Views Bangladesh Logo

অমর একুশে বইমেলা ২০২৫

নিয়মবহির্ভূত স্টল বরাদ্দ ও প্যাভিলিয়ন বাতিলের অভিযোগ বাংলা একাডেমির বিরুদ্ধে

ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা ২০২৫। বইমেলায় নিয়ম বহির্ভূতভাবে ১৮টি প্যাভিলিয়ন বাতিল, যাচাই-বাছাই ছাড়া ৮০টির বেশি স্টল বরাদ্দ, ব্যবসায়িক প্রতিহিংসা, স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা ধরনের অভিযোগ উঠেছে বাংলা একাডেমির বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠেছে ছুটির দিনে অপ্রয়োজনীয় বিরতি নিয়েও।

জানা গেছে, নিয়মিত অংশগ্রহণকারী অনেক প্রকাশনাকে বাদ দিয়ে যাচাই-বাছাই ছাড়া ৮৬টি নতুন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে স্টল বরাদ্দ দিয়েছে বাংলা একাডেমি। কেউ কেউ এবারের বইমেলাকে ‘রুহানি দরবার শরিফ’ ও ‘ইসলামি বইমেলা’ আখ্যায়িত করেছেন।

অপরদিকে, সরকারি ছুটির দিন (শুক্রবার, শনিবার) মেলা বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বিরতিহীন চলার নিয়ম থাকলেও এবারের মেলায় শুক্রবার দুপুর ১-৩টা এবং শনিবার দুপুর ১-২টা পর্যন্ত বিরতি দেওয়া হয়েছে।

বিষয়গুলো নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে লেখক-প্রকাশকদের।

বিশেষ করে যেসব প্রকাশনী আগে শর্ত পূরণ করে কখনো বইমেলায় অংশ নেয়ার যোগ্যতা রাখেনি এমন ৮৬টি প্রকাশনীকে যাচাই-বাছাই ছাড়া স্টল বরাদ্দ দেয়ার অভিযোগ করেছেন প্রকাশক-লেখকরা।

বিশেষ করে অনেক প্রকাশনীকে ‘ফ্যাসিস্টের দোষর’ আখ্যায়িত করে স্টল ও প্যাভিলিয়ন দেয়া হয়নি।

ক্ষোভ প্রকাশ করে বিদ্যা প্রকাশের স্বত্বাধিকারী মজিবুর রহমান খোকা বলেন, ‘একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৫-এ নিয়মিত অংশগ্রহণকারী প্রকাশক ছাড়াও এবার ৮৬টি নতুন প্রতিষ্ঠানকে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, এদের আমি চিনি না। কোনোদিন নামও শুনিনি। তবে, বুঝতে অসুবিধা হয় না, কোন বিষয়ের প্রকাশক তারা!’

তিনি বলেন, মেলা বেলা ১১টা থেকে রাত ৮-৯টা পর্যন্ত বিরতিহীন চলার নিয়ম থাকলেও এবারের মেলায় শুক্রবার দুপুর ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত এবং শনিবার দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত বিরতি দেয়া হয়েছে।

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে খোকা বলেন, কার নির্দেশে এই পরিবর্তন হলো? মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে? বাংলা একাডেমির সাধারণ সভার সিদ্ধান্তে না কি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের ঐচ্ছিক ক্ষমতাবলে?

তিনি বলেন, প্রকাশক প্রতিনিধিরা কি এ বিষয়টি খেয়াল করেননি? সকালে যারা মেলায় আসবেন, তারা বিরতির সময় কোথায় যাবেন? মেলা শুরু করেই যদি ২ ঘণ্টা বিরতি দিতে হয়, তার চেয়ে আমি দাবি করব, অন্য দিনের মতো বন্ধের দিনগুলোতেও মেলা ৩টা থেকেই শুরু হোক।

বইমেলায় নিয়মবহির্ভূতভাবে স্টল বরাদ্দ ও প্যাভিলিয়ন বাতিলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার।

‘এই বাংলা একাডেমি লইয়া আমরা কী করিব’ মন্তব্য করে কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার বলেন, ‘নিতম্বের নিচে যে কোনো ধরনের ক্ষমতার চেয়ার থাকলে তার গুণকীর্তনের লোকের অভাব হয় না। অথচ এখন সেই ঘটনারও ব্যতিক্রম দেখছি। বইমেলার স্টল এবং প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ নিয়ে মহাপরিচালককে প্রশংসায় ভাসিয়ে দেয়া পোস্টে সাড়া নেই। কারণ অনিয়ম যে হয়েছে, ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থ হয়েছে, তা সংশ্লিষ্ট সবাই জেনে গেছে।’

জাকির তালুকদার বলেন, ‘কমিটির দুই-তিনজনের অভিযোগ আমলে নিয়ে কোনো তদন্ত ছাড়াই বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। অথচ অভিযুক্ত প্রকাশক জানেন না তার বিরুদ্ধে অভিযোগ কী। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া দূরঅস্ত।’

কবি-সাংবাদিক শিমুল সালাহ্উদ্দিন ফেসবুকে তিরস্কার করে লিখেন, ‘প্রকাশনীর যে তালিকা দেখলাম বইমেলা মোটামুটি রুহানি দরবার শরিফে পরিণত হতে যাচ্ছে। অভিনন্দন হে বাঙালি মুসলমানস।’

বাংলা একাডেমিকে দালাল আখ্যায়িত করে কবি সাম্য রাইয়ান লিখেন, ‘দালালি করার জন্য যদি অমর একুশে বইমেলায় কারও স্টল বাতিল করতে হয়, তাহলে সেই স্টলটি হলো বাংলা একাডেমির৷ এই প্রতিষ্ঠানটির মতো দালালি নিশ্চয়ই এদেশের কোনো প্রকাশনী করেনি৷’

অপরদিকে, বইমেলাকে ইনডোর করার দাবি জানিয়ে ভাষাচিত্র প্রকাশনীর প্রকাশক খন্দকার সোহেল বলেন, বইমেলাকে ইনডোর করার আহ্বানের যৌক্তিকতা নিয়ে অবশ্য একটু ভাবনার প্রয়োজন আছে। দেশে বা বিদেশে যাদের এই বিষয়ে অভিজ্ঞতা আছে, তাদের সঙ্গে কথা বললেই যে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। তা হলো আমাদের প্যাভিলিয়নগুলো ইনডোর করতে কমপক্ষে ৪০ ফুট বাই ৪০ ফুট জায়গা প্রয়োজন। পাশাপাশি স্টলগুলো ইনডোর করে তুলতেও কমপক্ষে জায়গা প্রয়োজন ১৬ ফুট বাই ১৬ ফুট।
প্যাভিলিয়ন বাতিল করা হলো অন্বেষা প্রকাশনীর।

বইমেলায় প্যাভিলিয়ন বাতিল করা হয়েছে অন্বেষা প্রকাশনীর। ক্ষোভ প্রকাশ করে অন্বেষা প্রকাশনীর কর্ণধার ফেসবুকে লিখেন ‘যাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়, মিথ্যে অভিযোগে ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৫’-এ আমার প্যাভিলিয়ন বাতিল করে ‘অন্বেষা প্রকাশন’ পরিবারের (অনেক কর্মচারী, শ্রমিকের মাথার ঘামে একেকটি বই নির্মাণ করা করা হয়। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩০ জন ছাত্র-ছাত্রী প্যাভিলিয়নে বিক্রির সঙ্গে সংযুক্ত থাকে) যে ক্ষতি করা হলো, দোয়া করি মহান আল্লাহ পাক যেন আপনাদের পরিবারকে এই ক্ষতির মধ্যে না ফেলেন।’

পূর্বে যারা প্যাভিলিয়ন পেয়েছিল, এবার বিনা কারণে বাতিল করা হয়েছে-বিষয়টি নিয়ে সময় প্রকাশনীর কর্ণধার ফরিদ আহমেদ ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, বাংলা একাডেমি কোনো কারণ দর্শায়নি। যারা শুরু থেকে প্যাভিলিয়ন পেতেন, এরকম বেশ কয়েকজনের প্যাভিলিয়ন তারা বাতিল করে তিন ইউনিট, চার ইউনিট এরকম করে দিয়েছে। সুনির্দিষ্ট কারণ নেই। তাদের (বাংলা একাডেমির) কমিটিতে যে প্রকাশক প্রতিনিধি ছিল, তারা চেয়েছে এ জন্য পেয়েছে।

বাংলা একাডেমির বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, ব্যবসায়িক হিংসার অভিযোগ তুলে ফরিদ আহমেদ আরও বলেন, ‘কাউকে বাদ দিলে তো তার জবাবদিহি চাইতে হবে। কারও বিরুদ্ধে যে কোনো অভিযোগ উত্থাপন করলে, সে অভিযোগ প্রমাণের ব্যবস্থা করতে হবে। সাক্ষ্য-প্রমাণ দিতে হবে। আর যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাকেও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। যারা অভিযোগ উত্থাপন করল ঠিক তৃতীয় পক্ষকে এটা যাচাই করতে দিতে হবে- অভিযোগ কতটা সত্য। কিন্তু এসব কিছুই করেনি। যারা অভিযোগ করেছে, তারাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ১৮ জনকে ডিমোশন করে দিয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে অমর একুশে বইমেলা ২০২৫ পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. সরকার আমিন ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘বইমেলা পরিচালনা কমিটি গঠিত একটি উপকমিটি স্টল বরাদ্দ করেছে। এই কমিটিতে আছেন সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব ও প্রকাশকদের প্রতিনিধি।’

ছুটির দিনে সময় পরিবর্তন নিয়ে ড. সরকার আমিন বলেন, ‘আগের নিয়মেই মেলা চলবে।’

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ