের দেশের ধনী পরিবারগুলোতেএখনো তেমন সংস্কৃতিচর্চা গড়ে ওঠেনি। ভোগ-বিলাস, দেখানোর মধ্যেই তাদের জীবন পর্যবসিত।
রাত-বিরাতে সন্তান কেন গাড়ি নিয়ে, মোটরসাইকেল নিয়ে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ঘুরবে, এটা অবশ্যই পরিবার থেকে দেখবাল করা উচিত। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও এ বিষয়ে তৎপর হতে হবে। ঢাকার বিশেষ কিছু এলাকায় যে এসব প্রায়ই ঘটে এটা পুলিশের অজানা নয়। ক্ষমতাবান অনেক লোকের সন্তান অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়াতে এসব অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা চাই বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। এবং অপরাধী যতই ক্ষমতাবানের সন্তান হোক, অপরাধ প্রমাণিত হলে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে