অটোরিকশার গতি ও পথ নিয়ন্ত্রণ করা হোক
আগে দেশে ছিল কেবল সিএনজিচালিত অটোরিকশা, তার সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের আনাচে-কানাচে ছেয়ে গেছে এইসব অটোরিকশা। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে এইসব অটোরিকশা মানুষের চলাচলের গতি বাড়িয়েছে, যাতায়াতকে সহজ করেছে। কিন্তু তার সঙ্গে এই অটোরিকশাগুলো প্রচণ্ড আতঙ্কেরও সৃষ্টি করছে। যত্রতত্র এই অটোরিকশাগুলো নিয়ন্ত্রহীন গতিতে চলার কারণে দুর্ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। তাতে প্রাণহানি হচ্ছে অসংখ্য মানুষের।
গতকাল সোমবার (১০ সেপ্টেম্বর) পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে মাইক্রোবাসের সঙ্গে সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে ৬ জন নিহত হয়েছেন। নিহত সবাই সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রী ও চালক। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় চলতি বছর দুর্ঘটনা বেড়েছে ৪৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ এবং মৃত্যু বেড়েছে ৩০ শতাংশ। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত এক হাজার ৪৬৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় এক হাজার ৩৬৭ জন নিহত ও এক হাজার ৭৭৮ জন আহত হয়েছেন।
সড়ক-দুর্ঘটনা বাংলাদেশে প্রায় মহামারীর মতো। কোনো চেষ্টাতেই এটা কমানো যাচ্ছে না। প্রশাসনও এ-ব্যাপারে খুব বেশি তৎপর বলা যাবে না। তা নাহলে মহাসড়কে কীভাবে সিএনজি অটোরিকশা চলে? রাজপথ জুড়ে কীভাবে ভিড় লেগে থাকে বিদ্যুৎচালিত অটোরিকশার?
৫ আগস্টের আগেও ঢাকার রাস্তায় এত ব্যাটারিচালিত চালিত অটোরিকশা দেখা যায়নি। সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর কিছুদিন ঢাকার পথে পুলিশ অনুপস্থিত ছিলেন। তখন অসংখ্য বিদুৎচালিত অটোরিকশা পথে নামে। এখনো ঢাকার রাস্তা দখল করে আছে এই অটোরিকশাগুলো। রিকশার চিকন চাকায় অটোরিকশাগুলো চলে বাস-ট্রাকের সাথে পাল্লা দিয়ে। যে- কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটনার আতঙ্কে যাত্রীরাও অস্থির হয়ে থাকেন। অনেক সময় চালককে গতি কমানোর পরামর্শ দিতে হয় চালককে।
তা ছাড়া এই অটোরিকশাগুলো রাজপথের ব্যস্ত রাস্তা দখল করে থাকায় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের। খবর নিয়ে জানা গেছে, নগরীর নিম্ন এলাকাগুলোয় এই ব্যাটারিচালিত রিকশা নামানোর ব্যাপারে কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করা হয় না। গুলশান-বনানী কিংবা বারিধারায় চাইলেই এসব গাড়ি হুট করে নামানো যায় না। কিন্তু যাত্রাবাড়ি, সায়েদাবাদ, মুগদা, মানিকনগর, মান্ডা কিংবা সিপাহীবাগের মতো এলাকাগুলোতে যে কেউ যখন-তখন নামিয়ে ফেলতে পারে এসব রিকশা। ফলে ঘনবসতিপূর্ণ এসব এলাকায় আরও যানজট বাড়ছে, বাড়ছে রাস্তায় বিশৃঙ্খলাও।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় প্রতিদিন রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকদের বেপরোয়া চলাচলে প্রধান সড়ক ও অলিগলিতে দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। কিছু কিছু ঘটনা আলোচনায় আসছে। বাকি অনেক ঘটনা জানতেও পারছে না মানুষ।
আমরা চাই দ্রুতই এসব অটোরিকশার গতি ও পথ নিয়ন্ত্রণ করা হোক। যেখানে সেখানে যেন এসব অটোরিকশা চলতে না পারে। রাস্তার নিয়মবিধি মেনে চলার মতো আইন সৃষ্টি করা হোক এবং সেই আইনের সুষ্ঠ প্রয়োগ করা হোক। রাস্তায় এমন মৃত্যুর মিছিল বন্ধ হোক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে