Views Bangladesh Logo

প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করুন

ঢাকার যে কোনো রাস্তাতেই হাঁটতে গেলে দেখা যাবে রাস্তার পাশে পড়ে আছে প্রচুর ব্যবহৃত প্লাস্টিক। প্লাস্টিকে ঢেকে আছে ড্রেন, ম্যানহোলগুলো। খালগুলো ভরে আছে প্লাস্টিকে। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা, বালু, ধলেশ্বরীসহ ঢাকার আশপাশের সব নদীতেই প্লাস্টিকের স্তূপ জমে আছে। একই চিত্র কমবেশি সারা দেশে। প্রান্তিক অঞ্চলের কৃষিক্ষেত্রগুলোও প্লাস্টিকে ছেয়ে আছে। এক সময় মানুষ বাড়ির আশপাশে সবজি চাষ করত, অনেক গ্রামের বাড়িতে সেটা আর সম্ভব হচ্ছে না, প্লাস্টিকে ঢেকে গেছে মাটি।

অবস্থাটাও অনেকটা এরকম বাংলাদেশে সব ভূখণ্ডই যেন একদিন ঢেকে যাবে প্লাস্টিকে। প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে এখন বাড়ছে প্লাস্টিকের প্যাকেটজাত খাবার ও অন্যান্য পণ্য- প্লাস্টিকের বোতল, ওষুধপত্রের প্যাকেট, এমন কি প্লাস্টিকের তৈরি আসবাবপত্রও এখন বিক্রি হচ্ছে দেদার। প্লাস্টিক সহজলভ্য; কিন্তু তার ক্ষতি কল্পনাতীত। এর প্রধান ক্ষতি এটি মাটিতে মিশে না।

তাও বড় প্লাস্টিক চোখে দেখা যায়, এ কারণে এর পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত বিপদ কেমন হতে পারে- সেটা সবারই কম-বেশি জানা। তবে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা প্রাণ-প্রকৃতিতে নীরবে বিষ ঢাললেও এর ভয়াবহতা থেকে যাচ্ছে আড়ালেই। বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে- লবণ, আটা, চিনি, মাছ, মাটি, বাতাস, নদী, সমুদ্র এমনকি খাবার পানিতেও রয়েছে মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব, যা মাটি, পানি ও খাবার থেকে দেহে ঢুকে যাচ্ছে। জন্ম দিচ্ছে অসংখ্য রোগ-বালাইয়ের। মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ডেকে আনছে ভয়াবহ পরিণাম।

গতকাল (২২ এপ্রিল) ছিল বিশ্ব ধরিত্রী দিবস। আমরা যে আমাদের ধরিত্রী এবং আমাদের দেশকে নানাভাবে ধ্বংস করছি, তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে যে প্রাকৃতিক বিপর্যয় আসছে, তার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড়, অস্বাভাবিক গরম, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি- এসব সংকট আমাদের ভবিষ্যতের জন্য বড় হুমকি।

ঘনবসতির কারণে আমাদের দেশ এমনিতেই ঝুঁকির মধ্যে আছে। এর মধ্যে পরিবেশদূষণের সবচেয়ে বড় অভিশাপ হয়ে প্লাস্টিক এসেছে আমাদের দেশে। প্লাস্টিকের জন্ম আছে, মৃত্যু নেই- যার কারণে তা সব প্রাণিজগতের জন্য হুমকি। গবেষকরা বলছেন, মাইক্রোপ্লাস্টিকের আকার ৫ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট হয়। দিনের পর দিন শরীরে এই বিষ মিশতে থাকলে দেহে মরণব্যাধি বাসা বাঁধতে পারে।

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ১৬টি গবেষণা থেকে প্রাপ্ত গবেষণা জানা যায়, বঙ্গোপসাগরে প্রতিদিন পড়ছে ৩০০ কোটি কণা, ঢাকার প্রতি গ্রাম ধুলায় ১০৬টি কণা মিশে আছে, বিভাগীয় শহরে প্রতি গ্রাম ধুলায় প্লাস্টিকের কণার সংখ্যা ৫২। ঢাকার বাজারে ১৫ প্রজাতির মাছে রয়েছে ক্ষতিকর প্লাস্টিকের কণা, প্রতি কেজি লবণে আছে ২০৫০টি কণা, প্রতি কেজি চিনিতে ৩৪৩টি কণা। প্লাস্টিকের কণা রয়েছে ভূগর্ভের পানিতেও।

তার মানে মাছ, পানি, চিনি, লবণ- যাই আমরা খাই, তার সঙ্গে আমাদের দেহে মিশে যাচ্ছে প্লাস্টিকের কণা। গবেষকরা জানিয়েছেন, মাইক্রোপ্লাস্টিকের সঙ্গে প্রায়ই তারা কীটনাশক, ভারী ধাতু, পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন (পিএএইচএস), বিসফেনল এ (বিপিএ), থ্যালেট এবং ফ্লেম রিটারড্যান্ট- এমন ক্ষতিকর রাসায়নিক ও দূষণ পেয়েছেন। যেগুলো শরীরে প্রবেশ করে মানবদেহে টিস্যুর ক্ষতি, হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট, প্রজনন স্বাস্থ্যের ক্ষতি, ক্যান্সারের ঝুঁকি, ইমিউন সিস্টেমে দুর্বলতা তৈরি করতে পারে।

প্লাস্টিকের ক্ষতির কথা বলে শেষ করা যাবে না। এর লাভ একটাই, সহজলভ্য ও সস্তা; কিন্তু এ কারণে কি আমরা আমাদের জীবন ধ্বংস করব? আমাদের ভবিষ্যৎ-প্রজন্মের ধ্বংস ডেকে আনব? সব প্রাণ-প্রকৃতির ক্ষতি করব? বিপজ্জনক মাইক্রোপ্লাস্টিক ঠেকানোর উদ্যোগ হিসেবে বিশ্বের প্রথম দেশ বাংলাদেশ ২০০২ সালে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করেছিল। উপকূলীয় অঞ্চলে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকেও লাগাম টানা হয়েছে।

পলিথিন আর প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে দেশজুড়ে চলছে অভিযান। তবু থামছে না এর ব্যবহার। সরকার এ ব্যাপারে নানামুখী উদ্যোগ নিলেও মানুষকে এখনো সচেতন করা যায়নি। সরকার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পলিথিন ও মাইক্রোপ্লাস্টিক যে কতটা ক্ষতিকর, তা জনগণকে অনুধাবন করতে হবে। পরিবর্তন আনতে হবে মানুষের মনোজগতে। সবাই মিলে কাজ করলে প্লাস্টিকের সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ