ঢাকায় বেপরোয়া অপরাধী-ছিনতাইকারী চক্র
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে ছিনতাই, ডাকাতিসহ অপরাধমূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড। প্রতিদিনই ঘটছে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা।
পুলিশ জানিয়েছে, এসব ঘটনায় হাতেগোনা কয়েকজন ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ করছেন। তাই বেশিরভাগ ছিনতাইয়ের ঘটনা পুলিশের অপরাধ পরিসংখ্যানের মধ্যে নথিভুক্ত হচ্ছে না।
রাজধানী বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাত গভীর হতে হতে সড়কের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় অপরাধীদের হাতে। এমন ৩০ থেকে ৪০টি স্থানকে অপরাধের স্পট হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এই স্পটগুলোতে সন্ধ্যার পর থেকেই ভাসমান মাদকসেবীরা অবস্থান নিতে শুরু করে। তারাই মাদকের টাকা জোগাড় করতে পথচারীদের টাকা, ফোনসহ অন্যান্য মূল্যবান জিনিস ছিনতাই করছে। এদের পাশাপাশি মলম পার্টি ও প্রতারক চক্রের তৎপরতাও বেড়ে গেছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, রাত ১০টার পর রাজধানীর পাড়া-মহল্লার অলিগলি একটু নিরিবিলি হলেই পথচারীরা ছিনতাইকারীর কবলে পড়ছেন। দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ছিনিয়ে নিচ্ছেন মূল্যবান জিনিসপত্র। এসব ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। রাতে পুলিশের টহল কমে যাওয়ায় ছিনতাই বেড়েছে বলেও মনে করছেন তারা।
বিষয়টি নিয়ে পুলিশের মন্তব্য জানতে চাইলেও তারা কেউ সংবাদমাধ্যমে কথা বলতে চাননি।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ছিনতাইয়ে বাধা দেয়ার কারণে গত তিন মাসে ছিনতাইকারীদের হাতে চার জন খুন হয়েছেন।
সম্প্রতি মধ্যেরাতে উত্তরবাড্ডার এএমজেড হাসপাতালের সামনে টহলরত পুলিশের একটি টিমের কথা হয় ভিউজ বাংলাদেশের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিমের নেতৃত্বে থাকা এক এএসআই বলেন, সরকারের নির্দেশ পালন করতে গিয়ে গত জুলাই-আগস্টে পুলিশ যে হামলার শিকার হয়েছে, সেই ভীতি এখনও কাটেনি। আমাদের জনগণের বিপক্ষে দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে নতুন করে কোনো ঝামেলায় জড়াতে চাচ্ছি না।
তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টে আমাদের উপর যে হামলা হয়েছে তার বিচারও হয়নি। উল্টা তাদের হামলারকারীদের দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় কেউ নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে কাজ করবে না। তাই অপরাধ বাড়ছে।
এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতির ঘটনা বেড়েছে। মোহাম্মদপুর এবং উত্তরাসহ কয়েকটি এলাকায় বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ডাকাতির খবর পাওয়া গেছে।
বিষয়টি নিয়ে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী ইফতেখার হাসান বলেন, মোহাম্মদপুর রাজধানীর অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোর একটি। জনবল-সংকটের কারণে পুলিশ সেখানে ঠিকমতো টহল দিতে পারছে না।
জানা গেছে, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনায় আতংকিত হয়ে সন্ধ্যার পরই দোকানপাট বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর শাহজাদপুর এলাকায় নভেম্বরের মাঝামাঝি একটি দোকানে ডাকাতি হয়। বনশ্রীতে কিছুদিন আগে কামাল আহাম্মেদ নামের একজন স্বর্ণ ব্যবসীয়কে হুমকি দেয়া হয়। ভয়ে তিনি প্রায় দেড় মাস ধরে দোকান বন্ধ রেখেছেন।
এসবের পাশাপাশি খুনের ঘটনাও বেড়েছে। গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে ঢাকায় ৬৮ জন খুন হয়েছেন। এর মধ্যে কেবল মোহাম্মদপুরেই খুন হয়েছে ১০ জন।
বিষয়টি নিয়ে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পরে ঢাকা মহানগর পুলিশের মাঠপর্যায়ে ব্যাপক রদবদল হয়েছে। এখন ঢাকার থানাগুলোতে পুলিশের বড় অংশই ঢাকার বাইরে থেকে আসা। তারা রাজধানীর বিভিন্ন অলিগলি এখনো ঠিকমতো চেনেন না। তেমন সোর্সও (তথ্যদাতা) গড়ে ওঠেনি। তাই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হচ্ছে।
এ অবস্থায়, সন্ত্রাস, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক, কিশোর গ্যাং, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে চলমান বিশেষ অভিযান জোরদার করতে পুলিশের সব ইউনিটকে নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।
গণমাধ্যমে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে, অপরাধ প্রবণতা যেন না বাড়ে, সে ব্যাপারে তৎপরতা অব্যাহত আছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে