দেশে প্রযুক্তিনির্ভর কর্মক্ষেত্র তৈরি করুন
গত দুদশক ধরে মেধাবী শিক্ষার্থীদের দেশত্যাগের সংখ্যা ভয়াবহ আকারে বেড়েছে। এসব নিয়ে পত্র-পত্রিকায় বহু লেখালেখি হয়েছে। মূলত কাঙ্ক্ষিত চাকরি না পেয়েই মেধাবী ও গ্র্যাজুয়েটরা দেশত্যাগ করতে বাধ্য হন। বিদেশে গিয়ে তারা মোটামুটি নিশ্চিত নিরাপত্তার কোনো কাজ খুঁজে পান। তাতে দেশ হয়তো কিছু রেমিট্যান্স পায়; কিন্তু মেধাবীদের দেশত্যাগ বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগজনক।
সম্প্রতি বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদারও এক অনুষ্ঠানে পুনরায় এ কথা উল্লেখ করলেন, দেশের গ্র্যাজুয়েটরা কাঙ্ক্ষিত চাকরি পাচ্ছেন না। তারা বিভিন্ন দেশে চলে যাচ্ছে। তাই এদেশে প্রযুক্তিনির্ভর আরও কর্মক্ষেত্র তৈরির আহ্বান জানান তিনি। সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, চীন-বাংলাদেশ যৌথ শিল্প গবেষণা, প্রযুক্তিগত অধ্যয়ন ও জ্ঞান বিনিময়ের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে এবং বুয়েট ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে দ্য চাইনিজ এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশ (সিইএবি) এর সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (রাইজ)। সোমবার (৩ জুন) সন্ধ্যায় বুয়েটের ইসিই ভবনের রাইজ সেন্টারের সেমিনার রুমে উক্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
কথাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বাংলাদেশ সরকারের জন্য অবশ্য পালনীয়। প্রযুক্তিনির্ভর এ বিশ্বে প্রযুক্তিনির্ভর কর্মক্ষেত্র তৈরি ছাড়া আর বিকল্প নেই। বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ এখনো কায়িক শ্রমের ওপর নির্ভরশীল। বিদেশি শ্রমবাজারেও বাংলাদেশি শ্রমিকদের কায়িক শ্রমেরই চাহিদা বেশি। প্রযুক্তিনির্ভর খুব কম পেশাজীবী বিদেশে যান বাংলাদেশ থেকে। অন্যদিকে বিদেশি যেসব পেশাজীবী বাংলাদেশে কাজ করতে আসেন তাদের বেশির ভাগই প্রযুক্তিবিদ। ফলে তারা মোটা অঙ্কের বেতন নিয়ে যাচ্ছেন। উল্টো দিকে বাংলাদেশের কায়িক শ্রমিকরা খুব অল্প বেতনে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন বিদেশে গিয়ে।
তাছাড়া আমাদের প্রযুক্তিনির্ভর দক্ষ শ্রমিক কম হওয়ায় বিদেশ থেকে আমাদের অধিকসংখ্যক প্রযুক্তিবিদ গ্রহণ করতে হচ্ছে। দেশের শিক্ষার্থীরাও এতে বেকার থাকছে ও হতাশার শিকার হচ্ছে। দুদিন আগেই ভিউজ বাংলাদেশের এক সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছিল, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালগুলোতে এমন অনেক বিষয় এখনো অন্তর্ভুক্ত, শ্রমবাজারে যার তেমন চাহিদা নেই। সে বিষয়গুলোতেই সরকার অধিকসংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ সৃষ্টি করে রেখেছে। যেন দেখে মনে হয় বেকারত্ব সৃষ্টির জন্যই বোধহয় ওই বিষয়গুলো এখনো বহাল। শিক্ষার্থীরা পড়বে, বেকার থাকবে; কিন্তু তার জন্য সরকারকেও দোষ দিতে পারবে না।
এ পরিস্থিতি থেকে শিক্ষার্থীদের মুক্তি দেয়ার জন্য সরকাকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। দ্য চাইনিজ এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশ (সিইএবি) ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (রাইজ) মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। আমরা আশা করব, এসব উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এবং যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, সেগুলো যথাযথভাবে কাজ করবে। প্রযুক্তিনির্ভর কর্মক্ষেত্র তৈরি করা না গেলে দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের দেশে রাখা যাবে না। সেটা হবে দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে