Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

উল্টোরথে দেশের ব্যাডমিন্টন

Mahbub  Sarkar

মাহবুব সরকার

বুধবার, ১ জানুয়ারি ২০২৫

শীতের ভরা মৌসুমের প্রতিটি দিন ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়দের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় খ্যাপ (দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভাড়ায়) খেলে যে অর্থ আয় হয়, তা দিয়ে সারা বছরের খরচ মেটান শাটলাররা। ভরা মৌসুমে আয়োজিত ইউনেক্স-সানরাইজ বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল চ্যালেঞ্জ ও ইউনেক্স-সানরাইজ বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল সিরিজ তাদের জন্য ‘লস প্রজেক্ট’। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই জাতীয় দলে খেলার মাধ্যমে আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। বাংলাদেশের চিত্রটা উল্টো- ক্ষতি মেনেই জাতীয় দলে খেলেন বাংলাদেশি শাটলাররা।

প্রথমে দেখে নেওয়া যাক, একজন শাটলারের খরচের খাত এবং আয়ের চিত্রটা। দেশের শীর্ষ শাটলারদের মধ্যে কয়েকজন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে থাকেন। পৃষ্ঠপোষকতা বাবদ রেকেট, ব্যাগ, কেডস, জার্সি, শকস, শর্টস পেয়ে থাকেন শাটলাররা। তার বাইরেও প্রতি বছর কিছু সরঞ্জাম কিনতে হয়। সেটা গাঁটের পয়সা খরচ করে। খরচের সবচেয়ে বড় খাত হচ্ছে শাটল-কক কেনা। সব খরচ মেটানোর বড়মাধ্যম খ্যাপ খেলা।

সারা বছরের খরচ মেটানোর জন্য খ্যাপ খেলার সুযোগ থাকে মাত্র তিন মাস। এ সময়ের মধ্যে শীর্ষ শাটলাররা দিন হিসেবে ২০-৩০ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন। একরাতের প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে ৪০-৫০ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন তারা। সন্ধ্যার পর প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে শেষ হয় ভোর রাতে। এভাবে প্রতি মৌসুমে গড়ে ৮ হতে ১৫ লাখ টাকা আয় করতে পারেন একজন শাটলার। এ আয় দিয়েই পরিবারে খরচ নির্বাহের পাশাপাশি মেটাতে হয় নিজের খরচও।
এ সম্পর্কে নিজের নাম গোপন রাখার শর্তে দেশের শীর্ষ এক শাটলার বলেছেন, ‘প্রতি ভরা মৌসুমেই জাতীয় দলের কার্যক্রম থাকে। আমরা দেশের স্বার্থে আর্থিক ক্ষতির দিকটা মেনে নিচ্ছি বটে। ফেডারেশন চাইলে কিন্তু নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও খেলোয়াড়দের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে পারে; কিন্তু বরাবরই সেটা উপেক্ষিত থাকছে, যা দুঃখজনক।’

ওই শাটলার আরও বলেন, ‘অনেক শাটলার খ্যাপ খেলে যে আয় করেন, অঙ্কটা নেহায়েত কমও নয়; কিন্তু আপনাদের মাথায় রাখা প্রয়োজন যে, ওই আয় থেকেই কিন্তু খ্যাপ খেলার সময়ের যাতায়াত, খাবার এবং আনুষঙ্গিক খরচ মেটাতে হয়। কিনতে হয় খেলার সরঞ্জাম। আপনাদের হয়তো জানা আছে, ব্যাডমিন্টনের সরঞ্জাম কিনতে হয় চড়া দামে। সবকিছু বাদ দিয়ে যে অঙ্কটা থাকে তা নগণ্য। দিন শেষে ওই অংশটুকুই পরিবারের জন্য বরাদ্দ থাকছে।’

জাতীয় পর্যায়ে খেলায় সুসজ্জিত ইনডোর স্টেডিয়ামে; কিন্তু অজপাড়াগাঁয়ে খেলতে হয় অপরিকল্পিত কের্টে। যেখানে কেডস এবং রেকেট নষ্ট হওয়া নৈমত্তিক বিষয়, যা শাটলারদের ব্যয়ের খাতকে লম্বা করছে। যে খ্যাপ খেলোয়াড়দের আয়ের প্রধান উৎস, সেখানে কিন্তু ব্যয়ও হচ্ছে। পুরুষ শাটলাররা তাও খ্যাপ খেলে অর্থ উপার্জন করতে পারছেন, নারীদের ক্ষেত্রে সে সুযোগ একেবারেই সীমিত।

হাতে গোনা দু-একজন নারী শাটলার কালেভদ্রে খ্যাপ খেলার সুযোগ পান, বাকিদের আয়ের উৎস বলতে বিভিন্ন সার্ভিসেস দল থেকে পাওয়া সম্মানী। তার বাইরে ঘরোয়া কার্যক্রমে বিভিন্ন ক্লাব হতে কিছু আয়ের সুযোগ আছে বটে; কিন্তু ২০১৫ সালের পর থেকে হিমাগারে আছে ঘরোয়া শীর্ষ লিগ। যে কারণে লিগ থেকে আয়ের পথটাও বন্ধ হয়ে আছে। অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে, বর্তমান সময়ের শীর্ষ শাটলারদের অধিকাংশের কাছে এখনো ঘরোয়া শীর্ষ লিগ অচেনা। চিনবেন কি করে, ২০১৫ সালের পর যে লিগই হয়নি!
তার বাইরে শাটলারদের আয় বলতে দুটি আন্তর্জাতিক আসর চলাকালে খাবার বাবদ পাওয়া দৈনিক ভাতা। এবারের আসরে অঙ্কটা ছিল দৈনিক মাথাপিছু ১৫০০ টাকা। যে কয়দিন খেলা থাকবে, সে কয়দিন হিসেব করে ভাতা দেয়া হয়। জাতীয় দলে খেলার বিপরীতে সদ্য সমাপ্ত আসর থেকে একেক শাটলারের আয় ছিল ৩ হতে ৬ হাজার টাকা গড়ে! প্রায় ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ের আসর থেকে চাইলেও খেলোয়াড়দের প্রাপ্তির খাত আরও বড় করা যেত। সেটা আর্থিক এবং অনুশীলন সুবিধা দিয়েও। প্রতিযোগিতার আগে খেলোয়াড়দের ক্যাম্পে রেখে অনুশীলন করানো এবং ওই সময়ে সম্মানীও প্রদান করা যেত।

কিন্তু সেটা করা হয়নি। জাতীয় দলে খেলা শাটলাররা প্রতিযোগিতা শুরুর আগে যে যার বাড়ি থেকে এসে সরাসরি কোর্টে নেমেছেন। তাদের প্রস্তুতি ছিল নিজস্ব উদ্যোগে। নারী এবং ছেলেদের বিভাগে দুজন কোচ নিয়োগ করা হয়েছিল বটে। সেটা নামসর্বস্ব- জাতীয় দলের কোচ রাখতে হয়, তাই রাখা হয়েছিল। এ কোচরা আসর শুরুর আগে খেলোয়াড় প্রস্তুত করার সুযোগ পাননি। এ অবস্থা খেলতে নামলে যা হওয়ার কথা, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে। জুনিয়র প্রতিযোগিতায় স্বাগতিকদের অর্জনের খাতা ছিল শূন্য। সিনিয়র প্রতিযোগিতা প্রাপ্তি বলতে দুটি ব্রোঞ্জ পদক। ৭০ লাখ টাকার বিনিময়ে ২ ব্রোঞ্জ! তার বাইরে ফায়দা বলতে দুই আসর খেলে কিছু রেটিং পয়েন্ট প্রাপ্তি। যা অন্যান্য আন্তর্জাতিক আসরে বাংলাদেশি শাটলারদের খেলার সুযোগ করে দিতে পারে।

বর্তমানে বিশ্ব ব্যাডমিন্টন সংস্থা কার্যক্রম এমনভাবে সাজিয়েছে যে, বড় আসরে হুট করে গিয়ে অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। নিচু স্তরের প্রতিযোগিতায় খেলে ধাপে ধাপে ওপরে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মানদণ্ড হচ্ছে রেটিং পয়েন্ট। বাংলাদেশি খেলোয়াড়রা সাধারণত খুব বেশি আন্তর্জাতিক আসরে খেলেন না, এ কারণে রেটিং পয়েন্ট কম। তাই চাইলেও তারা যে কোনো আসরে খেলতে পারেন না।

প্রতি বছর বাংলাদেশ এশিয়ান ব্যাডমিন্টন সংস্থার সূচিভুক্ত দুটি প্রতিযোগিতা আয়োজন করে আসছে। এ প্রতিযোগিতাকে ঘিরে পরিকল্পনা সাজালে একদিকে প্রাপ্তির পথ প্রশস্ত হবে, অন্যদিকে রেটিং পয়েন্ট বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশি শাটলারদের আরও বড় মঞ্চে পা রাখার পথ খুলবে; কিন্তু সে পরিকল্পনা দূরের পথ, খেলোয়াড়দের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে উপেক্ষা করেই হচ্ছে সব আয়োজন।

বাংলাদেশ চাইলে তো এমনভাবে প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে পারত, যাতে অর্জনের খাতা সমৃদ্ধ করার সম্ভাবনা থাকত; নিশ্চিত করা যেত খেলোয়াড়দের সুবিধাদিও। এ সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন বলছিলেন, ‘খেলোয়াড়দের প্রস্তুতি এবং আবাসিক ক্যাম্পের অন্যান্য সুবিধাদির জন্য ১২ লাখ টাকার একটা বাজেট তৈরি করা হয়েছিল; কিন্তু খরচের বিপরীতে পৃষ্ঠপোষক সেভাবে পাওয়া যায়নি। এ কারণে এই খাতে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ দলের প্রস্তুতির খাত কর্তন করা হয়েছে।’ যেটা অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা সেটাই কর্তন করা হচ্ছে- উল্টোরথে চলছে দেশের ব্যাডমিন্টন!

যাদের ঘিরে আয়োজন, সেই শাটলাররা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অথচ দেশে আয়োজিত একমাত্র আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন কর্মকর্তা কিন্তু ঠিকই হাতিয়ে নিচ্ছেন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ। ‘ডিম পাড়ে হাঁসে, খায় বাগডাসে’- বাগধারা এখানে খাটছে! প্রায় ৭০ লাখ টাকা বাজেটের দুটি প্রতিযোগিতা থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার মাধ্যম ছিল বিভিন্ন খাতের বিল-ভাউচার। বড় খাত ছিল দুটি প্রতিযোগিতায় ব্যবহৃত ‘শাটল-কক’। অন্যান্য বড় খাত হচ্ছে- আবাসন, ব্র্যান্ডিং, পোশাক, যাতায়াত, খাবার-দাবার। হাতে গোনা দু-একটি ছাড়া বাকি খাতগুলো থেকে অর্থ লোপাট হয়েছে।

ওপরের যে চিত্রটা দেখলেন সেটা সব আমলেই ঘটে আসছে। রক্ষক যখন ভক্ষক হয়ে দাঁড়ায়, খেলোয়াড়দের স্বার্থ সেখানে উপেক্ষিত থাকা স্বাভাবিক। উপেক্ষা আর অপ্রাপ্তিকে বাস্তবতা মেনে নিয়েই পথ চলছেন শাটলাররা।

কখনোও বাংলাদেশ ব্যাডমিন্ট থাকছে ফোরামের (জেলা ও বিভাগীয় সংগঠক পরিষদের) কব্জায়। কখনো খেলাটিকে ঘিরে রাখা বিভিন্ন গ্রুপের কব্জায়। বিগত নির্বাচনে ফোরামের দাপটে কোণঠাসা ছিলেন বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত সংগঠকরা। যে কারণে সাধারণ সম্পাদকের গুরুত্বপূর্ণ পদ ফোরামকে ছেড়ে দিতে হয়েছে। ফোরামের আশীর্বাদ নিয়ে মসনদে আসীন হয়েছেন আলমগীর হোসেন। খেলাটি যখন যার কব্জাতেই থাকুক, একটা বিষয় কমন- শাটলারদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় উপেক্ষিত থাকবেই!

খেলাটিতে অনিয়মই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। যে কারণে অতীতে বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠান ব্যাডমিন্টনে যুক্ত থাকলেও নানা জটিলতার কারণে এখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, যার অন্যতম নিট কনসার্ন গ্রুপ। নারায়ণগঞ্জের রপ্তানিমুখী এ গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান একসময় ঘরোয়া শীর্ষ শাটলারদের মোটা অঙ্কের মাসিক সেলারির প্রদানের মাধ্যমে ব্যাডমিন্টনে যুক্ত ছিল। খেলোয়াড়দের অনুশীলনের স্বার্থে প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে জিমনেশিয়ামও। এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত খেলোয়াড়দের দেশের বাইরে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। নিট কনসার্ন ছাড়াও দেওয়ান টেক্সটাইল অনেক খেলোয়াড়ের আয়ের উৎস ছিল। নিট কনসার্ন অতীত, অতীত হয়েছে দেওয়ান টেক্সটাইলও।

বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠান মুখ ফিরিয়ে নেয়ায় এখন দেশের ব্যাডমিন্টনকে টিকিয়ে রেখেছে বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা বিভিন্ন একাডেমি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে ওঠা এসব একাডেমি নিয়মিত তরুণ প্রতিভা পরিচর্যা করছে। যাদের একটা পর্যায় পর্যন্ত তুলে আনা গেলেও খেই হারাতেও সময় লাগছে না ওই প্রতিভাবানদের। তরুণ প্রবিভাকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন, তা পাওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে একাডেমির সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসা খেলোয়াড়রা সীমাবদ্ধ থাকছেন ঘরোয়া কার্যক্রম পর্যন্ত।

খেলাটির বোদ্ধারা মনে করেন- বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টনে এমন নেতৃত্ব প্রয়োজন, যাদের হতে হবে নির্মোহ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠিত একাডেমিগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের সমন্বয় করা জরুরি। প্রয়োজন পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নিশ্চিত করা। সবচেয়ে জরুরি আন্তর্জাতিকভাবে একটা লক্ষ্য স্থির করে তা বাস্তবায়নে একযোগে কাজ করা; কিন্তু খেলাটি যে ধারায় চলছে তাতে খুব একটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে না।

বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন চলছে ‘জগাখিচুড়ি’ অবস্থার মধ্যে দিয়ে। সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন ফোরামের প্রতিনিধি হিসেবে এখানে এসেছেন। সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসলেও খেলাটির নিয়ন্ত্রণভার আলমগীর হোসেনের হাতে নেই। তিনি কাগজপত্রে স্বাক্ষর করছেন বটে; আসলে বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টনের নাটাই অন্যদের হাতে। ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসবেন- এমন লক্ষণ যাদের মাঝে আছে, তাদের ঘিরেও খুব একটা আশাবাদী হওয়া যাচ্ছে না। সঙ্গে যদি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব যোগ হয়, পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে বাধ্য। যার অর্থ হলো এ খেলায় ভালোকিছু পেতে হলে অলৌকিক কিছু ঘটতে হবে। অন্যথায় বর্তমান ছন্নছাড়া অবস্থা ঝেড়ে ফেলার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে!

মাহবুব সরকার: ক্রীড়া সাংবাদিক।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ